ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১৩৩ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে যুবক ॥ উৎসুক জনতার ভিড়!

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২১ এপ্রিল ২০১৮

 ১৩৩ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে যুবক ॥ উৎসুক জনতার ভিড়!

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর জামিল খান কমপ্লেক্সের সামনে ১৩৩ ফুট উঁচু ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্ট সঞ্চালন লাইনের বৈদ্যুতিক (হরিপুর-মানিকনগর) টাওয়ারের ওপরে উঠে পড়ে এক যুবক (২৫)। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছে, বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠা যুবকের নাম জাকির হোসেন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, তার নাম নাজমুল আবার কেউ বলছে তার নাম জাহাঙ্গীর। এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস বলছে, সে মানসিক ভারসাম্যহীন। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ওই ব্যক্তিটি টাওয়ারের ওপরে বসে থাকে। খবর পেয়ে দুপুর ১টায় বিদ্যুত সংযোগটি বন্ধ করে ঘটনাস্থলে সোনারগাঁ থানা পুলিশ, পিজিসিবি ঢাকা পূর্ব সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস কর্তৃপক্ষ এবং আদমজী ফায়ার সার্ভিস ও ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিটকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ওই জাকিরকে উদ্ধার করতে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়। দীর্ঘ সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজনের চেষ্টার পর সাড়ে ৬টায় ওই যুবকে টাওয়ার থেকে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। এ সময় উৎসুক জনতা যুবককে দেখার জন্য ওই এলাকায় ভিড় করেন। এতে ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে দুপুরে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে ওই জাকিরকে টাওয়ার থেকে নেমে আসার আহ্বান জানালেও নেমে আসেনি। তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখালেও সে কোন কর্ণপাত করেনি। পরে তাকে ওই টাওয়ার থেকে নামাতে তাসলিমা নামের নারী ভারসাম্যহীনকে ডেকে আনা হয়। তাসলিমাও হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে তাকে ডেকে টাওয়ার থেকে নেমে আসার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করে। কিন্তু কারও কথাতেই কর্ণপাত করেনি জাকির। নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ জানান, সংবাদ পেয়েই আদমজী নগর এবং ডেমরার ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে টাওয়ারে উঠে পড়া যুবককে নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্সের সঙ্গে বিদ্যুত ইউনিটের লোকজন একত্রিতভাবে টাওয়ারে উঠে পড়া লোককে নিচে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন। সর্বশেষ বিদ্যুত ও ফায়ার সার্ভিসের তিন কর্মী ওই ব্যক্তিকে বেল্ট বেঁধে সন্ধ্যায় নিচে নামিয়ে এনে সোনারগাঁও থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমাদের ধারণা সে ভারসাম্যহীন যুবক। সে পুলিশের কাছে বলেছে তার নাম নাজমুল। সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফয়সাল মিয়া জানান, দুপুর ১২টায় কাঁচপুর থেকে একজন ব্যক্তি ফোন করে জানান, কোন এক লোক বিদ্যুতের টাওয়ারের ওপরে উঠে বসে আছেন। তাকে কোনভাবেই নামাতে পারছে না। খবর পেয়ে একটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে কথা বলে বিদ্যুত লাইনটি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করলে তারা তাৎক্ষণিক বন্ধ করে তারা ঘটনাস্থলে আসেন। পিজিসিবি’র একজন প্রকৌশলী শাহীন জানান, খবর পেয়ে বিদ্যুত লাইনটি বন্ধ করে ঘটনাস্থলে আমাদের লোকজন যায়। পরে বেল্ট বেঁধে তাকে অক্ষতভাবে নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়। বৈদ্যুতিক টাওয়ারটি ৩৫ মিটার উঁচু। ১ লাখ ৩২ হাজার ভোল্টের (১৩২ কেভি) লাইনটি হরিপুর থেকে মানিকনগরে গিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পারুল আক্তার নামে এক নারী দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জ-মানিকনগর ১ লাখ ৩২ হাজার (১৩২ কেভি) ভোল্টের সঞ্চালন লাইনের সিদ্ধিরগঞ্জে শিমরাইলের ৮নং টাওয়ারের (রেন্ট-এ-কার স্ট্যান্ড সংলগ্ন) আশপাশে ঘুরতে থাকে। সুযোগ বুঝে পারুল ১৩৩ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠে পড়ে হাঁটাহাঁটি করতে থাকে। স্থানীয় লোকজন ঘটনাটি দেখতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়ে। স্থানীয় জনতা প্রাথমিকভাবে পারুলকে নামাতে চেষ্টা করলে সে আরও দ্রুত টাওয়ারের ওপর উঠতে থাকে। এতে আরও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার ডেমরা ও সদর দফতরের ২টি ইউনিটের ১০ কর্মী সোয়া ২ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) দিয়ে পারুলকে টাওয়ার থেকে অচেতন অবস্থায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এর আগে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল আয়েশা আক্তার তমা নামে এক তরুণী সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী নাভানা-ভুঁইয়া এলাকার আরেকটি সঞ্চালন লাইনের ১২০ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক টাওয়ারে উঠে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাকেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টিটিএল দিয়ে ছয় ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পর নামিয়ে আনতে সক্ষম হন।
×