ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুইংয়েই ভরসা খুঁজছেন পেসার রাব্বি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১২ আগস্ট ২০১৮

 সুইংয়েই ভরসা খুঁজছেন পেসার রাব্বি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে কুপোকাত হয়েছে বাংলাদেশ। পার্থক্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসাররাই গড়ে দিয়েছেন। আর তাই টেস্টে পেসার খোঁজার কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস। টেস্টের জন্য লম্বা গরানার পেসার খোঁজার দিকেই মনোযোগী কোচ। তবে পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি একটু অন্যভাবেই বিষয়টি দেখছেন। তিনি মনে করছেন সবই ঠিক আছে। শুধু সুইংটা করাতে পারলেই হলো। সুইংয়েই ভরসা খুঁজছেন রাব্বি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে বাংলাদেশে ফিরে কোচ বলেছেন, ‘এখন টেস্ট ম্যাচের জন্য কিছু দ্রুতগতির ও লম্বা পেসার খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। যারা উইকেটে আঘাত করতে পারে। টেস্টে উইন্ডিজের বোলাররা যে কাজটা করেছে।’ রাব্বি বলছেন, ‘আমরা গতির দিকে নজর না দিয়ে যদি সুইংয়ে নজর দেই তাহলে উন্নতি করতে পারব।’ সঙ্গে বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে স্কিল ডেভলপ করা। আমাদের আরও স্কিল ডেভলপ করতে হবে। অবস্থা বুঝে আরও ভাল খেলতে হবে। আমার মনে হয় আমরা যেই উচ্চতার বোলার, সেই উচ্চতায়ও সম্ভব। বাংলাদেশের মানুষদের যে জেনিটিক্যাল অবস্থা, আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মতো উচ্চতা পাব না। যদি এমন বোলার খুঁজতে বলা হয় তাহলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে বোলার আনতে হবে। আমাদের যে উচ্চতা আছে এই দিয়েই আমাদের ভাল করতে হবে। আমরা আশাকরি এই উচ্চতা দিয়েই ভাল বোলিং করতে পারব এবং ম্যাচ জেতাতে পারব।’ এখন পর্যন্ত রঙিন পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেননি রাব্বি। ওয়ানডে ও টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি। তবে ৭টি টেস্ট খেলেছেন। বল হাতে ৮ উইকেটও নিয়েছেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেন রাব্বি। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও দুটি টেস্ট খেলেছেন। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১টি উইকেট নিতে সক্ষম হন। রাব্বির বেহাল দশাই হয়। রাব্বি মনে করছেন সফল হতে হলে আরও পরিশ্রম করতে হবে, ‘আমার মনে হয় আরও বেশি পরিশ্রম করতে হবে। আমাদের আরও বেশি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলতে হবে। আমরা জাতীয় লীগের খেলাগুলো বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে খেলি, এখানে উইকেট ভিন্ন থাকে, যা আমাদের অনেক সাহায্য করছে। আমরা যে গতিতে বল করি, এই গতিতে যদি আমরা ভাল সুইং করাতে পারি তাহলে আমরা ভাল করতে পারব। আপনি দেখবেন ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার ও ভারতের বোলাররা ভাল সুইং করাতে পারে। আমরা গতির দিকে নজর না দিয়ে যদি সুইংয়ে নজর দেই তাহলে উন্নতি করতে পারব। আমাদের গতি ১৩০-৩৫-এর মধ্যে, এর সঙ্গে সুইং যোগ করলেই ভাল করা সম্ভব।’ মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দেখে শেখা উচিত, সেটিও মনে করছেন রাব্বি, ‘নির্ভরতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা পেসার আছি তাদের ওপর আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে। ক্রিকেট বোর্ড তো আমাদের অভিভাবক। আমাদের সেই অনুর্ধ-১৯ থেকেই দেখে আসছে। আমাদের পেছনে বোর্ডের এত ইনভেস্টমেন্ট, আমাদেরও ভাল কিছু দেখানো উচিত। আমরা এ দল, হাই পারফর্মেন্স, জাতীয় দলের হয়ে খেলছি, সফর করছি। আমাদেরও নিজেদের দিক থেকে কিছু দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। আর নিজের জন্যও কিছু করা উচিত, যখন খেলা শেষ করব তখন তো বলতে পারব যে আমি কিছু একটা করেছি। আমার মনে হয় কঠোর পরিশ্রমটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মাশরাফি ভাই আজ খুবই ভাল করছে, তাকে দেখে আমাদের শেখা উচিত। বুঝা উচিত, আমরা চাইলেই পারি। কারণ, আমাদের দেশের একজন যদি করে দেখাতে পারে তাহলে আমরা বাকিরা কেন পারব না।’ কোচ যে টেস্ট পেসার নিয়ে কথা বলেছেন, রাব্বি যেন একমত হতে পারেননি। যুক্তিও দেখিয়েছেন রাব্বি, ‘আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিয়ে চিন্তা না করে আমাদের শক্তি নিয়ে চিন্তা করা উচিত। আপনি দেখবেন ওয়ানডে, টি২০তে ওদের লম্বা বোলারদের কিন্তু পাত্তা দেইনি। আমরা ওয়ানডে, টি২০ সিরিজ জিতেছি। তখন কেউ বলেনি যে আমাদের বোলার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা খুব লম্বা বা ওরা অনেক ভাল। তখন কিন্তু কোচও এই কথা বলেনি। আমাদের মাশরাফি ভাই, রুবেলরাই কিন্তু সেখানে ভাল করছে। আমাদেরও ভাল করা সম্ভব, শুধু আমাদের আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।’ ঘরোয়া লীগগুলোতেও পেসাররা বেশি বল করার সুযোগ পায় না। তাতে পেসাররা পিছিয়ে পড়ছে বলেও মনে করছেন রাব্বি, ‘আমরা জাতীয় লীগ, বিসিএলে খেলার সময় খুব বেশি বল করার সুযোগ পাই না। দেখা যায় যে নতুন বলে পেসাররা বল করার পর স্পিনাররা বলে আসে। দিনশেষে দেখা যায় একজন পেসার খুব গেলে ১২-১৩ ওভার বল করে আর সারাদিন ফিল্ডিং করে, আর স্পিনাররা দেখা যায় বল করছে ৩৫-৩৬ ওভার। এমন করে হিসেব করলে দেখা যায় তিনজন স্পিনার মিলে ৯০ ওভারের মধ্যে ৭০ ওভার বল করে, আর দুইজন পেসার মিলে বল করে ২০ ওভার। আমাদের এমন উইকেট ও আবহাওয়াতেই আমরা এত কম বল করি। এতে আসলে আমার শেখার জায়গাটা কমে যায়। তবে গত দুই বছর ধরে উইকেটে অনেক তফাৎ দেখা গেছে। প্রিমিয়ার লীগ, এনসিএলে (জাতীয় লীগ) আমরা ভাল ভাল উইকেট পাই, তখন কিন্তু আমরা বোলিং করার সুযোগ পাই। শীতের সময় জাতীয় লীগ বা বিসিএল খেলা হলে তখন পেসাররা অনেক বল করে। এছাড়া স্পিনাররাই বেশিরভাগ সময় বল করে থাকে। এজন্যই আগে থেকে আমাদের উন্নতিটা কম হয়ে আসছে। এখন আমরা ভাল উইকেট পাচ্ছি, আশাকরি আগামী কয়েক বছরে দেখবেন ভাল কয়েকজন বোলার পাবে।’ সামনে পেসারদের অনেক উন্নতি হবে। তাও ভাবছেন রাব্বি, ‘আমাদের সুযোগটা কম ছিল। এখন কিছুটা ঠিক হয়ে আসছে। শেষ কয়েক বছর ধরে আমরা ভাল উইকেট পাচ্ছি। খুলনায় ভাল উইকেট পাই, সিলেট-কক্সবাজার তো আগে ছিল না। এখন আস্তে আস্তে মাঠ বাড়ছে। এখন আমরা অনেকক্ষণ বোলিং করতে পারি, যা আগে হতো না। ওই জন্যই আমরা অনেক পিছিয়ে ছিলাম। তবে এখন অনেক উন্নতি হবে আশাকরি।’
×