ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

হংকংয়ে তিন বছরে মাত্র ৮শ’ গৃহকর্মী নিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৭ জুলাই ২০১৮

 হংকংয়ে তিন বছরে মাত্র ৮শ’ গৃহকর্মী নিয়োগ

ফিরোজ মান্না ॥ হংকংয়ের সঙ্গে এক লাখ নারী গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তি হলেও দেশটিতে গত তিন বছরে নিয়োগ পেয়েছেন মাত্র ৮ শ’ গৃহকর্মী। বাকি ৯৯ হাজার ২ শ’ কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে হংকং কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দফায় দফায় চিঠি লিখলেও কোন জবাব দেয়নি হংকং কর্তৃপক্ষ। যে ৮ শ’ কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন তাদের হংকংয়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগ দিয়েছে। তিন বছর আগে বিএমইটি ও হংকং কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়েছিল। ওই এমওইউর আওতায় হংকংয়ে কর্মী নিয়োগ এখনও চলমান রয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এক লাখ নারী গৃহকর্মী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে হংকং একটি এমওইউ স্বাক্ষর করেছিল। এমওইউ স্বাক্ষরের পর পরই কয়েক শ’ গৃহকর্মীকে নিজ খরচে ‘হাউস কিপার’ পদে নিয়োগ দেয়। তাদের মাসিক বেতন ধরা হয় ৪৯০ মার্কিন ডলার। কর্মীরা একদিন সাপ্তাহিক ছুটিও ভোগ করতে পারবেন। থাকবে চিকিৎসা বীমা। নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের দুই মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে যায়। এখানে কোন কর্মীকে টাকা ব্যয় করতে হয়নি। এক বছরের মধ্যে এক লাখ নারী কর্মী নেয়ার কথা ছিল। কর্মী নিয়োগের ধারাবাহিকতা হঠাৎ করেই হংকং কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। পরে দুই দেশের মধ্যে নানা দেন-দরবার হলেও বাজারটি চালু হয়নি। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি বলেছেন, শ্রমবাজার বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। হংকং নতুন বাজারের একটি। তারা প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ খরচে কর্মীদের নিয়োগ দিচ্ছে। ফলে কেউ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। দেশটিতে শ্রমের মূল্যও বেশি। হংকংয়ের মতো আরও কয়েকটি বাজার তৈরির চেষ্টা চলছে। জাপানে আমাদের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। জাপান ইতোমধ্যে বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। ইউরোপের বাজারেও আমাদের দক্ষ কর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী কর্মীদের নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান দুই মাসের ‘ওরিয়েন্টেশন কোর্স’ করিয়েছে। আর যারা একেবারে নতুন তাদের জন্য ৬ মাসের ট্রেনিং দেয়া হবে। তারা বিনা খরচে হংকংয়ে নিয়োগের সুযোগ পাবেন । বর্তমানে হংকংয়ে নিয়োগের বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ হচ্ছে না। এখানে কোন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারবে না। কারণ পুরো খরচ দিয়েই নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান নারী কর্মীদের হংকং নিচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগী কেউ নেই। দেশটিতে বাংলাদেশী নারী কর্মীরা সুনাম অর্জন করলেও নিয়োগ বন্ধ রেখেছে হংকং কর্তৃপক্ষ। হংকং প্রায় ২৬০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত। পৃথিবীর নানা জাতি, ভাষা ও বর্ণের মানুষের দেশ হংকং। বর্তমানে দেশটিতে কয়েক হাজার বাংলাদেশী বসবাস করেন। বর্তমানে পাহাড় আর সাগরঘেরা এই অঞ্চলটিতে বর্তমানে নারী গৃহকর্মী কাজ করছেন প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ফিলিপিন্সের এক লাখ ৯০ হাজার, ইন্দোনেশিয়ার এক লাখ ৬০ হাজার, থাইল্যান্ডের ৬ হাজার, বাংলাদেশের এক হাজার ৩ শ’। আগামী মাসেই বাংলাদেশের আরও প্রায় ৮ শ’ কর্মী হংকংয়ে নিয়োগ পাবে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, হংকংয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বাজারটির প্রতি নজর দেয়া হলে জনশক্তি রফতানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। কারণ হংকংয়ে গৃহস্থালি কাজে কর্মী সঙ্কট রয়েছে। এ সংঙ্কট কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক গৃহকর্মী পাঠানো সম্ভব। হংকংয়ে গৃহকর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া খুব একটা জটিল কিছু নয়। ফিলিপিন্সসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কর্মীরাই মূলত হংকংয়ের গৃহকর্মীর চাহিদা মিটিয়ে আসছে। কিন্ত গত কয়েক বছর ধরে ফিলিপিন্স থেকে গৃহকর্মী যাওয়া কমে গেছে। ফলে দেশটিতে গৃহকর্মী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই সুযোগে দেশটিতে বাংলাদেশী গৃহকর্মী নিয়োগ করা সহজ হবে। হংকংয়ে গৃহকর্মীরা একই মালিকের অধীনে টানা ৫ বছর কাজ করতে পারবেন। ফলে কর্মীরা ‘লং টাইম সার্ভিস বোনাস’ হিসেবে বেতনের অতিরিক্ত এককালীন ৫ লাখ টাকাও পাবেন। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ যুবশক্তি শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। যার অর্ধেক নারী। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশে পর্যাপ্ত চাকরি সৃষ্টি সম্ভব হয় না। তাই বৈদেশিক কর্মসংস্থানে যথাযথ নিয়োগের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হংকংয়ে বেশি হারে কর্মী পাঠানোর ব্যবস্থা হলে মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক কমবে। বেশি বেতনে ও অপেক্ষাকৃত উন্নত পরিবেশে নারী কর্মীরা কাজ করার সুযোগও পাবেন।
×