ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্ধারকৃত কিশোরদের সবাই শঙ্কামুক্ত

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১১ জুলাই ২০১৮

উদ্ধারকৃত কিশোরদের সবাই শঙ্কামুক্ত

থাইল্যান্ডে উত্তরাঞ্চলের একটি গুহা থেকে প্রথম দুই দফায় উদ্ধারকৃত ৮ কিশোর শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ আছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গুহাটি থেকে গত দু’দিনে উদ্ধারকৃত কিশোরদের এখন এক্স-রে ও রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে এদের মধ্যে দুই কিশোরের ফুসফুসে প্রদাহের চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিশোরদের প্রত্যেককে অন্তত টানা ৭ দিন হাসপাতালে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কিশোররা গত ২৩ জুন প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যার কবলে পড়ে গুহার ভেতরে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে একটি উঁচু পাথরে আশ্রয় নেয়। পরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ডুবুরি দল গত সপ্তাহে গ্রুপটিকে গুহার ভেতরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আবিষ্কার করেন। প্রথম ৪ জনের গ্রুপটিকে রবিবার ও দ্বিতীয় ৪ জনের গ্রুপটিকে সোমবার উদ্ধার করা হয়। খবর বিবিসির। উদ্ধারকৃত কিশোরদের কয়েকজনের শরীরের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। উদ্ধার করে এদের হাসপাতালে নেয়ার পর এদের একজনের হৃদস্পন্দন খুবই কম দেখা যায়। তবে এখন এরা শঙ্কামুক্ত। শারীরিক ও মানসিকভাবে যথেষ্ট ভাল আছে। জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব জেসাদা চুকাদামুরংসুক এক সংবাদ সম্মলনে বলেন, উদ্ধারকৃত ৮ কিশোরই শারীরিকভাবে ভাল আছে। প্রত্যেকের মানসিক স্বাস্থ্যও অনেক ভাল পর্যায়ে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধারকৃতদের প্রথমে তাৎক্ষণিক খাদ্য ও জেল দেয়া হলেও বর্তমানে হজমে সহজ এমন খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এদিকে অনেক বাবা-মা-ই বাইরে থেকে তাদের সন্তানদের হাসপাতালের কাঁচের গ্লাসের ভেতর দিয়ে দেখছেন। আটক কিশোর ফুটবল টিমের সদস্যদের বের করে আনতে ৯০ বিশেষজ্ঞ ডুবুরির একটি দল কাজ করছে, যাদের ৫০ বিদেশী এবং ৪০ থাই। গুহার অন্ধকার ও জলমগ্ন পথ ধরে তারাই কিশোর দলটিকে বের করে আনছে। গ্রুপটির বাকি সদস্য এবং তাদের কোচ গুহার মুখ থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ভেতরে আটকা পড়ে আছে। আর ওই পথটি অত্যন্ত বিপদসঙ্কুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে কোথাও হেঁটে, কোথাও পানির মধ্যে হেঁটে, কোথাও খাড়া ঢাল বেয়ে উঠে এবং কোথাও ডুব দিয়ে পার হতে হচ্ছে। যদিও পুরো পথের এমাথা থেকে ওমাথা একটি দড়ি বাঁধা হয়েছে। যেটা ধরে ডুবুরিরা কিশোরদের কাছে যাচ্ছে এবং তাদের নিয়ে ফিরে আসছে। কিশোরদের উদ্ধার করার জন্য একজন ডুবুরিকে প্রায় ১১ ঘণ্টার অত্যন্ত ক্লান্তিকর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। তাদের প্রথমে স্রোতের বিপরীতে ছয় ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের কাছে পৌঁছতে হচ্ছে এবং কিশোরদের নিয়ে স্রোতের অনুকূলে পাঁচ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে গুহা মুখে পৌঁছাচ্ছে। এরই মধ্যে এক কিশোরের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে এক ডুবুরি মারা গেছেন। কিশোররা যেখানে আটকা পড়ে আছে সেখান থেকে গুহা মুখে আসতে প্রথম ১কিলোমিটার পথ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে অন্তত দুটি স্থানে ঘোলা পানিতে পরিপূর্ণ পথ এতটাই সঙ্কীর্ণ যে ডুবুরিদের পিঠ থেকে অক্সিজেন ট্যাঙ্ক খুলে ওই এলাকা পার হতে হয়। কিশোরদের পুরো মুখ ঢাকা মাস্ক দেয়া হয়েছে; যাতে তারা পানির তলায় অনেকটা স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে। প্রত্যেক কিশোরের সঙ্গে দুজন করে ডুবুরি থাকছে। তারাই কিশোরদের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক বহন করছেন। একজনের কোমরের সঙ্গে দড়ি দিয়ে সঙ্গে থাকা কিশোরকে বেঁধে রাখা হয়। ৪ কিলোমিটারের পথের মাঝামাঝি ‘টি-জংশন’ নামের সেকশনটি পার হওয়া সবচেয়ে কঠিন। গুহার ওই অংশটুকু ডুবুরিদের নিজেদের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক পিঠ থেকে খুলে পার হতে হয়। ওই পথটুকু পার হওয়ার পর অন্য একদল ডুবুরির হাতে কিশোরকে তুলে দেয়া হয়। নতুন দলটি কিশোরকে নিয়ে সুড়ঙ্গ পথে হাঁটা শুরু করে, যেটিকে চেম্বার-থ্রি নাম দেয়া হয়েছে। ওই পথটুকু ডুব দিতে না হলেও পানিতে পূর্ণ। কোথাও কোথাও পানিতে ডুবুরিদের গলা পর্যন্ত ডুবে যায়। চেম্বার-থ্রির শেষ প্রান্তে ডুবুরিদের একটি ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। ওই ক্যাম্পে বিশ্রামের পর কিশোররা অপেক্ষাকৃত সহজ পথটুকু হেঁটে পার হয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসে। গুহা থেকে বের হওয়ার পরই তাদের স্ট্রেচারে করে হেলিকপ্টারে তোলা হয় এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন পর্যন্ত দুই দিনে ৮ কিশোরকে গুহা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
×