ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নলকূপ বরাদ্ধের নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

উখিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল যেন দুর্নীতির আখড়া

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১০ জুলাই ২০১৮

উখিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল যেন দুর্নীতির আখড়া

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কটে উখিয়া টেকনাফের অধিবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকার তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সেবায় বরাদ্দ করা গভীর নলকূপের সরকারী ফি মওকুফ করে দিয়েছে। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ গোপন রেখে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর উখিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী পাঁচ’শ গভীর নলকূপ বরাদ্দ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, গত বছরের ২৬ আগস্ট হতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে উখিয়া টেকনাফ এলাকায়। ওসব রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে স্থানীয় বাসিন্দারা। সরকার তাদের মধ্যে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে নগদ টাকা, চাল, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে যাদের ঘর ভাঙতে হয়েছে তাদের ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা ও নলকূপসহ বিভিন্ন সহায়তা বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোপূর্বে গভীর নলকূপ স্থাপনে গ্রাহকদের কাছ থেকে নামমাত্র একটি সহায়ক চাঁদা (ফি) নেয়ার বিধান থাকলেও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সেবা দিতে সরকার ওই টাকাও মওকুফ করে দিয়েছে। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর বরাবর পত্র ইস্যু করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর উখিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ গোপন রেখে উখিয়া টেকনাফে বরাদ্দকৃত ৫’শ গভীর নলকূপ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে সহায়ক চাঁদা (ফি) হিসেবে ২০-২৫ হাজার টাকা হারে আদায় শেষে আত্মসাত করেছে। মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ অমান্য করে সরকারী নীতি বহির্ভূত কাজ করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি। উপসহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইনের স্বাক্ষর ও সরকারী সীলযুক্ত ভুয়া বিল-ভাউচারের একাধিক কপি জনকণ্ঠের হাতে হস্তগত হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ পাস-১ অধিশাখা থেকে উপ সচিব মোঃ খাইরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ও গত ৩০ জানুয়ারি নির্দেশনাক্রমে ইস্যুকৃত পত্রে জানানো হয়েছে, মিয়ানমার হতে আগত বাংলাদেশে আশ্রিতদের জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য স্থাপিত ও স্থাপিতব্য নলকূপের সহায়ক চাঁদা মওকুফ করা হয়েছে। পত্রে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর হতে উখিয়া টেকনাফ উপজেলায় মিয়ানমার থেকে আগত আশ্রিতদের ক্যাম্পে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের লক্ষ্যে এবং আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরী পরিস্থিতিতে স্থাপিত ও স্থাপিতব্য গভীর-অগভীর নলকূপের সহায়ক চাঁদা আদায়ের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি না থাকায় আশ্রিতদের ক্যাম্পে ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপের সহায়ক চাঁদা মওকুফ করা হয়েছে। এতদ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের স্মারকের অনুকূলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রশিদুল হক সঙ্গে সঙ্গে পত্র ইস্যু করে চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করিয়েছেন। এদিকে মন্ত্রণালয়ের ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে উখিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোছাইন উখিয়ায় ৪৬৪টি এবং টেকনাফে ৩৬টি গভীর নলকূপ বিতরণ করে সহায়ক চাঁদা হিসেবে জনপ্রতি ২০থেকে পঁচিশ হাজার টাকা হারে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত টিম গঠন করে সরেজমিনে যাচাই করলে অভিযোগের সত্যতা মিলবে বলে জানিয়েছেন বহু গ্রাহক। সূত্রে জানা যায়, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এবং ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সেবায় এক হাজার নলকূপ স্থাপনে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ কোটি টাকারও বেশি। উখিয়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ে দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোছাইন সহায়ক চাঁদা মওকুফের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রেখে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক কোটি টাকা। সম্প্রতি ব্যাপারটি জানাজানি হওয়ার পর উখিয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। মওকুফ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জহির উদ্দিন দেওয়ান জনকণ্ঠকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে সহায়ক চাঁদা মওকুফ করার বিষয় সংবলিত পত্র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে পাঠানো হয়েছে। টাকা আদায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয় দাবি করেন উখিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী মুহাম্মদ ইকবাল হোছাইন।
×