ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানকে সহায়তা বাতিল

প্রকাশিত: ০৪:০০, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাকিস্তানকে সহায়তা বাতিল

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন জানিয়েছে, জঙ্গী দমনে ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে ৩০ কোটি ডলার সহায়তা বাতিল করা হয়েছে। চলতি বছর শুরুর দিকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাকিস্তানকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন পাকিস্তান প্রতারণা করে মার্কিন অর্থ সহায়তা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিবিসি ও ডন। জঙ্গী দমনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে পাকিস্তানকে ৩০ কোটি ডলার সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে পেন্টাগন। তেহরিক ই ইনসাফ নেতা ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিল। ইমরান খান আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জোসেফ ডানফোর্ড কিছুদিনের মধ্যেই ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে পাকিস্তান যাচ্ছেন। পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল কোন ফকনার বলেছেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী এই অর্থ অন্য কোন জরুরী অগ্রাধিকারমূলক কাজে ব্যয় করতে ইচ্ছুক। পেন্টাগনের সিদ্ধান্তটি কংগ্রেসে অনুমোদিত হতে হবে। বিভিন্ন দেশকে দেয়া আর্থিক সহায়তা এখন যুক্তরাষ্ট্র কাটছাঁট করছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র পাকিস্তান। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হাক্কানি নেটওয়ার্ক, আফগান তালেবানসহ জঙ্গী নেটওয়ার্কগুলো পাকিস্তানী ভূখ- ব্যবহার করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। ফকনার বলেন, কোন বাছবিচার না করে জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোকে দমন করার জন্য আমরা পাকিস্তানকে অব্যাহতভাবে বলে গেছি। এ বিষয়ে ‘পাকিস্তান সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় ৩০ কোটি ডলার সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আরও দুয়েকটি দেশ এমন অভিযোগ করে থাকে। তারা মনে করে ইসলামাবাদ জঙ্গী নেটওয়ার্কগুলো নিজস্ব ভূমি ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব খর্ব করতে চরমপন্থী গ্রুপগুলোকে সহায়তা করে থাকে। তবে পাকিস্তান বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এর আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের ফিলিস্তিনী শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা জাতিসংঘ ত্রাণ ও কার্যক্রম সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) কাজে গুরুত্ব ভুলে অভিযোগ তুলে সংস্থাটির জন্য সব ধরনের অর্থ সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ফিলিস্তিনীরা ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে তাদের ওপর হামলা বলে অভিহিত করেছে। হাক্কানি নেটওয়ার্ক আফগানিস্তানকে টার্গেট করে বিভিন্ন সময় হামলা চালিয়ে থাকে। বছরের পর বছর ধরে তারা এসব করছে কিন্তু হামলা ঠেকাতে পাকিস্তান কখনও উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ রয়েছে। হাক্কানির সঙ্গে আফগান তালেবানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। আফগান তালেবানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাকিস্তানী তালেবান গ্রুপগুলো। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সংঘটিত বহু হামলার জন্য তাদের দায়ী করা হয়। হাক্কানি ও তালেবানের হামলায় আফগানিস্তানের মাটিতে এ পর্যন্ত অনেক মার্কিন সৈন্য ও কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন। আফগান তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসনের পর আইএসআই আফগান মুজাহিদদের অর্থ ও প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে। এদিকে তালেবান উৎখাতের লক্ষ্যে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক জোট যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহার করতে হয় মার্কিনীদের। জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সহযোগিতা গ্রহণ করে। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানের সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়ে ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের ওপর আসলে কতটা চাপ তৈরি করতে পারবে তা নিশ্চিত নয়। পাকিস্তান চীনের মতো অন্য কোন মিত্র রাষ্ট্রের দিকে বেশি করে ঝুঁকে পড়তে পারে। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ একটি মিত্র দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে চলেছে।
×