ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কসাইখানার বর্জ্যে নরসুন্দার পানি দূষিত

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৮ জুলাই ২০১৮

কসাইখানার বর্জ্যে নরসুন্দার পানি দূষিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ, ১৭ জুলাই ॥ দেড় শত বছরের পুরনো প্রথম শ্রেণীর ঐতিহ্যবাহী কিশোরগঞ্জ পৌরসভায় নেই কোন কসাইখানা। এতে করে শহরের যত্রতত্র স্থানে পশু জবাইয়ের কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের তিনটি প্রধান বাজার পুরানথানা, কাচারিবাজার ও বড়বাজারে প্রতিদিন গড়ে ৫০টির মতো জবাই পশুর উচ্ছিষ্ট (বর্জ্য) নরসুন্দা নদীতে ফেলে দেয়ায় নদীর পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া নদীর পাশে আরও অন্তত ১০টি বাজারে জবাইকৃত পশুর বর্জ্যও নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে নদী ও আশপাশে এলাকার পরিবেশ মারাত্মভাবে দূষিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একসময় শহরের পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত হারুয়ায় একটি কসাইখানা ছিল। সেটির কোন কার্যকারিতা না থাকায় বর্তমানে পৌরসভায় নেই কোন কসাইখানা। ফলে মাংস বিক্রেতারা যত্রতত্র রুগ্ন , শীর্ণ, বৃদ্ধ ও অসুস্থ গরু-বাছুর, ছাগল এবং খাসি জবাই করে শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে আসছে। মূলত শহরে নরসুন্দা নদীর পাড়ে কাচারিবাজার, পুরানথানা বাজার ও বড়বাজারে সিংহভাগ পশু জবাই করার পর জবাইকৃত পশুর উচ্ছিষ্ট নরসুন্দা নদীতে ফেলে দিয়ে নদীর পানিতে দূষিত করে ফেলা হচ্ছে। পাশাপাশি নরসুন্দা পাড় সংলগ্ন পার্ক ও গুরুদয়াল সরকারী কলেজের নরসুন্দার ভ্রাম্যমাণ, মুক্তমঞ্চ ও পুকুরসহ দৃষ্টি নন্দন নরসুন্দা নদীর শোভাবর্ধন পরিবেশে হাজার হাজার মানুষের প্রতিদিন বিকেলে এখানে বসে সময় কাটায়। শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ নদীর তীরে মিলনমেলায় মিলিত হয়ে বিনোদন খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু পশুর বর্জ্যে নরসুন্দার নদীর পানিতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ-প্রতিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। লোকজন দুর্গন্ধে নদী পাড়ে বসতে পারে না। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের যেন শেষ নেই। সম্প্রতি পৌরসভার সর্বোচ্চ কমিটি নগর সমন্বয় কমিটি (টিএলসিসি)’র এক সভায় পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজের সভাপতিত্বে উপস্থিত কমিটির সদস্যরা বিষয়টি তুলে ধরে কসাইখানা না থাকার কারণে নরসুন্দা নদীর পানি দূষিত হওয়াসহ শহরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষণ হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। এ সময় উপস্থিত সদস্যরা অবিলম্বে কসাইখানা নির্মাণ করে নরসুন্দা নদী ও পরিবেশকে বাঁচানোর জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্ততায় বলেন, গত ৫০ বছরে পৌরসভায় উন্নত কোন কসাইখানা নির্মাণ করা হয়নি। মূল শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে হারুয়ায় নামমাত্র একটি কসাইখানা আছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে সেখানে পশু জবাই করার কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে কসাইখানার ভূমি দখল করে কয়েকটি পরিবার সেখানে বসবাস করে আসছে। শহরের কাচারিবাজার ও বড়বাজারের কয়েকজন মাংস ব্যবসায়ী জানান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা পেলেও এখানে কোন আধুনিক জবাইখানা কিংবা মাংস বিক্রেতাদের জন্য বাজারে আলাদা কোন শেডের ব্যবস্থা নেই। ফলে শহরের তিনটি বাজারসহ নদী সংলগ্ন আরও ৮-১০টি বাজার ও স্থানে পশু জবাই করতে হয়। জবাইকৃত গরু প্রতি ৭০ টাকা এবং ছাগল প্রতি ৫০ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হলেও পৌরসভা দীর্ঘদিনেও কসাইখানা নির্মাণ করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে পশুর উচ্ছিষ্ট অংশ নদীতে ফেলা হয়। তারা আরও জানান, বাজারে যত্রতত্র পশু জবাইয়ের ফলে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। মানসম্পন্ন মাংস পাওয়া যায় না, দুর্গন্ধের কারণে বাজারে ঢোকাও যায় না। এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান জানান, কসাইখানা নির্মাণ একান্ত জরুরী। নদী ও পরিবেশকে বাঁচাতে হলে কাজটি দ্রুত করতে হবে। কারণ যত্রতত্র পশু জবাই হলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে পৌরসভাকে তা দেয়া হবে। কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, পৌরসভায় আর্থিক দৈন্যতা রয়েছে। কসাইখানা নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়েছে। যদি দ্রুত অর্থ পাওয়া না গেলে পৌর কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে কসাইখানার জন্য ভূমি নির্ধারণ করে নিজস্ব অর্থে জনস্বার্থ দ্রুত কসাইখানা নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×