ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুহায় আটকে থাকা কিশোরদের উদ্ধার অভিযান শুরু

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ৯ জুলাই ২০১৮

  গুহায় আটকে থাকা কিশোরদের উদ্ধার অভিযান শুরু

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় চিয়াং রাই প্রদেশের থাম লুয়াং গুহায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে রবিবার অভিযান শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এ উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন পাঁচ সদস্যের থাইল্যান্ডের এলিট নেভি সিল ও ১৩ বিদেশী ডুবুরি। এর আগে উদ্ধারকারী দল, ডুবুরি, চিকিৎসক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের রেখে বাকি সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। খবর বিবিসি ও এএফপির। উদ্ধার কার্যক্রমের প্রধান নরনগাসক ওসটানাকর্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, স্থানীয় সময় সকাল দশটায় উদ্ধারকারী দল গুহার ভেতরে প্রবেশ করেছে। অভিযানে চরম ঝুঁকি থাকার পরও যে কোন উপায়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে প্রস্তুত আটকে পড়া কিশোররা। কর্মকর্তারা বলছেন, শিশুদের সুস্থ এবং ভালভাবে উদ্ধার করার জন্য তারা চারদিনের একটি সুযোগ পাচ্ছেন। পানি, আবহাওয়া আর শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই এই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য শতাধিক চিমনি বসায় তারা। উদ্ধারকারী দলনেতা নারংসাক বলেন, কোন কোন চিমনি চারশ’ মিটার গভীরে পোঁতা হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের অবস্থান চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এর আগে সেখানে একটি টেলিফোন লাইন স্থাপন করার চেষ্টা করা হলেও তা ব্যর্থ হয়। গুহার মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে একটি ছোট্ট চেম্বারে ২ জুলাই তাদের পাওয়া যায়। এরপর থেকে আন্তর্জাতিক আর থাইল্যান্ডের ডুবুরিরা তাদের নিয়মিত খাবার, অক্সিজেন ও চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করে আসছে। গুহার ভেতরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সেখানে একটি অক্সিজেন লাইন স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। গত ২৩ জুন বিকেলে ফুটবল প্রশিক্ষণের পর কিশোরদের ওই দলটি তাদের কোচের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী একটি ফরেস্ট পার্কের ভেতর অবস্থিত ‘থাম লুয়াং’ গুহায় প্রবেশ করে। গুহাটিতে তারা যখন প্রবেশ করে তখন এতে পানি ছিল না। কিন্তু তারা গুহার ভেতরে প্রবেশের পর তুমুল বৃষ্টি শুরু হয় এবং আকস্মিকভাবেই পানি বেড়ে গিয়ে গুহার কিছু সঙ্কীর্ণ অংশ পুরোপুরি ডুবে যায়। গুহায় প্রবেশের পরদিন থেকেই দলটির খোঁজ শুরু করে উদ্ধারকর্মীরা। যদিও প্রচ- বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধার তৎপরতা ভীষণভাবে বিঘিœত হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত দশ দিনের মাথায় ২ জুলাই গভীর রাতে ব্রিটিশ দুই ডুবুরি কিশোর দলটিকে খুঁজে পায়। পানি বাড়তে থাকায় প্রাণ বাঁচাতে তারা গুহার প্রবেশ মুখ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার ভেতরে ছোট একটি পাথুরে তাকের ওপর আশ্রয় নেয়। দলটিকে বের করে আনতে উদ্ধারকর্মীরা নানাভাবে চেষ্টা অব্যাহত রাখে। নৌবাহিনীর ডুবুরি, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবীসহ প্রায় হাজার খানেক লোক বিস্তৃত উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া কর্মীদের সংখ্যার কারণে গুহার ভেতর অক্সিজেনের মাত্রা কমে আসছে বলে জানিয়েছেন চিয়াং রাই প্রদেশের গবর্নর নারোংসাক ওসোত্থানাকর্ন। স্বাভাবিকভাবে বাতাসে সর্বনিম্ন ২১ শতাংশ অক্সিজেনের উপস্থিতি নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কিশোর দলটি গুহার যে অংশে আটকা পড়ে আছে সেখানে বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে ১৫ শতাংশ হয়ে গেছে। শনিবার স্থানীয় গবর্নর ঘোষণা দেন, পানি, আবহাওয়া ও শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আগামী তিন-চারদিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ এরপরে আবার বৃষ্টিপাত শুরু হলে সেটি গুহার ভেতরে পানির উচ্চতা বাড়িয়ে দিতে পারে। গুহার ভেতরে শিশুদের ও উদ্ধারকর্মীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের কারণে সেখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও বাড়ছে। তবে কীভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চলবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। গুহার বাইরে উদ্ধারকর্মীরা একশোটির বেশি গর্ত খুঁড়েছেন, যাতে সেগুলো দিয়ে সরাসরি আটকে থাকা শিশুদের কাছে তারা পৌঁছতে পারেন। এরই মধ্যে এক ডুবুরি মারা যান। গুহার বাইরে সামরিক ও বেসামরিক লোকজনের সহায়তায় তাদের উদ্ধারে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বড় ধরনের চেষ্টা চালানো অব্যাহত থাকে। আসছে সপ্তাহগুলোয় মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে আবারও বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে পানিতে তলিয়ে যাওয়া গুহা থেকে পানি নিষ্কাশন করতে উদ্ধার কর্মীদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। গুহার বাইরে আটকে পড়াদের আত্মীয়রা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা আশা করছেন খুব শীঘ্রই শিশুদের উদ্ধার করা হবে। ভারি বৃষ্টিপাতের জন্য গুহার প্রধান প্রবেশপথটি আটকে গেলে শনিবার রাত থেকে তারা সেখানে আটকা পড়ে। রাতভর কয়েকশ উদ্ধারকারী গুহার পানি নিষ্কাশনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পানির পাম্প স্থাপনে কাজ করেছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতে উত্তরাঞ্চলীয় চিয়ান রাই প্রদেশের ওই এলাকাটি তলিয়ে যায়। স্থানটি লাওস ও মিয়ানমার সীমান্তের কাছে অবস্থিত। থাইল্যান্ডে দুই সপ্তাহ ধরে জলমগ্ন গুহায় আটক পড়ে থাকা কিশোররা চিঠির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তাদের পিতামাতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। আবেগঘন ওই চিঠিতে তারা বলেছে, ‘চিন্তা করো না। আমরা সবাই শক্ত আছি। হাতে লেখা ওই চিঠিতে তারা খাবার পাঠানোর বিশেষ করে ‘ফ্রায়েড চিকেন’ পাঠানোর অনুরোধও করেছে। একজন লিখেছে, টিচার, আমাদের অনেক বেশি হোমওয়ার্ক দেবেন না! কিশোর ফুটবল দলটির কোচও গুহায় আটকা পড়ে আছেন। তিনি আলাদা চিঠিতে কিশোরদের পিতা-মাতার কাছে ক্ষমা চেয়ে ‘কিশোরদের খেয়াল রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন’ বলে জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে গুহার ভেতর ফোনের লাইন বসানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হতে হয়। পরে শিশুদের পিতা-মাতাদের চিঠি গুহার ভেতর পৌঁছে দেয়া হয়। যেগুলোর জবাব দেয় তারা। শুক্রবার ডুবুরির মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে কোচ এক্কাপাল সব অভিভাবকের কাছে ক্ষমা চান। শনিবার নেভী সিলের ফেসবুক পেজে চিঠিগুলো প্রকাশ করা হয়।
×