ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে বিশ্বকাপের জোয়ার

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২৪ জুন ২০১৮

ক্যাম্পাসে বিশ্বকাপের জোয়ার

ফুটবল ফুটবল ফুটবল। চারদিকে যেন হই হই রব উঠেছে ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে। যেদিকে যাই সেদিকেই মূল আলোচনার বিষয়বস্তু ফুটবল। ২০১৮-এর ফুটবল বিশ্বকাপে মেতে উঠেছে গোটা বিশ্ব। বাদ নেই বাংলাদেশও। সুদূর রাশিয়ার ফুটবল উৎসব ছুঁইয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তার অংশ হিসেবে ফুটবল উন্মাদনার ঢেউ লেগেছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে। তারুণ্যের আড্ডায় এখন ফুটবল আলোচনা তুঙ্গে। সবার মুখে প্রিয় দল নিয়ে বিশ্লেষণ নানা গল্প। তর্কবিতর্ক, যুক্তি আর পাল্টা যুক্তি। এসবই পছন্দের দলকে সমর্থনের জন্য। প্রতিবার ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় বিভক্ত হয়ে যায় গোটা দেশ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও এ বিভাজনের কমতি নেই। ক্লাস, গল্প কিংবা আড্ডায় আলোচনার বিষয় একটাই-ফুটবল। ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে ক্যাম্পাসগুলোতে সাজ সাজ পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ বা ব্রাজিল, কেউ জার্মানি আবার কেউ বা ফ্রান্স। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে তুমুল উত্তেজনা। আবার কেউ মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিচ্ছে, জোড় গলায় বলছে তার দল জিতবেই। ক্যাম্পাসজুড়ে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের সমর্থকই সবচেয়ে বেশি, অন্য দলেরও আছে তবে অনেকটাই কম। ক্যাম্পাসে আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিলের ফুটবল খেলাও হচ্ছে মাঝে মাঝে। আর খেলা শেষে ক্যাম্পাসজুড়ে মিছিল তো আছেই। এদের মধ্যে আবার অনেকেই প্রিয় দলের পক্ষে বাজি ধরতেও পিছপা হচ্ছে না। এসব দেখে মনে হচ্ছে খেলাটা যেন সুদূর রাশিয়ায় নয়, ক্যাম্পাসগুলোতে। ছাত্রছাত্রীরা মাথায় তাদের পছন্দের দলটির পতাকা বেঁধেও ঘুরে বেড়াচ্ছে সকাল-সন্ধ্যা। অনেকে আবার এখন থেকেই সিডিউল তৈরি করছে, কে কোথায় খেলা দেখবে, হলে না হলের বাইরে। তবে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের মধ্যে ফাইনাল খেলা হোক এটি দুই দলের সমর্থকদেরই ইচ্ছে। ব্রাজিলের সমর্থকরা আগাম ঘোষণা দিয়েছে, ব্রাজিল জিতলে তারা হলে মিষ্টি বিতরণ করবে। এ কথা শুনে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা বলেছে আর্জেন্টিনা জিতলে তারা ব্রাজিলের চেয়েও দ্বিগুণ পরিমাণ মিষ্টি ক্যাম্পাসে বিতরণ করবে। মেসি একাই যথেষ্ট। আর মেসি তো এবার বলেই দিয়েছে যে, সে এবার বার্সেলোনার মেসি হয়েই মাঠে নামবে। সঙ্গে আছে হিগুয়াইনের মতো স্ট্রাইকার। হিগুয়েন তো পুরো ফর্মে। আর কী লাগে! বিশ্বকাপ তো আর্জেন্টিনা পেয়েই গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকতা করতেই খেলাগুলো খেলতে হবে। এগুলো আর্জেন্টিনা সমর্থকদের কথা। ব্রাজিল সমর্থকদের সঙ্গে তর্ক করার পাশাপাশি নিজেদের আর আত্মবিশ্বাসী করতে এ রকম অনেক কথাই বলছেন। যেখানে থাকে আবেগ আর যুক্তির সুন্দর এক সংমিশ্রণ। ব্রাজিলের সমর্থকদের দাবি- আমরা পাঁচবার কাপ নিয়েছি। এবারও নিব। আমাদের নেইমার একাই এক শ’। যদি নেইমার একবার দৌড়ায় তো এগারো জন মিলেও তাকে আর ধরা যাবে না। ক্যাম্পাসগুলোর প্রতিটি হল গেটে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকা। কে কার চেয়ে বড় পতাকা লাগাবে তাই নিয়ে চলছে প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতার কারণে প্রতিদিনই আকার ছোট হওয়ার কারণে অনেক পতাকা খুলে ফেলা হচ্ছে। লাগানো হচ্ছে প্রতিপক্ষের চেয়ে বড়টা। প্রতিপক্ষও একইভাবে পরের দিন লাগাচ্ছে আরও বড় পতাকা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক ছাত্র তুহিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি ফুটবল খেলা তেমন বুঝি না কিন্তু এটা বুঝি যে যেখানে বাংলাদেশের পতাকা রাখার কথা ছিল সেখানে বাংলাদেশের পতাকা না দিয়ে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের পতাকা দিয়ে রাখা হচ্ছে। এটি ঠিক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এদিকে তুহিনের কথা ধরে একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ব্রাজিলের সমর্থক শহীদুল ইসলাম খান বলেন, সারা বছরেই তো আর সেখানে পতাকা লাগানো হয় না। এটি বিশ্বকাপ খেলা তাই মজা করার জন্য পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। খেলা শেষে আবার খুলে ফেলা হবে। এদের মধ্যে আবার কিছু কিছু বিভাগের ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। এমনই একজন শিক্ষার্থী তমাল বলেন, পরীক্ষার জন্য মজা করে খেলা দেখতে পারব না। তবে আর্জেন্টিনার সব খেলা দেখব তাতে কোন সন্দেহ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব কয়টি হলেই প্রতি রাতে আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের পৃথক পৃথক মিছিল হয়। জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্পেন ও পর্তুগালের কিছু সমর্থক আছে। এদেরও মিছিল করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল সমর্থকদের সংখ্যার কথা চিন্তা করে তারা মিছিল করতে সংকোচবোধ করেন। যাই হোক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এই তর্ক বিশ্বের সব খানেই। সবমিলে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এবং এতে চ্যাম্পিয়ন হবে তাদের পছন্দের দলটি। এত সব স্বপ্ন পূরণ হবে, যদি তাদের পছন্দের দলটি ফাইনাল খেলে আর ফাইনালে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। এখন সেজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, সেই ফাইনাল খেলা আর সেই দিনটির জন্য। সাইফুর রহমান
×