ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হকি লীগে শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে মোহামেডান

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৩১ মে ২০১৮

হকি লীগে শিরোপা দৌড়ে এগিয়ে মোহামেডান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত ২৮ এপ্রিল থেকে ঢাকার গুলিস্তানের মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামের টার্ফে শুরু হয়েছিল বহু প্রতীক্ষিত গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়ার ডিভিশন হকি লীগ। লীগে অংশ নেয় ১২ দল। অনেক দেন-দরবার করেও ঊষা ক্রীড়াচক্রকে খেলতে রাজি করাতে পারেনি বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। এই লীগে সব দল অংশ নিলেও একমাত্র ঊষাই দলবদলে অংশগ্রহণ করেনি। গত লীগের রানার্সআপ দল এবং বড় দল হওয়াতে বাহফে ঊষাকে একটি সুযোগ দেয় লীগে খেলার। তারা শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। কিন্তু ঊষা সেই ডাকে সাড়া না দেয়ায় বাইলজ অনুযায়ী লীগ থেকে অবনমিত হয়ে যায়। দলগুলো প্রথমপর্বে সরাসরি লীগ পদ্ধতিতে খেলে। বাকি দলগুলো হলো : ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব, আবাহনী লিমিটেড, মোহামেডান এসসি, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বাংলাদেশ এসসি, সোনালী ব্যাংক এসআরসি, ওয়ারী ক্লাব, সাধারণ বীমা ক্রীড়া সংস্থা, এ্যাজাক্স এসসি, আজাদ এসসি, পুলিশ এসসি এবং ভিক্টোরিয়া এসসি)। প্রথমপর্ব শেষে সর্বোচ্চ পয়েন্ট পাওয়া পাঁচ দল খেলবে সুপার ফাইভ পর্বে। প্রথমপর্বে অর্জিত পয়েন্ট যোগ করে সুপার ফাইভ লীগের স্থান নির্ধারণ করা হবে। প্রথমপর্বের গোলসংখ্যা সুপার ফাইভে যোগ হবে না। শুধু সুপার ফাইভে পক্ষে এবং বিপক্ষে গোল পার্থক্য স্থান নির্ধারণের জন্য ধরা হবে (চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ দল ব্যতীত)। প্রথমপর্ব ও সুপার ফাইভ খেলা শেষে দুই লীগের সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দলকে লীগ চ্যাম্পিয়ন এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দলকে রানার্সআপ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। তবে কেবল চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ দলের ক্ষেত্রে পয়েন্ট সমান হলে গোল পার্থক্য ধরা হবে না। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী দলের সংখ্যা অধিক হলে প্লে অফ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। প্লে অব ম্যাচ ড্র হলে শূট আউটের মাধ্যমে খেলার ফল নিষ্পত্তি করা হবে। চ্যাম্পিয়ন দল পুরস্কার হিসেবে পাবে এক লাখ টাকা। রানার্সআপ দল পাবে ৫০ হাজার টাকা। পরিচ্ছন্ন খেলার জন্য নির্বাচিত দল পাবে ফেয়ার প্লে ট্রফি। এছাড়া লীগের খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা পাবেন ১০ হাজার টাকা করে পুরস্কার। তবে শেষের দুটি পুরস্কারের অর্থমূল্য বাহফে বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছে। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লীগে এ পর্যন্ত আবাহনী লিমিটেড সর্বোচ্চ ৫ বার শিরোপা জিতেছে। মোহামেডান এবং ঊষা জিতেছে সমান চারবার করে। মেরিনার জিতেছে ১ বার। মঙ্গলবার আবাহনী-মেরিনার ম্যাচ দিয়ে লীগের প্রথমপর্বের ম্যাচ (ম্যাচ নম্বর ৬৬) শেষ হয়। বাইলজ অনুযায়ী এই লীগ অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুটিপর্বে। একটি সিঙ্গেল লীগ, অপরটি সুপার ফাইভ লীগ। সুপার ফাইভের প্রথম পাঁচটি দল ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। দলগুলো হলো : মোহামেডান, মেরিনার, আবাহনী, সোনালী ব্যাংক এবং এ্যাজাক্স স্পোর্টিং। দলগুলোর পয়েন্ট যথাক্রমে ৩৩, ৩০, ২৭, ২১ এবং ১৯। প্রথমপর্ব শেষে দু’দিন বিরতি দিয়ে ১ জুন থেকে শুরু হবে সুপার ফাইভের খেলা। এই পর্বে মোট