ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ ধরতে ঠেলাজাল

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ১১ আগস্ট ২০১৮

 মাছ ধরতে ঠেলাজাল

শিশু-কিশোররা মাছ খুঁজে ফেরে জলাশয়ে। কখনও নদী তীরের যে জমিতে পানি জমে থাকে সেখানে ঠেলা জাল নিয়ে মাছ খোঁজে। ঠেলাজালে শিশু কিশোররা মজা পায় মাছ ধরে। এই সময়টা বর্ষা মৌসুম একেবারে শেষের প্রান্ত। বর্ষায় মাছ ধরার নেশা কাটতে আরও কিছুটা সময় নেবে। শরতের বৃষ্টিতেও খুঁজবে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই গ্রামীণ জীবনে পড়ে মাছ ধরার ধূম। বয়স কোন ফ্যাক্টর নয়। ছেলে বুড়ো সকলের মধ্যে মাছ ধরার নেশা। কেউ মাছ ধরে বড় জাল দিয়ে। কেউ মাছ শিকারে ব্যবহার করে গ্রামীণ নানা উপকরণ। পলই, ঠেলা জাল, দাড়কে, ছোট জাল নানা কিছু। বড় জাল বানানোর সুতার ধরন আলাদা। কোন খুঁটি বা গাছের ডালের সঙ্গে সুতা এটে উঠানে বসে জাল বোনা। জাল বুনতে ব্যবহার হয় টাকু। নিচে এক ধরনের লোহার কাঠি এঁটে দেয়া হয়। গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘ভর’। এই ভর জালকে ডুবিয়ে রাখে। মাছ এসে জালের ভিতরে ঘোরাঘুরির পর তোলার সময় বন্দী হয়ে পড়ে। এভাবে বানানো হয় তউরা জাল। একই ধরনের সুতা দিয়ে বানানো হয় ঠেলা জাল। হোঁচার ফ্রেমের মতো ত্রিকোণের ভিতরে জাল আটকানো থাকে। অল্প জলাশয়ে ঠেলে মাছ ধরা হয়। কোন এলাকায় এর নাম জাকই। মাছ ধরার আরেক উপকরণ দাড়কে। কোথাও এর নাম চার। বাঁশের চিকন কাঠি দিয়ে বাক্সের মতো এই দাড়কে ¯্রােতে বিশেষ কায়দায় রাখলে ছোট মাছ চলাচলের সময় আটকে যায়। আর বর্ষা শুরু হলে কেউ নৌকা করে নদীতে গিয়ে ফেলে খেয়া জাল। কেউ কাছের নদীতে বা কোন জলাশয়ে তউরা জাল ফেলে। পলই নামের অনেকটা গোলাকৃতির এক উপকরণ আছে। কাদা পানির মধ্যে আটকে ওপরের খোলা মুখে হাত ঢুকিয়ে কাঁদা ঘেটে মাছ তুলে আনা হয়। মাছ ধরার জনপ্রিয় উপকরণ বড়শী। ছেলে বেলায় ছিপ ফেলে অর্থাৎ বড়শী দিয়ে মাছ ধরেনি এমন লোক কমই আছে। বর্তমানে জাল বাঁশ ড্রাম ইট দিয়ে নদীর মধ্যে খাঁচা বানিয়ে মাছ চাষ শুরু হয়েছে। দেখে মনে হবে নদীর ভিতরে মশারি টাঙানো। এই ধরনের প্রযুক্তি প্রথম শুরু হয় মাছের এলাকা চাঁদপুরে। বর্তমানে অনেক এলাকায় এভাবে নদীতে মাছ চাষ হচ্ছে। মাছ নিয়ে মজার অনেক কথা আছে। যেমন- সন্ধ্যায় কেউ ঘুমে ঢুলে পড়লে বলা হয় ট্যাংড়া মারছে। হলদে কালোয় ডোরাকাটা গচি মাছ দেখে বলা হয় বৌ-মাছ। মাছের অনেক প্রজাতি দিনে দিনে হারিয়েও যাচ্ছে। বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে পড়েছে : চিতল কুকশি খোলসা, কালাবাটা, ভ্যাদা, কাল বাউশ, গুইঞ্জা আইড়, মধু পাবদা, এক ঠোটা শাল বাইম, তারা বাইম, চান্দা কুটিয়া পিয়ালী কাজলী ইত্যাদি। এই বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক রাশেদুল হক বললেন মিঠা পানির বিপন্নপ্রায় মাছগুলো ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অনেক মাছ ইতোমধ্যে ফিরেও এসেছে। মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায় পুকুর জলাশয় থেকে মাছ মেলে ৫৫ শতাংশ। নদী খাল বিল উন্মুক্ত জলাশয় থেকে মেলে ২৮ শতাংশ। বর্ষা মৌসুমে মাছ মিলছে বেশি। জেলে সম্প্রদায় ছাড়াও শৌখিন মাছ শিকারিরা বর্ষায় মাছ ধরতে নামে। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×