ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অমরত্বের হাতছানি মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারের

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৪ জুন ২০১৮

 অমরত্বের হাতছানি মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারের

জাহিদুল আলম জয় ॥ পাওয়া না পাওয়ার বেদনা থাকে কমবেশি সব বিশ্বকাপেই। এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপও ফিকে হয়ে যেত যদি লিওনেল মেসি ও তার দেশ আর্জেন্টিনা না থাকতো। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যদেবী তা হতে দেননি। মেসি ম্যাজিকে ভর করেই বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে নাম লিখিয়েছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। তাইতো অবধারিতভাবে আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় তারকা আর্জেন্টাইন অধিনায়ক মেসি। তারকা এই ফুটবলার ইতোমধ্যে সব জিতেছেন। বাকি শুধু সোনার বিশ্বকাপ ট্রফি। এটি জিততে পারলেই তার নাম উচ্চারিত হবে সর্বকালের দুই সেরা ফুটবলার পেলে ও ম্যারাডোনার সঙ্গে। মেসির মতো রাশিয়া বিশ্বকাপটা নিজের করে নেয়ার সুযোগ থাকছে সময়ের অপর দুই সুপারস্টার নেইমার ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরও। ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার ক্লাব ও দেশের জার্সিতে সম্ভাব্য সব ট্রফিই জিতেছেন। বাকি শুধু বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় সোনার ট্রফিটি উঁচিয়ে ধরতে পারলে ইতিহাসের পাতায় অমরত্ব পাবেন সাম্বা ছন্দের এই প্রতিনিধি। মেসি-নেইমারের মতো অমরত্বের হাতছানি পর্তুগাল অধিনায়ক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরও। তিনিও নেইমারের মতো ক্লাব ও জাতীয় দলের জার্সিতে অপ্রতিরোধ্য। ইতোমধ্যে দেশের জার্সি গায়ে জিতেছেন ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি ইউরো। শুধু অধরা আছে স্বপ্নের বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় সেটা উঁচিয়ে ধরতে পারলেই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়ে যাবে সি আর সেভেনের নাম। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সিলোনার হয়ে বছরের পর বছর রেকর্ডের বরমাল্য পরছেন মেসি। ইতিহাস গড়ে জিতেছেন টানা পাঁচবার ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার। মূলত এ পর্যন্ত মেসির যা অর্জন তা এসেছে ক্লাবের হয়ে সাফল্যের কারণেই। বার্সার হয়ে স্বর্ণসাফল্য পেলেও জাতীয় দল আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি অনেকটাই ম্লান। অবাক করা ব্যাপার, ২০০৫ সাল থেকে জাতীয় দলে খেলে এখন পর্যন্ত জিততে পারেননি কোন আন্তর্জাতিক শিরোপা। বিখ্যাত আকাশী-নীল জার্সি গায়ে জিতেছেন শুধু অলিম্পিক ফুটবলের স্বর্ণপদক। বর্তমানে বয়স ৩০ বছর। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় ২৪ জুন পা রাখবেন ৩১ বছরে। যে কারণে এবারের বিশ্বকাপই মেসির শেষ সুযোগ মনে করছেন অনেকে। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বকালের সেরা হতে ও আক্ষেপ ঘোচাতে রাশিয়া বিশ্বকাপই হবে মেসির আদর্শ উপলক্ষ। এবার বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারলেই একমাত্র অপূর্ণতা ঘুচে যাবে তুখোড় এই ফরোয়ার্ডের। সেঁটে যাবে কিংবদন্তির তকমা, নাম উচ্চারিত হবে পেলে-ম্যারাডোনার পাশাপাশি। যতই দিন গড়াচ্ছে ততই ক্ষুরধার হচ্ছে নেইমারের পায়ের জাদু। কি ক্লাব, কি জাতীয় দল সবখানেই দুরন্ত, দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য তরুণ এই সুপারস্টার। অনেক তারকা ফুটবলারের অপবাদ আছে, ক্লাবে দুর্ধর্ষ হলেও জাতীয় দলের হয়ে ম্রিয়মাণ। কিন্তু নেইমার ঠিক এর উল্টোটা। