ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিমসটেক সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিমসটেক সম্মেলন

নেপালের কাঠমান্ডুতে সদ্যসমাপ্ত বিমসটেকের চতুর্থ সম্মেলনে বাংলাদেশের ভূমিকা উজ্জ্বল ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক এই জোটের একজন প্রধান নেতা হিসেবে সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ওপর প্রভাব রাখতে সমর্থ হয়েছেন। বিমসটেক সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে শেখ হাসিনা মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল সৃষ্টি, বিনিয়োগ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রচেষ্টা, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, সৌরবিদ্যুত গ্রিড, সমুদ্রপথে ক্রুজশিপ চালুসহ অর্থায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তোলার মাধ্যমে বিমসটেক ফোরামে সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সঙ্গে যে দুটি পৃথক বৈঠক করেন সেটিও দেশের জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। বিদ্যুত সঞ্চালন ও সৌরবিদ্যুত গ্রিডের মাধ্যমে জোটভুক্ত সাত দেশকে যুক্ত করার উদ্যোগের মতো আরও কয়েকটি ক্ষেত্র তিনি জোটের নেতাদের সামনে তুলে ধরেছেন, যেখানে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সবাই লাভবান হতে পারে। উল্লেখ্য, বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল এ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন বা বিমসটেকের সদর দফতর ঢাকায় অবস্থিত এবং ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা উদ্বোধন করেন। এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাঙ্কক ঘোষণার মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। এই জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার এবং মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ। বিমসটেক-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং বঙ্গোপসাগর উপকূলের দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরি করা। ব্যবসা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি, পর্যটন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, মৎস্য সম্পদ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, পোশাক ও চামড়া শিল্পসহ আরও অনেক ক্ষেত্র বিমসটেকের মূল উদ্দেশ্যভুক্ত। এবার সম্মেলনে বিমসটেক অঞ্চলে সৌরবিদ্যুত গ্রিড চালুর যে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তা যুগোপযোগী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। এখানকার কয়েকটি দেশে দীর্ঘসময় ধরে সূর্যালোক পাওয়া যায়। সম্মেলনে শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন যে, বিশ্ব জনসংখ্যার ২২ শতাংশর বসবাসকারী এই অঞ্চলে আন্তঃবাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। ভাগ্যোন্নয়নে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের নেতা একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ ও ভারত, দুই প্রতিবেশী দেশ। দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে উষ্ণ, গভীর ও কার্যকর। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা বর্তমানে দৃশ্যমান, তা অতীতে আর কখনও দেখা যায়নি। দুই দেশের এই সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় আবারও ব্যক্ত করেছেন দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী। বিমসটেকের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। এতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করা হয় এবং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আঞ্চলিক উন্নয়নে বিমসটেক খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ নেতৃত্বে সার্ক, বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) ও অন্যান্য আঞ্চলিক উদ্যোগ ক্রমেই গতিশীল হচ্ছে। ১৮ দফা কাঠমা-ু ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে বিমসটেক সম্মেলন। এতে বিমসটেকভুক্ত সাতটি দেশের মধ্যে গ্রিড কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা এবং ফৌজদারি ও আইনী বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্পর্কিত দুটি এমওইউ সই হয়েছে। আশা করা যায়, নিকট ভবিষ্যতে গোটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতার এক দিগন্ত উন্মোচিত হবে। অতীতের ধীরগতির দুর্নাম ঘুচিয়ে বিমসটেক হবে আরও গতিশীল ও কার্যকর।
×