ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বরাদ্দে অনিয়মের সুয়োমটো রুলের আজ শুনানি

রাস্তা হয়েছিল প্লট, এখন পাওয়া যাচ্ছে না তদন্ত প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৯ জুলাই ২০১৮

রাস্তা হয়েছিল প্লট, এখন পাওয়া যাচ্ছে না তদন্ত প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বিএনপি সরকারের সময়ে প্লট বরাদ্দের অনিয়মে তিন সচিবের যে প্রতিবেদনটি দিয়েছিল সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেছেন, মামলাটি শুনানির জন্য আজ রবিবার কজলিস্টে আছে। তিন সচিব যে প্রতিবেদনটি দিয়েছিল সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। শুনানির জন্য প্রতিবেদনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদনটির জন্য আরও খুঁজতে হবে। একটি সূত্র জানায় অদৃশ্য কারণে তদন্ত প্রতিবেদনটি পাওয়া যাচ্ছে না। সুয়োমটোর রুলের শুনানির জন্য আজ রবিবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের বেঞ্চে দিন নির্ধারণ করা আছে। কজলিস্টে মামলাটি ৪৯ নম্বর আইটেমে রাখা হয়েছে। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ী ও তেজগাঁও শিল্প এলাকায় বিএনপি সরকারের সময় যে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তার অনিয়ম হয়েছে কি না সে বিষয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সুয়োমটো রুল প্রদান করে। রুলে বলা হয়, কেন এই সব জমির এলটমেন্ট বাতিল করা হবে না। একই সঙ্গে তৎকালীন ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদের (বর্তমান দুদকের চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে তিন সচিবকে ব্যাপারটি তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। কমিটিতে অন্য দুই সচিব ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক যুগ্ম-সচিব (পরবর্তীতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজিম উদ্দিন আহম্মেদ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব (বর্তমানে আইন সচিব) আবু সালেহ শেখ মোঃ জহিরুল হক। সূত্র মতে উক্ত সবিচগণ একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করেন যাতে উক্ত প্লট বরাদ্দকে সম্পূর্ণ বেআইনী এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্ত অদৃশ্য কারণে সেই রিপোর্টটি পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। এদিকে দীর্ঘ ৬ বছর পর গত ২৬ জুলাই শুনানির জন্য বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের বেঞ্চে দিন নির্ধারণ করা হলেও সেদিন একক বেঞ্চ থাকায় বিষয়টি শুনানি হয়নি। মামলার বিবরণে জানা যায়, বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, জিয়াউল হক জিয়া, শফিক রেহমানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দের অনিয়মের কারণে বিচারপতি এএইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে দ্বৈত বেঞ্চ ২০১২ সালে সুয়োমটো রুল জারি করেন। সাংবাদিক আবু সাঈদ খান সমকাল পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন লিখেন। ‘একটি সড়ক বেদখল হয়ে যাওয়ার কাহিনী। সমকাল পত্রিকায় ২০১০ সালের ২৪ মার্চ সড়ক প্রকল্প রাতারাতি হয়ে গেল শিল্প প্লট’। শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। আবু সাঈদ খান তার প্রতিবেদনে লিখেন, বাংলাদেশে অসম্ভব বলে কিছু নেই। সব কিছুই এখানে সম্ভব। দিন দিন সম্ভবের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। একদা জোতদারের চর দখলের মর্মস্পর্শী বর্ণনা আমরা নাটক উপন্যাসে পড়েছি। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় উপেনের দুবিঘা জমি কেড়ে নেয়ার ঘটনায় চোখের জল ফেলেছি। আজ হাজার হাজার উপেনের চোখের জল কেড়ে নেয়ার কথা শুনছি। কিন্তু কাঁদতে যেন ভুলে গেছি। ২০০৬ সালের জুন-জুলাইয়ের দিকে রাস্তার জন্য নির্ধারিত জায়গাকে প্লট বানানো হয়। এবং প্লটগুলো দেয়া হয় তখনকার প্রভাবশালী মন্ত্রীদেরকে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিকাঠা জমির তখনকার দাম ছিল কম বেশি ১ কোটি টাকা। বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রতি কাঠা দেড় লাখ টাকা দরে। উক্ত খবরগুলো পাওয়ার পর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের একটি স্বপ্রণোদিত রুল ইস্যু করেন। এবং এই মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করেন যে, কেন এই সব জমির এলটমেন্ট বাতিল করা হবে না। একই সঙ্গে তৎকালীন ইআরডি সচিব ইকবাল মাহমুদের (বর্তমান দুদক চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে তিন সচিবকে ব্যাপারটি তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন। স্বপ্রোণোদিত রুল ইস্যু করার কিছু দিন পর বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক পদোন্নতি পেয়ে আপীল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন। যার কারণে তিনি আর মামলাটির শুনানি করতে পারেননি। ইতোমধ্যে বিবাদী পক্ষ সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে মেনশন করে মামলাটি শুনানির জন্য আবেদন করে। সে কারণে ২৬ জুলাই শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। সেদিন শুনানি না হলেও আজ রবিবার আবার শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১২ সালে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক শুনানির একপর্যায়ে বলেন, আমরা চিন্তা করতে পারি না, সরকারী জমি বিজ্ঞাপন ছাড়া কিভাবে দেয়া হয়! যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ না হওয়াটাই চুরি। যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া সেখানে যারা প্লট পেয়েছেন, তারা সবাই চোর। যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া যারা কেনে, তারা এবং যারা বিক্রি করে, তারাও চোর। কারণ এটা জনগণের সম্পত্তি। তাদের না জানিয়ে এটা দেয়া যায় না।’ পরে আদালত ওই এলাকার প্লট বরাদ্দের প্রক্রিয়ার কোন দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে কি না, তা তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন। এ ছাড়া যথাযথ প্রক্রিয়া ও বিজ্ঞাপন ছাড়া কাদের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সেই তালিকাও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছিল।
×