ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ আলোকিত করাই তার প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৫ আগস্ট ২০১৮

সমাজ আলোকিত করাই তার প্রত্যাশা

মোঃ আমিন উল্লাহ। বয়স (৬২)। সমাজের কুসংস্কার আর দারিদ্র্যের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই চলছে তার। পত্রিকার বান্ডেল হাতে করে পাঠক সমাজের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন প্রায় ৪ যুগ ধরে। অদম্য ইচ্ছা আর নিরলস চেষ্টায় এগিয়েছে অনেক দূর। তার একটা মাত্র প্রত্যাশা মানুষের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দিয়ে সমাজকে আলোকিত করা। এতে তিনি আনন্দ পান। অবহেলিত এই মানুষটি বেকার যুবদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এরই মধ্যে তার প্রচেষ্টায়ই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে অর্ধশতাধিক যুবকের। কাকডাকা ভোরে এসব যুবক ছুটে আসে তার কাছে। প্রতিদিন সকালে পত্রিকা হাতে নিয়ে কয়েকভাগে ভাগ হয়ে যায় যুবকরা। কেউ ছুটে চলেছেন তাড়াতাড়ি জাতীয় পত্রিকা আনতে। আবার কেউ বিভিন্ন এলাকায় পত্রিকা নিয়ে যেতে। পত্রিকা ভাঁজ করে মানুষ হাটবাজারে অফিস-আদালতে যাবার আগেই হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে দৈনিক জনকণ্ঠসহ জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পত্রিকা। ওসব বেকার যুবকের এটি প্রতিদিনের কাজ। যেসব যুবক ছিল বেকার- তারা এখন কর্মক্ষম। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশ-বিদেশের নানান খবর জানান দিতে এদের পথে পথে ছুটে চলা। উখিয়ার সংবাদ বিতানের একমাত্র এজেন্ট আমিন উল্লাহ রাস্তার ধারে ছাতা মাথায় বসে পত্রিকা বিক্রি করছেন। অনেক জনপ্রতিনিধিসহ অফিসারগণ পত্রিকা কিনে নেন তার কাছ থেকে। কিন্তু তার খবর কেউ রাখেন না। রাস্তার ধারে ভূমি অফিস সংলগ্ন দেয়াল ঘেঁষে বসে পত্রিকার একমাত্র এজেন্ট আমিন উল্লাহর দিন কাটছে অতি কষ্টে। পত্রিকা রাখার মতো কোন জায়গা আমিন উল্লাহর ভাগ্যে জুটেনি এ পর্যন্ত। অথচ সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা বেহাত হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। দখলে নিয়েছে অনেকে। সরকারী বা ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা মার্কেটের সামনে একটু জায়গা দিয়ে কেউ তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। সমাজকে আলোকিত করতে সংগ্রামী এই সংবাদসেবী সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত করতে সংগ্রামী এই আমিন উল্লাহ উখিয়া সদর রাজাপালং ঘিলাতলিপাড়ার বাসিন্দা সাংবাদিক কায়সার হামিদ মানিকের পিতা। আমিন উল্লাহ জনকণ্ঠকে জানালেন, বাবা মায়ের অভাবের সংসারে আমি ছিলাম বেকার। বেকারত্বের সংসারে ছিল অভাব-অনটন। এছাড়া প্রত্যন্ত গ্রামে তার আয়ের কোন মাধ্যম ছিল না। তাতে দমে যাইনি। সামাজিক নানান বাধা উপেক্ষা করে ১৯৭৩ সালে উখিয়ার প্রথম পত্রিকার এজেন্ট হিসেবে শুরু করি পত্রিকা বিক্রির কাজ। পত্রিকা বিক্রির আয়ের মাধ্যমে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। নবম শ্রেণী পাসের পর ১৯৮১ সালে তার বিয়ে হয়। তখন স্কুলজীবনের এক সঙ্গে পড়ালেখা করেন বর্তমান উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী। তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। আমিন উল্লাহর ৬ ছেলে ১ মেয়ে। ৩ ছেলে বাবার কাজে সহযোগী হয়েছে। অন্য তিন ছেলে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আছে। এই অবস্থায় তাকে পত্রিকার বিক্রির স্থান থেকে উচ্ছেদ করা হলে সন্তান সন্তুতি ও পরিবার নিয়ে অর্ধাহারে থাকতে হবে বলে জানান তিনি। তিনি তার প্রতি সদয় হয়ে পত্রিকা বিক্রি করে দুমুঠো অন্ন যোগাতে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন। -এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে
×