ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়ে আসিয়ানের ১৩২ এমপির যৌথ বিবৃতি

রোহিঙ্গা হত্যার বিচার দাবি

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২৫ আগস্ট ২০১৮

রোহিঙ্গা হত্যার বিচার দাবি

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ দেশের ১৩২ জন আইনপ্রণেতা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়াতে হবে। খবর ওয়েবসাইট। বিবৃতিদাতা আইনপ্রণেতারা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, সিঙ্গাপুর ও পূর্ব তিমুরের পার্লামেন্ট সদস্য। তাদের মধ্যে ২২ জন আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (এপিএইচআর) সদস্য। রোহিঙ্গা সঙ্কটের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগের দিন শুক্রবার এপিএইচআরের ওয়েবসাইটে ওই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, মিয়ানমার রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর না করায় রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করার এখতিয়ার হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) নেই। এ অবস্থায় কেবল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদই পারে আইসিসির মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরুর ব্যবস্থা করতে। এপিএইচআরের চেয়ারপার্সন মালয়েশিয়ার এমপি চার্লস সান্তিয়াগো বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করার পর এক বছর পেরিয়ে গেল। ওই ঘটনায় দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার কোন লক্ষণ আমরা এ পর্যন্ত দেখিনি। ‘মিয়ানমার যেহেতু নিজেরা বিষয়টির তদন্ত করতে অনিচ্ছুক এবং অপারগ, সেহেতু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই এখন জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসতে হবে।’ চার্লস সান্তিয়াগো বলেন, ‘এ অঞ্চলের আরও ১৩১ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানাই, মিয়ানমারের বিষয়টি যত দ্রুত সম্ভব আইসিসিতে পাঠান। ‘মিয়ানমারে যারাই ওই ভয়ঙ্কর অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকুক না কেন, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তাদের ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতে আবারও একই ধরনের বর্বরতা ঘটানোর সুযোগ আমরা দিতে পারি না।’ বিবৃতিদাতা এমপিরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানকেও এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। আসিয়ানের সদস্য দেশ ইন্দোনেশিয়া আগামী বছর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যোগ দিচ্ছে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে।ইন্দোনেশিয়া এবং আসিয়ান যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে- সে আহ্বানও জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংগি লি যাতে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করার সুযোগ পান, সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চেয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই এমপিরা। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই দমন-পীড়নের মুখে গতবছরের ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ উঠে এসেছে তাদের কথায়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের ওই লড়াই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে, কোন জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে নয়। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য না হওয়ায় সেখানে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার সরাসরি কোন এখতিয়ার এ আদালতের নেই। কিন্তু লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করে যেভাবে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে, তার বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কিনা, তা জানতে রুল চেয়ে হেগের ওই আদালতের কৌঁসুলি ফাতোও বেনসুদা গত এপ্রিলে একটি আবেদন করেন। রোহিঙ্গাদের এভাবে বিতাড়নের বিষয়টি যেহেতু আন্তঃসীমান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য, সেহেতু আইসিসি বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার রাখে বলে রুল পাওয়া গেলে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করার পথ তৈরি হবে বলে আশা করছেন ফাতোও বেনসুদার। তার আবেদনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মতামত জানতে চেয়ে গত মে মাসে চিঠি দিয়েছিল হেগের আদালত। বাংলাদেশের মতামত পাওয়ার পর মিয়ানমারের বক্তব্য জানতে চেয়ে ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে এর উত্তর দিতে বলা হয়। ওই সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোন উত্তর না দিয়ে আগস্টের শুরুতে মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির দফতর থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদার আবেদনকে ‘সারবত্তাহীন’ আখ্যায়িত করে সেখানে বলা হয়, আইসিসির উচিত ওই আবেদন খারিজ করে দেয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১৩২ এমপির বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারে সুবিচারের অভাব কেবল রোহিঙ্গাদের নয়, কাচিন ও শান প্রদেশে অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপরও প্রভাব ফেলছে, যেখানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের কারণে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এপিএইচআরের পর্ষদ সদস্য ইন্দোনেশিয়ার এমপি ইভা কুসুমা সুন্দরী বলেন, ‘মিয়ানমারের ভেতরে এর বিচার হবে সেই আশায় বসে থাকার সময় পেরিয়ে গেছে। সত্যিকারের সুবিচার প্রতিষ্ঠা করার ম্যানডেট তাদের আর নেই। আসিয়ানকে এখন তাদের হস্তক্ষেপ না করার নীতি থেকে অবশ্যই সরে আসতে হবে। এ সঙ্কট এখন মানবতার সঙ্কট। জোটের সদস্য একটি দেশে নির্বিচারে এ ধরনের অমানবিক কর্মকাণ্ড আমরা চলতে দিতে পারি না।’
×