ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহর অবিস্মরণীয় কীর্তি

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ২৩ মে ২০১৮

সালাহর অবিস্মরণীয় কীর্তি

গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ফুটবল দুনিয়ার সব আলো কেড়ে নিয়েছেন লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ব্যালন ডি’অর কিংবা ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের তালিকাটা দেখলেই তা পরিষ্কার। তবে মেসি-রোনাল্ডোদের সময়েই বিস্ময়কর পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় ওঠে এসেছেন মোহাম্মদ সালাহ। চেলসি-রোমা ঘুরে গত বছরেই লিভারপুলে যোগ দেন ২৫ বছর বয়সী এই তরুণ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের (ইপিএল) অন্যতম সেরা ক্লাব লিভারপুলের জার্সিতে প্রথম মৌসুমেই আলো ছড়ান মিসরের এই প্রতিভাবান ফুটবলার। ২০১৭-১৮ মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলা মোহাম্মদ সালাহ রবিবার ব্রাইটনের বিপক্ষেও গোল করে নিজেকে নিয়ে যান অনন্য উচ্চতায়। প্রিমিয়ার লীগে নতুন এক ইতিহাস গড়েন তিনি। অলরেডদের জার্সিতে লীগে সর্বোচ্চ ৩২ গোল করার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েন তিনি। ব্রাইটনের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথমার্ধের ২৬ মিনিটে গোল করেই বিরল এই রেকর্ড গড়েন সালাহ। বিষয়টা আগে থেকেই অনুমিত ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। কেননা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩১ গোল করে শীর্ষে থাকা এ্যালান শিয়েরার, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লুইস সুয়ারেজের রেকর্ডে যে ভাগ বসিয়েছিলেন আরও আগেই। রবিবার লীগের শেষ ম্যাচে গোল করে তাদেরকে ছাড়িয়ে রেকর্ডটাকে এককভাবেই নিজের করে নিলেন এই মিসরীয় ফরোয়ার্ড। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের চলতি মৌসুমে ভিন্ন ভিন্ন ১৭টি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করেছেন মোহাম্মদ সালাহ। লীগের ইতিহাসে এক মৌসুমে যা আর কেউ পারেনি। শুধু তাই নয়, চলতি মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে ৩৪টি ভিন্ন ভিন্ন ক্লাবের বিপক্ষে বল জড়ানোর কীর্তিও এখন তার দখলে। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগে তার আগে এই রেকর্ড গড়েছিলেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানি। পিএসজির হয়ে ৩০ দলের বিপক্ষে গোল করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। সালাহর এই রেকর্ডের দিনে শেষ পর্যন্ত লিভারপুলও ৪-০ গোলে পরাজিত করেছে ব্রাইটন হোভ আলবিওনকে। এর ফলে শীর্ষ চারে থেকে মৌসুম শেষ করে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে খেলার টিকিটও নিশ্চিত করল লিভারপুল। ৩৮ ম্যাচ থেকে অলরেডদের সংগ্রহে ৭৫ পয়েন্ট। সমানসংখ্যক ম্যাচ থেকে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে অবস্থান চেলসির। প্রথম তিনটি স্থান দখল করে রেখেছে যথাক্রমে ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং টটেনহ্যাম হটস্পার। গত জুনে রোমা থেকে লিভারপুলে যোগ দেন সালাহ। লিভারপুলের জার্সিতে নিজের প্রথম মৌসুমেই সাফল্যের সবটুকুই অর্জন করতে পেরেছেন তিনি। কিন্তু দলের সাফল্যই দেখতে পেলেন না সালাহ। তবে এখনও শিরোপা জয়ের সুযোগ রয়েছে তাদের সামনে। গত এক দশকেরও বেশি সময় পর এবারই যে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলতে যাচ্ছে তারা। আগামী ২৬ মে কিয়েভে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে লিভারপুলের প্রতিপক্ষ আরেক স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। রবিবার ব্রাইটনের বিপক্ষে গোল করে ইতিহাস গড়ার দিন প্রিমিয়ার লীগের বর্ষসেরার পুরস্কারটাও নিজের শোকেসে তুলে নেন মোহাম্মদ সালাহ। এই পুরস্কার জয়ের ক্ষেত্রে ম্যানচেস্টার সিটির কেভিন ডি ব্রুইনকে পরাজিত করেন তিনি। কয়েকদিন আগে ফুটবল রাইটার্স এ্যাসোসিয়েশনের বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন সালাহ। গেল মাসে প্রফেশনাল ফুটবলার এ্যাসোসিয়েশনের (পিএফএ) সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এছাড়া চলতি মৌসুমে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইংলিশ প্রিমিয়ার ফুটবল লীগের এক মৌসুমে তিনবার ‘প্লেয়ার অব দ্য মান্থ’ এর পুরস্কার জয়ের রেকর্ড গড়েন মোহাম্মদ সালাহ। প্রিমিয়ার লীগের বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়ে দারুণ রোমাঞ্চিত সালাহ। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে ২৫ বছর বয়সী সালাহ বলেন, ‘তারা (চেলসি) বলছে, প্রথমবার এখানে আমি সাফল্য পাইনি। সুতরাং সব সময়ই আমার মনে প্রিমিয়ার লীগে সাফল্য পাওয়ার বিষয়টি ছিল। আমি খুবই খুশি। এটি জিততে পেরে আমি খুবই খুশি।’ এর আগে লিভারপুলের জার্সিতে সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও গড়েছিলেন সালাহ। অলরেডদের হয়ে অভিষেক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটাও তার দখলে। তিনি ছাড়িয়ে যান এক দশক আগে গড়া ফার্নান্দো টোরেসের রেকর্ডকে। ২০০৭-০৮ মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে অভিষেক মৌসুমেই ৩৩ গোল করেছিলেন স্প্যানিশ স্ট্রাইকার। ইপিএলে আফ্রিকান ফুটবলার হিসেবে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল করেছিলেন দিদিয়ের দ্রগবা। ২০০৯-১০ মৌসুমে আইভরিকোস্টের এই তারকা ফুটবলার চেলসির হয়ে করেছিলেন ২৯ গোল। দ্রগবাকেও ছাড়িয়ে যান সালাহ। মিসরের প্রথম ফুটবলার হিসেবে প্রিমিয়ার লীগে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটাও নিজের করে নিলেন সালাহ। আরেকটি অবাক করা তথ্য হলো, ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে সালাহর চার গোল ছিল ঠিক চার শটে। তার আগে ২০০৯ সালের এপ্রিলে এমন কীর্তি গড়েছিলেন আন্দ্রে আর্শাভিন। সেটাও এই এ্যানফিল্ডেই! আর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে লিভারপুলের হয়ে শেষ কোন খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিপক্ষের জালে চারবার বল জড়ানোর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের পর সেই কীর্তি গড়লেন এবার সালাহ। এবার সোনার বুট জয়েরও সুযোগ এসেছিল সালাহর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পাচ্ছেন না তিনি। লা লীগায় ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে গোল করেছেন মেসি। লীগে যা তার ৩৪তম গোল। আর এই গোলের ফলে ইউরোপিয়ান ‘গোল্ডেন শু’ জয়ের দৌড়ে সবার সামনে এখন আর্জেন্টাইন তারকাই। লিভারপুলের ফরোয়ার্ড সালাহ ৩২ গোল নিয়ে তাঁর পেছনে অবস্থান করছেন। গোল্ডেন শু পুরস্কারের মজাটা হলো, এই প্রিমেরা লীগে গোলপ্রতি ১.৫ রেটিং পয়েন্ট। কিন্তু ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লীগে (লা লীগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, বুন্দেসলীগা, সিরি’এ ও লীগ ওয়ান) গোলপ্রতি ২ পয়েন্ট। টুর্নামেন্টের প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জনপ্রিয়তা ও মান অনুসারে এই রেটিং পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়। ৩৪ গোল করা মেসি ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে।
×