ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সালমাদের হাতে সময় আর আড়াই মাস

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৬ আগস্ট ২০১৮

সালমাদের হাতে সময় আর আড়াই মাস

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ হাতে আর বেশিদিন নেই। আড়াই মাস বাকি। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের হাতে এ সময় আছে। এরপরই নারী টি২০ বিশ্বকাপ মিশনে নামতে হবে সালমা, রুমানা, জাহানারাদের। এবার টি২০ বিশ্বকাপ হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেটি শুরু হবে ৯ নবেম্বর। শেষ হবে ২৪ নবেম্বর। টি২০ বিশ্বকাপে এবার ভাল করার আশা করছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। দলটি যে টানা জয়ের সিঁড়িতে আছে। সাফল্যের মধ্যেই আছে। নারী এশিয়া কাপ জিতে নেয়ার পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে। এরপর টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তাই এবার অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে নারী ক্রিকেটারদের কাছ থেকে ভাল ফলই আশা করা হচ্ছে। টি২০ বিশ্বকাপে এবার ১০ দল খেলবে। পাঁচ দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলবে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশসহ ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী ক্রিকেট দল আছে। ‘বি’ গ্রুপে আছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড ছাড়া আগে থেকেই বাকিরা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার টিকেট পেয়েছিল। বাছাইপর্বে ফাইনালে খেলে বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। গ্রুপপর্বে প্রতিটি দল পরস্পরের বিপক্ষে খেলবে। এরপর পয়েন্ট তালিকায় দুই গ্রুপের সেরা চার দল উঠবে সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে জেতা দুটি দল খেলবে ফাইনালে। বিশ্বকাপের প্রথমদিনই স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে লড়াই করবে বাংলাদেশ। এরপর এক এক করে ১২ নবেম্বর ইংল্যান্ড, ১৪ নবেম্বর শ্রীলঙ্কা, ১৮ নবেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বোঝাই যাচ্ছে গ্রুপপর্বে সবচেয়ে দুর্বল দলটি বাংলাদেশ। বাছাইপর্ব খেলে যে তাদের বিশ্বকাপে খেলতে হচ্ছে। তাছাড়া যে দলগুলো আছে তারা অনেক শক্তিশালীও। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে হয়েছে রানার্সআপ। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ২০১০, ২০১২ ও ২০১৪ সালে টানা তিনবার শিরোপা জিতে অস্ট্রেলিয়া। গত আসরে ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিউজিল্যান্ড প্রথম দুইবার ও অস্ট্রেলিয়া শেষবার হয় রানার্সআপ। বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের গ্রুপে ইংল্যান্ডই সবচেয়ে শক্তিশালী দল। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলকে। তবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জেতার চেষ্টা করতে পারে সালমাবাহিনী। যদি ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে কোন দলকে হারানো যায়, তাহলে তো ইতিহাস হয়ে যাবে। বিশ্বকাপে এদের বিপক্ষে যে এখনও জয় নেই। ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সচরাচর খেলা হয় না বাংলাদেশের। এই দুটি দলের সঙ্গে বিশ্বকাপেই শুধু খেলার সুযোগ মিলে। ২০১৪ ও ২০১৬ বিশ্বকাপে দুই দলের কাছেই হারে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার অনেক সুযোগ মিলে। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম লড়াইয়েই জিতে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আরও ৮টি ম্যাচ খেলে শুধু হারই হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই তুলনায় সাফল্য বেশি। চার ম্যাচের দুটিতে জয় হয়। দুটি ম্যাচে হারে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বেশি খেলা হয় কারণ নারী এশিয়া কাপ হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই জিতে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আবার ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপে একটি জয় রয়েছে। লঙ্কানদের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে হেরে যায়। এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ম্যাচ খেলে কোন জয় নেই। তবে ২০১৪ সালে প্রথমবার স্বাগতিক হয়ে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ার পর দুইবার বিশ্বকাপ খেলে গ্রুপপর্বেই দম ফুরানো বাংলাদেশ দলকে নিয়ে এবার অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। শক্তিশালী সব প্রতিপক্ষের বিপক্ষে জিতে সেমিফাইনালে খেলবে দল- এমন আশা করা হচ্ছে না। তবে দুইবার বিশ্বকাপ খেলে প্রথমবার (২০১৪ সালে) যে এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, এবার জয়ের সংখ্যা বাড়বে; সেই প্রত্যাশা সবারই আছে। এ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে কঠোর অনুশীলন করেছেন নারী ক্রিকেটাররা। ঈদের আগে চলেছে ফিটনেস ট্রেনিং। এবার হবে স্কিল ট্রেনিং। ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন হবে এবার। আট সপ্তাহের বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলছে অনুশীলন। ঈদের আগে অনুশীলনে নতুনত্বও ছিল। টেনিস বল দিয়ে ক্যাচ অনুশীলন করেছে মেয়েরা। এবার ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন হবে। নারী ক্রিকেট দলের কোচ এখন ভারতের অঞ্জু জেইন। এশিয়া কাপের আগে দলে যোগ দেন তিনি। তিনি যোগ দিতেই যেন অন্য এক বাংলাদেশকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ দলকে নিয়ে অনেক আশাবাদী। তবে সহকারী কোচ আরেক ভারতীয় সাবেক ক্রিকেটার দেবিকা পালশিখরকে যেন বরাবরই বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখায়। তিনি বলে দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ দল এখন প্রতিপক্ষ নিয়ে চিন্তা করে না।’ কোচের এ আত্মবিশ্বাসের সুরই সবার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। দলের ক্রিকেটাররাও এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই এগিয়ে চলেছেন। এখন থেকে মেয়েদের খেলার কি স্টাইল হবে তাও জানিয়ে দিয়েছেন পালশিখর, ‘আমাদের মূল পরিকল্পনা থাকে আমরা নিজেরা কিভাবে ভাল পারফর্ম করতে পারি। আমরা সেই ধারাটাই বজায় রাখতে চাই। আমাদের প্রতিপক্ষ কে? এসব নিয়ে আমরা চিন্তা করতে চাই না। ভবিষ্যতেও মেয়েরা এই পরিকল্পনাতেই খেলবে।’ এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে সাফল্য কিভাবে মিলল? সেই রহস্যও জানান পালশিখর, ‘আমরা জানতাম এই দলের ভাল করার সামর্থ্য আছে। দলের আত্মবিশ্বাসের কিছুটা অভাব ছিল। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সমস্যা ছিল। আমরা ব্যাটিং অর্ডারটা ঠিক করেছি। এখন সবাই জানে তাদের কোথায় খেলতে হবে, কী তাদের দায়িত্ব।’ এশিয়া কাপ ও বাছাইপর্বের মতো না হলেও আগের চেয়ে ভাল ফল এখন বিশ্বকাপে মিললেই হলো।
×