ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস রোধে জাতিসংঘের সহযোগিতা

প্রকাশিত: ০৪:২৮, ১ জুন ২০১৮

সন্ত্রাস রোধে জাতিসংঘের সহযোগিতা

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে অবস্থিত পাঁচটি দেশে সন্ত্রাসবিরোধী কাজে সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা করেছেন। জাতিসংঘকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন কমিয়ে দেয়ার ঘোষণার পর গুতেরেস এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। মালি সফরের দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি মধ্যাঞ্চলীয় শহর সেভারিতে অবস্থিত তথাকথিত জি-৫ সাহেলের হেডকোয়ার্টার পরিদর্শন করেন। এএফপি। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস পশ্চিম আফ্রিকার সাহিল অঞ্চলে সেনা মোতায়েন দ্রুত করার পশ্চিম আফ্রিকান দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। ওই অঞ্চলে চরমপন্থীরা তাদের উপস্থিতি আরও পাকাপোক্ত করছে বলে তিনি সতর্ক করেন। গত বছর ফ্রান্স, বুরকিনা ফাসো, চাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারের সমন্বয়ে পাঁচ হাজার সেনার একটি বাহিনী ফ্রান্সের নিজস্ব অপারেশনে বারখান এবং মালিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর আওতায় মোতায়েনে সম্মত হয়। মার্চ মাস থেকে সাহেলে পুরোপুরি এ বাহিনী মোতায়েনের কথা ছিল। তবে যথাসময়ে তা হয়নি। গুতেরেস বলেন, ‘সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো ওই এলাকায় তাদের উপস্থিতি ও প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে যৌথ বাহিনীর কার্যক্রমের অগ্রগতি খুবই ধীর।’ সাহেল অঞ্চলের যে কয়টি দেশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে মালি তার অন্যতম। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে জিহাদী জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। গুতেরেস বলেন, তিনি মালি থেকে ‘উষ্ণ হৃদয়’ নিয়ে ফিরে এসেছেন। ২৯ জুলাই দেশটিতে যে অবাধ ও নিরপেক্ষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘ তাতে সহায়তা করবে। রাজধানী বামাকোতে সংবাদ সম্মেলনে গুতেরেস বলেন, ‘মালিতে অবশ্যই স্বাধীন স্বচ্ছ্ব নির্বাচন হবে এবং মালি কর্তৃপক্ষকে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করার চেষ্টা করব। এমন কি আমি যদি জানি যে, এতে বহুবিধ সমস্যা রয়েছে।’ ইসলামিক চরমপন্থীদের কাছ থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় পরিকল্পিত নির্বাচনটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। ২০১৩ সালে ফরাসী সেনাবাহিনী মালির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা থেকে আল-কায়দার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জিহাদীদের তাড়াতে সরকারী বাহিনীকে সহায়তা করে। ২০১৪ সালে মালিতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। এতে ফ্রান্সের ৪ হাজার ও জাতিসংঘের এমআইএনইউএসএমএ (মিনুসমা) শান্তিবাহিনীর শক্তিশালী ১২ হাজার সেনা অংশ নেয়। জঙ্গী গ্রুপগুলো এ অঞ্চলের কেন্দ্র, দক্ষিণাঞ্চল, বুরকিনা ফাসো ও নাইজারে পর্যন্ত বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে আছে। গত বছর বুরকিনা ফাসো, চাদ, মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজার ভঙ্গুর শাহেল বেল্টে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে ৫ হাজার সশস্ত্র সৈন্য নিয়ে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনার জন্য সম্মত হয়। চলতি বছর মার্চে এর প্রক্রিয়া শুরু হলেও দেরি করে সেনা মোতায়ন ও যৌথবাহিনীর জীর্ণশীর্ণ অবস্থার কারণে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এদিকে গুতেরেস কাজের গতি বাড়াতে সেনাবাহিনীর বিষয়ে তদ্বির করে চলছেন ও ও জাতিসংঘ তহবিল থেকে অর্থায়ন করতে চেষ্টা করছেন। তবে গত ২৩ মে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের সেনা মোতায়ন ও সরাসরি জতিসংঘ অর্থায়নের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেনা সহায়তার পক্ষে মতামত দিয়ে গুতেরেস জানান, এমআইএনইউএসএমএ জি-৫’কে সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তা করা হবে। তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও কার্যকর প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে জি-৫’র পক্ষে খুবই শক্তিশালী যুক্তি উপস্থাপন করব আমরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘শাহেলকে উন্নয়ন করতে আমাদের অনুরোধ থাকবে, কারণ সেখানে উন্নয়ন ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না।’ শাহেল অঞ্চলটি পুরোপুরি অস্থির অরাজকতায় পূর্ণ একটি অঞ্চল। ২০১১ সালে এই অরাজকতা লিবিয়াকে গ্রাস করে, ২০১২ সালে মালির উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা ইসলামিক জঙ্গীরা দখল করে ও নাইজিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারামের উত্থান ঘটে। এদিকে শাহেলের উন্নয়নে ও নিরাপত্তায় অনেক ইউরোপীয় দেশসহ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪১৮ মিলিয়ন ইউরো দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছে।
×