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপালে ক্লাবের চেয়েও বিধ্বংসী মেজাজে আবির্ভূত হন। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কে সেরা এই বিতর্কের ত্রিভুজে অন্যতম শীর্ষবিন্দু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ব্রাজিলের বিস্ময়। কোন রাখঢাক কিংবা লুকোচুরি না করে বুকে হাত দিয়েও যদি কোন নিন্দুক এখন বলেন, ‘হ্যাঁ, ছেলেটি একদিন বিশ্বকে মাতিয়ে দেবে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তার বয়সী আর কেউ বর্তমান ফুটবল বিশ্বে এতটা আলোড়ন তুলতে পারেননি। মেসি-রোনাল্ডো যুগের পর শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠিতে নেইমারের প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর হবে। যখন মেসিরা থাকবেন না তখন এই নেইমার আরও পরিণত, পরিশীলিত, পরিপুষ্ট ও অভিজ্ঞ হয়ে বড় রকমের বিস্ময়ের জন্ম দেবেন এটা বলাই যায়। ইনজুরির কারণে গত বিশ্বকাপে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। এবারও বিশ্বকাপের আগে ইনজুরি আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সব শঙ্কা কাটিয়ে বীরের বেশেই মাঠে ফিরেছেন নেইমার। দু’টি প্রস্তুতি ম্যাচেই গোল করে জানান দিয়েছেন বিশ্বকাপটা নিজের করে নিতে প্রস্তুত। বিখ্যাত হলুদ জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ ছাড়া এ পর্যন্ত সবই জিতেছেন। ২০১৩ সালে দেশকে জিতিয়েছেন কনফেডারেশন্স কাপের হ্যাটট্রিক শিরোপা। জিতেছেন কোপা আমেরিকা। ব্রাজিলের আপসোস ছিল অলিম্পিকের স্বর্ণপদক। অধরা সেই পদকটাও নেইমার জিতিয়েছেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে। এবার পালা বিশ্বকাপ জয়ের। ব্রাজিলের হয়ে এখন পর্যন্ত ৫৫ গোল করে ছুঁয়েছেন সাবেক তারকা রোমারিওকে। পেছনে ফেলার অপেক্ষায় আছেন রোনাল্ডো (৬২) ও কিংবদন্তি পেলেকে (৭৭)। দুই বছর আগে সবাইকে চমকে দিয়ে ইউরো ট্রফি জয় করে পর্তুগাল। দলের অধিনায়ক ও সেরা তারকা রোনাল্ডো ফাইনালে ইনজুরির কারণে খেলতে না পারলেও বিচলিত হননি ফার্নান্ডো সান্টোসের শিষ্যরা। এবার বিশ্বকাপ ফুটবলেও বড় স্বপ্ন বুনছে ‘ইউরোপের ব্রাজিল’ খ্যাত দেশটি। এ লক্ষ্যে প্রধান সারথী ওই রোনাল্ডোই। পর্তুগাল অধিনায়ক বর্তমানে তুখোড় ফর্মে আছেন। তিনিও স্বপ্ন বুনছেন বিশ্বকাপ জয়ের। রাশিয়ায় মিশন শুরুর আগে সি আর সেভেন জানিয়েছেন, ইউরোর মতো বিশ্বকাপেও তার দেশ চমক দেখাতে প্রস্তুত। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ জেতা হয়নি পর্তুগালের। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল পর্তুগীজরা, যা এখন পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য। রোনাল্ডো-ফিগোদের পর্তুগাল ২০০৬ সালে সেমিফাইনালে উঠে আসলেও চতুর্থ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। এরপর আর তেমন কিছু করা হয়নি। এবার সুযোগ এসেছে আর তা কাজে লাগাতে মরিয়া পর্তুগীজরা। এই মিশনে রোনাল্ডোই যে প্রধান ভরসা তাতে দ্বিমত নেই কারও। তবে টপ ফেবারিটের তকমা না থাকায় পর্তুগাল খেলতে পারবে অনেকটাই চাপমুক্ত হয়ে। নির্ভার রোনাল্ডো গেল মৌসুমে গোলের দেখা পেয়েছেন ৪২টি। চ্যাম্পিয়ন্স লীগেই করেছেন ১৫ গোল। দেশের জার্সিতে ৮১টি গোল করে তিনি পর্তুগীজদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা। তাইতো রাশিয়া বিশ্বকাপে পর্তুগাল তাকিয়ে আছে সি আর সেভেনের দিকে।
×