ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফেনিল সাগরের ভালবাসায়...

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফেনিল সাগরের ভালবাসায়...

‘প্রবালদ্বীপের তলে সমুদ্র অমরায়/ নোনা জলে ফিন ফিনে ফেনিল ধারায়// চিকচিক করে ওঠা অভ্র নীল ঢেউ/ দেখেছে অনেকে আগে, আঁকেনি তো কেউ।’ সব সময়ই কবি সাহিত্যেকের মুগ্ধতার একটা বড় অংশ সাগর বা সমুদ্র। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কাজী নজরুল, হুমায়ূন আহমেদ, জীবনানন্দ দাস, বুদ্ধদেব বসুদেরকে ভালবেসে মুগ্ধতায় বুঁদ করে রেখেছিল সমুদ্র। তাই তো রয়েছে বাংলা সাহিত্যে একটা বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে সাগরের উপস্থিতি। রচিত হয়েছে অসংখ্য কবিতা, গান, সিনেমা আর কত কি। আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একদম শেষে প্রান্তে এসে আমাদের নীল সাগর আলিঙ্গনের এক অপূর্ব সুযোগ এনে দিল কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ। আমাদের আর কি সাধ্য সমুদ্রের আহ্বানকে উপেক্ষা করার! তাই তো দেরি না ফেসবুকে ‘আজ আমরা চলে যাচ্ছি দু’-একবার হাঁটুজলে নেমে, আমাদের কতটা জেনেছো সমুদ্রের জল’ স্টেটাস দিয়ে বিভাগের সাত জন শিক্ষকসহ আমরা ১৬ জন ¯œাতকোত্তর শিক্ষার্থী চললাম সাগর সান্নিধ্যে। সমুদ্রযাত্রায় বাড়তি ফ্লেভার যোগ করতে ময়মনসিংহ থেকে যথাসময়ে চেপে বসলাম ট্্েরইনে। রাতের অন্ধকার ভেদ করে চলা রেলগাড়ির একই বগিতেই আমাদের দলের সবাই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেলের কামরায় জমে উঠল আমাদের নাচ, গান, আড্ডা আর কবিতা। কামরার সহযাত্রীরা ভাগাভাগি করে নেয় আমাদের আনন্দ। হয়ত এই বয়সে এসে অনেকই ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছিল তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সোনালি দিনগুলোতে। চট্টগ্রামে নেমে আমাদের জন্য নির্ধারিত বাসে করে সোজা কক্সবাজার। হোটেলে ব্যাগ রেখে দুপুরের খাবার সেরে সি বিচে কাটিয়ে দিলাম বাকি সময়টা। পরদিন খুব সকালে উঠে টেকনাফ যাই। উদ্দেশ্য আমাদের ট্যুরের মূল আকর্ষণ নীল অম্বু আর সহ¯্র প্রবালে বাঁধাই করা নারিকেল গাছে ঘেরা স্বপ্নের সেন্টমার্টিন। সমুদ্রগামী জাহাজে চেপে পৌঁছাই ঠিক সাড়ে ১২টায়। সাগর থেকে ছোট্ট এই দ্বীপটিকে দেখে মনে হয় সাগর জলেভাসা একটা পদ্ম। হোটেলে ব্যাগ রেখে ফুটবল নিয়ে আমরা নেমে যাই সেন্টমার্টিনের সি বিচে। সাগরের বিশাল জলরাশি তীরে ইচ্ছামতো ফুটবল খেলে, নীলাম্বুর নীল পানিতে গোছল, উত্তাল গর্জন, জোয়ার-ভাটা, ডাবের মিষ্টি পানি, শামুক, ঝিনুক, প্রবাল কুড়িয়ে ও সূর্যাস্ত দেখে কেটে গেল দিনের বাকিটা সময়। রাতের সমুদ্র সে তো এক অজানা কুহক। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সাগরের গর্জন। দরিয়ার বিশাল বিশাল ঢেউ আছরে পড়ছে প্রবালের গায়ে। নোনা জল ছোঁয়া বাতাস শরীরে ভুলিয়ে দিয়ে যায় ভালবাসার এক অব্যক্ত শিহরণ। শেষ রাতের দিকে সাগরের জলে চুম্বন দিয়ে জেগে ওঠে চন্দ্র। ক্ষণিকেই সাগরের নীলঅম্বু রুপালি জোছনায় সোনালি রং ধারণ করে। মুহূর্তেই চারপাশটা গ্রাস করে নেয় অন্য রকম ভালবাসা, মোহনীয়তা ও সিগ্ধতায়। দ্বীপটাকে মনে হয় সোনা জলে ভাসা কোন এক সবুজপরী। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে সূর্যোদয় দেখতে গেলাম। মনে হচ্ছিল ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে আসছে সূর্য। সময়ের সঙ্গে সূয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে। আমরা সাইকেল নিয়ে দ্বীপের চারদিকটা ভাল করে ঘুরে দেখি। সাড়ে ১২টার দিকে ঘাটে জাহাজ ভিড়তে দেখে মনটা কেমন করে ওঠে। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই ইতি ঘটবে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ ট্যুরটির। কিছু দিনের মধ্যে শেষ হবে ছাত্র জীবন, আলাদা হয়ে যাব সবাই। কোন সময় হয়ত আবার আসব এই সমুদ্রের পারে। তখন থাকবে না এই বন্ধুগুলো। তবে স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে বন্ধুদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনেই এই সময়গুলো। আর হয়ত মনে মনে বলতে থাকব জীবনানন্দ দাসের সিন্ধুসারস কবিতায় সেই বিখ্যাত লাইন ‘তুমি তাহা কোনদিন জানিবে না; সমুদ্রের নীল জানালায়/ আমার শৈশব আজ আমারেই আনন্দ জানায়।’ মোফাজ্জল হোসেন মায়া
×