ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেতাদেরও আনন্দের সীমা নেই

জমজমাট নতুন টাকার হাট, রমরমা বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৪ জুন ২০১৮

জমজমাট নতুন টাকার হাট, রমরমা বাণিজ্য

ওয়াজেদ হীরা ॥ সারি সারি নতুন টাকা। থরে থরে সাজানো দুই, পাঁচ, দশ, বিশ, ৫০ আর ১০০ টাকার বান্ডেল। কেউ অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখছেন আর যার প্রয়োজন কিনে নিচ্ছেন। ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে জমজমাট হয়ে উঠেছে নতুন নোটের বেচাকেনা। ঈদ কেনাকাটা শেষে বাড়ি যাওয়ার আগে সবাই ভিড় করছে নতুন টাকার বান্ডেল কিনতে। ফলে নতুন নোট বেচাকেনায় দিন রাত সবসময় জমজমাট রাজধানীর টাকা পট্টিগুলো। পরিবারের ছোট বড় সবার মধ্যে ঈদ আনন্দ ছড়াবে এই নতুন টাকা তাতেই খুশি ক্রেতারা। আর ঈদে একটু ভাল ব্যবসা করতে পেরে খুশি ব্যবসায়ীরাও। জানা গেছে, ঈদে ছোট সন্তান, ভাই-বোন, শ্যালক-শ্যালিকা বা নাতি-নাতনিদের বখশিশ দিতে নতুন টাকার কোন বিকল্প নেই। নতুন টাকা পেয়ে ছোটরা যেন ঈদের চাঁদই হাতে পায়! আর তাই ছোটদের ঈদ আনন্দ বাড়িয়ে দিতে বড়রা বিভিন্নভাবে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। ঈদের সময় সেলামি হিসেবে তা দেয়া হয়। রাজধানীর বিভিন্নস্থানে কমপক্ষে ২০ জায়গায় ফুটপাথে এই নতুন টাকার হাট বসেছে। যেখানে একটু বেশি টাকা দিয়ে বিভিন্ন মূল্যের নতুন টাকার বান্ডেল পাওয়া যাচ্ছে। জানা গেছে, গত ৩ জুন থেকে নতুন টাকার বিনিময় শুরু করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক। শেষ কর্ম দিবস হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যাংকগুলো গ্রাহককে নতুন টাকা দেবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এ টি এম শামছুজ্জামান জানিয়েছেন, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে টাকা দেয়ার কারণে সবাই সমান হারে টাকা নিতে পারছেন। তবে একজন গ্রাহক ঈদের আগে একবারের বেশি নতুন নোট নিতে পারবেন না। প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোতে লম্বা লাইন লেগে থাকছে নতুন টাকা পাওয়ার জন্য। ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ লাইন ধরে যারা টাকা নিতে অস্বস্তিবোধ করেন মূলত তারাই অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফুটপাথ থেকে নতুন টাকা কেনেন। রাজধানীর ফুটপাথে টাকা দিয়ে টাকা কেনার হাটকে ‘টাকার হাট’ বা ‘টাকাপট্টি’ হিসেবেই পরিচিতি। গত দু’দিন রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্র্যন্ত টাকা বেচাকেনার দৃশ্য। ফুটপাথে বসে যারা নতুন টাকা বিক্রি করছেন তারা বিভিন্ন মাধ্যমে নতুন টাকার বান্ডেল সংগ্রহ করেন। পরে বান্ডেল প্রতি কিছু বেশি টাকা নিয়ে তা বিক্রি করেন। নতুন টাকা বিক্রেতারাও সারাবছর কম বেশি বিক্রি করলেও মূলত অপেক্ষা করেন ঈদের এই সময়ের জন্য। বেশ চাহিদা থাকায় অন্যসব পণ্যের মতো এটিও বিক্রি হচ্ছে মুনাফায়। এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে চলে দর কষাকষিও। মঙ্গলবার বৃষ্টিভেজা মধ্যরাতে গুলিস্তান থেকে ৫ টাকা ও ১০ টাকার দুটি বান্ডেল কিনেন (প্রতি বান্ডেলে ১০০টি করে) হামিদুল আসিফ। ১০ টাকার বান্ডেলে ১০০০ টাকা টাকা আর ৬ টাকার বান্ডেল ৫০০ মোট ১৫০০ টাকা তাকে ১৭২০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। তাতে অবশ্য অখুশি নন। কেননা বাড়ির ছোটদের মধ্যেও ঈদের আনন্দ দিতে পারবেন তাতেই খুশি। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসছেন আর টাকা দিয়ে টাকা কিনছেন। আরেক ক্রেতা সুমন মাহবুব জনকণ্ঠকে বলেন, একেক টাকাপট্টিতে একেক রকম দাম থাকে তাই দরকষাকষি করাই ভাল। আর ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালেতো সারাটা দিনই শেষ হয়ে যায়। এসব টাকাপট্টিতে একটু বাড়তি টাকা লাগলেও দ্রুত পাওয়া যায় বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি। ব্যবসায়ীরা জানান, বছরজুড়ে এই ব্যবসা চলে। তবে ঈদকে ঘিরে বেচাকেনা বেশি হয়। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, প্রতি বান্ডিলে থাকে একশ’টি নোট। এসব নোটভেদে প্রতি বান্ডিলে মুনাফার পরিমাণও হয় ভিন্ন ভিন্ন। গুলিস্তান টাকাপট্টিতে জানা গেল, দুই টাকার বান্ডিল কিনলে ক্রেতাকে অতিরিক্ত দিতে হবে ৭০ টাকা। অর্থাৎ ২৭০ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাবে নতুন ২০০ টাকা। আর পাঁচ টাকার নতুন বান্ডিলের জন্য (৫০০ টাকা) দিতে হবে ৬৫০ টাকা অর্থাৎ ১৫০ টাকা বেশি। এভাবে ১০ টাকার বান্ডিল অর্থাৎ ১০০০ টাকা, ২০ টাকার বান্ডিল বা ২০০০ টাকার জন্য অতিরিক্ত আরও ৭০ টাকা। ৫০ টাকার বান্ডিল বা ৫০০০ টাকা, এক শ’ টাকার বান্ডিল বা ১০০০০ টাকার জন্য অতিরিক্ত গুনতে হবে ১০০ টাকা হারে। আর ৫০০ টাকার বান্ডিল বা ৫০০০০ টাকার জন্য গুনতে হবে ৫০০ টাকা। তবে টাকাপট্টিতে ২ ও ৫ টাকার বান্ডিলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাই এই বান্ডেল কিনতে খরচও একটু বেশি। আর এরপর রয়েছে ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার বান্ডেল। তবে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার বান্ডেলের চাহিদা একেবারেই কম বলেও জানা গেছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে বলে জানা গেছে, পুরাতন টাকার ব্যবসা করে সংসার চালান অনেক ব্যবসায়ী। মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে দীর্ঘদিন ধরে নতুন টাকার ব্যবসা করছেন আছিয়া বেগম। আগে তিনি বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করে সংসার চালালেও এখন এই নতুন টাকার বেচাকেনা করে সংসার চালান। আছিয়া আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয়। লাইনে দাঁড়াতে হয় দীর্ঘক্ষণ। সপ্তাহে একদিন আঙ্গুলেরর ছাপ নিয়ে মাত্র ৮ হাজার টাকা দেয়। সেই টাকা নিয়ে ফুটপাথে এসে বসি। আবার অনেকেই ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ নতুন টাকা সংগ্রহ করে ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
×