খেলা হবে ১০টি। ১ জুন দুপুর ২টায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে মোহামেডান বনাম এ্যাজাক্স। একই দিনে অপর ম্যাচে বিকেল ৪টায় আবাহনী মোকাবেলা করবে সোনালী ব্যাংকের। ৭ জুন বিকেল সাড়ে ৩টায় শেষ ম্যাচে মেরিনারের মুখোমুখি হবে মোহামেডান। সুপার ফাইভে মোহামেডান যদি কোন ভুল না করে তাহলে তারাই জিততে যাচ্ছে শিরোপা। কেননা প্রথম পর্বের পয়েন্ট যোগ হবে দ্বিতীয়পর্বে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক স্থানে থাকবে তারা। শুধু তাই নয়, লীগের প্রথমপর্বে মোহামেডানই একমাত্র দল যারা সবকটি ম্যাচ জিতেছে এবং অপরাজিত থাকতে পেরেছে। পয়েন্ট টেবিলে তারাই আছে এক নম্বরে। ৩০ পয়েন্ট পাওয়া মেরিনারের কৃতিত্ব সবচেয়ে কম গোল হজম করা (৬টি)। ২৭ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থাকা আবাহনীর কৃতিত্ব হচ্ছে সবচেয়ে বেশি গোল (৭৮) করা। মোহামেডান, মেরিনার, আবাহনী এবং সোনালী ব্যাংকের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ কোন ম্যাচে ড্র করেনি তারা। আজাদ এবং ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এই লীগে কোন ম্যাচেই জয় না পাওয়া সবচেয়ে অভাগা দল। ওয়ান্ডারার্সের আরও তিনটি অগৌরবের পরিসংখ্যান তো এখনও বলাই হয়নি। একটি হলো-সবচেয়ে বেশি ম্যাচে হার (১০টি) এবং সবচেয়ে বেশি গোল হজম করা (৬৬ গোল) এবং সবচেয়ে কম পয়েন্ট অর্জন (১) করা। এর পাশ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলও তারা পেয়েছে লীগ থেকে অবমনিত হয়ে। গত ১২ মে ওয়ান্ডারার্স-পুলিশ ম্যাচে ঘটে লঙ্কাকা-। এই ম্যাচে চরম বিশৃঙ্খলা হয়। বিকেল ৫টায় ম্যাচটি শুরু হলেও ম্যাচটি যথাসময়ে শেষ হয়নি। এর কারণ খেলায় দু’দলের খেলোয়াড়দের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত না মেনে খেলা বন্ধ করে দেয়া। প্রথম অর্ধে কোন দলই গোল করতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে গোল হওয়ার পর টেকনিক্যাল কারণে আম্পায়ার গোলটি বাতিল করলে একটি দল এর প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু আম্পায়ার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে। ক্লাব কর্মকর্তাদের উস্কানিতে খেলোয়াড়রা খেলা থেকে বিরত থাকেন। বাইলজ অনুযায়ী এমন অবস্থায় ১০ মিনিট পর্যন্ত আম্পায়ার অপেক্ষা করবেন। এর মধ্যে খেলা শুরু না করলে প্রতিবাদকারী দলকে পরাজিত ঘোষণা করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিধান আছে। কিন্তু টার্ফে এদিন এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো হয়। এমনকি হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের চেষ্টাতেও খেলা শুরু করা যায়নি। এতে করে ফেডারেশন যে ক্লাবগুলোর কাছে জিম্মি এবং ফেডারেশন যে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থÑ পুরনো এই সত্য যেন আবারও নতুন করে প্রকাশ পায়। শেষে পুলিশ ক্লাবের ‘রিফিউজ টু প্লে’র কারণে ডিসিপ্লিনারি কমিটি ওয়ান্ডারার্সকে ৩-০ গোলে জয়ী ঘোষণা করে। এছাড়া লীগের বেশিরভাগ ম্যাচেই বিদেশী আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তও মানতে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা গেছে খেলোয়াড়দের। ফলে অনেক ম্যাচই শেষ হতে প্রচুর সময় নিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত লীগের শিরোপা লাভ করে কোন দলটি। প্রথম পর্বের পয়েন্ট তালিকা দল খেলা জয় ড্র হার গোল পয়েন্ট মোহামেডান ১১ ১১ ০ ০ ৭০/১২ ৩৩ মেরিনার ১১ ১০ ০ ১ ৭২/৬ ৩০ আবাহনী ১১ ৯ ০ ২ ৭৮/৯ ২৭ সোনালী ব্যাংক ১১ ৮ ০ ৩ ৪৫/৩৭ ২৪ এ্যাজাক্স ১১ ৬ ১ ৪ ৩৭/৩৪ ১৯ ভিক্টোরিয়া ১১ ৫ ১ ৫ ৩০/৩৫ ১৬ ওয়ারী ১১ ৫ ১ ৫ ৩২/৪১ ১৬ বিডিএসসি ১১ ৩ ১ ৭ ২০/৪০ ১০ সাধারণ বীমা ১১ ২ ২ ৭ ২৭/৪৬ ৮ পুলিশ ১১ ২ ১ ৮ ১৭/৬৯ ৭ আজাদ ১১ ০ ২ ৯ ১২/৫৭ ২ ওয়ান্ডারার্স ১১ ০ ১ ১০ ১০/৬৬ ১
×