ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ ক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ॥ মাহাথির

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতি চাই

প্রকাশিত: ০৫:০৯, ১৮ আগস্ট ২০১৮

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতি চাই

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করাই তার চীন সফরের লক্ষ্য। আগের ২২ বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বকালে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধন ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন তিনি। মাহাথির বলেন যে, মালয়েশিয়ার জন্য আমরা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখতে চীনের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। চীন এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে কারণ এটি একটি শক্তিশালী দেশ। খবর সিনহুয়ার। শুক্রবার চীন সফর শুরু করেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। এই সফরকে সামনে রেখে সিনহুয়াকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি চান চীনের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক আরও জোরদার হোক। সফরের মূল্য লক্ষ্যই হচ্ছে সম্পর্ক জোরদার করা। অবশ্যই আমরা চীনের কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সম্পর্কে জানব, যা মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে সম্পৃক্ত করতে চীন হাতে নিয়েছে। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বকালে মাহাথির মোহাম্মদ বেশ কয়েকবার চীন সফর করেছেন। মে মাসে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই তার প্রথম চীন সফর। মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে মাহাথিরবিরোধীজোট পাকাতান হারপানের হয়ে আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং জয়লাভ করেন। ৯৩ বছর বয়সে আবার প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২২ বছরের ক্ষমতাসীনকালে আমি চেষ্টা করেছি চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার। নতুন সরকার চায় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করতে। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য আমরা চীনের সমর্থন চাই। চীন সম্পর্কে তার ধারণা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন দুই দেশ নিজেদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে যেসব মতভিন্নতা রয়েছে তা পারস্পারিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সমাধান করতে সক্ষম হবে। তার সরকার বিদেশী বিনিয়োগকে স্বাগত জানাবে। প্রাথমিকভাবে সেসব দেশকে যারা প্রযুক্তিতে উন্নত। যাদের উৎপাদিত দেশীয় পণ্য খুব ভাল ও তাদের পরিকল্পনা রয়েছে সেই পণ্যগুলো রফতানি করার। মালয়েশিয়ার বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য নতুন প্রযুক্তি ও উৎপাদন এলাকায় বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। চীনের ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা ও কিছুু চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি মালয়েশিয়ায় ব্যবসা করছে। তারা সেখানে মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থা ও ই-ওয়ালেট সেবা সম্পর্কে জানে। গত কয়েক দশকে চীনের উন্নয়নকে অবিস্মরণীয় হিসেবে বর্ণনা করে মাহাথির বলেন, চীন পুরোবিশ্বের জন্য উৎপাদনের কেন্দ্র হিসেবে বিকশিত হয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন ও তা বিকশিত করতে সক্ষম হয়েছে। যা বিশ্বের অন্যান্য অংশের কাছে প্রযুক্তির সমকক্ষ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এমনকি তারা এতদূর পর্যন্ত প্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে যে তারা মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছে। এটি একটি অসাধারণ কৃতিত্ব। কেননা খুব অল্প সময়ের মধ্যে তা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে চীনের উন্নয়নের ফলে মালয়েশিয়া উপকৃত হয়েছে। চীনের উন্নয়নকে আমরা সাধুবাদ দেই কারণ চীন যথেষ্ট ধনী হয়ে গেছে। মালয়েশিয়া বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার দেয়। আমরা চাই আমাদের অংশীদাররা ধনী হোক। চীনা পণ্য উৎপাদনের জন্য বাইরের দেশ থেকে সরবরাহ প্রয়োজন। মালয়েশিয়া চীনের নতুন ধনী লোকদের প্রয়োজন মেটাতে পারে। ২০০৯ সাল থেকে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে চীন। গত দুই বছরে দেশটি সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় উৎসে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে মাহাথির মোহাম্মদ চীন প্রস্তাবিত বেল্ট এ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সমর্থনে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। তিনি প্রাচীন সিল্ক রোডে চীন ও ইউরোপের মধ্যে একটি বিশেষ রেলপথ নির্মাণের পরামর্শও দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দ্য সিল্ক রোড ইকোনোমিক বেল্ট এ্যান্ড দ্য টুয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি মেরিটাইম সিল্ক রোড প্রস্তাব করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল প্রাচীন সিল্ক রোড রুটের সংযোগ ঘটিয়ে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ ও আফ্রিকার বাণিজ্য ও অবকাঠামোগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। মাহাথির বলেন, চীনের প্রয়োজন বিশ্বের বাজার। চীনের এ জন্য প্রয়োজন বিশ্বের বিভিন্ন অংশ থেকে পণ্য আমদানি করার। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী অবশ্য দু দেশের জনগণের সঙ্গে জনগণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি বিপুল সংখ্যক চীনা পর্যটকরা মালয়েশিয়ায় যাবেন। চীন ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। মাহাথির চীনা অভিযাত্রী ঝেং হিয়ের (১৩৭১-১৪৩৩) কথা স্মরণ করেন। তিনি মিং রাজত্বকালে মালয়েশিয়া আবিষ্কার করেন। ঝেং ও তার বিশাল নৌবহার বিজয় অর্জনের পরিবর্তে বরং কূটনৈতিক এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য মালয়েশিয়ায় পৌঁছান। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও জনগণের কল্যাণে এগিয়ে আসার চাবিকাঠি ছিল এটি।
×