ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্ক্রিয়- তবে অনিয়মে সক্রিয় সাইক্লিং ফেডারেশন!

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৬ এপ্রিল ২০১৮

নিষ্ক্রিয়- তবে অনিয়মে সক্রিয় সাইক্লিং ফেডারেশন!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ একটি আজব দেশ। এই দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন রেকর্ড গড়েছে। খেলাধুলায়ও। অলিম্পিকে পদক না জেতা সবচেয়ে বেশি মানুষের দেশ হিসেবে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়- এদেশে মোট ৪৬ ক্রীড়া ফেডারেশন ও ক্রীড়া এ্যাসোসিয়েশন আছে যার বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয়। আর এই ফেডারেশন ও এ্যাসোসিয়েশনগুলো আছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অধীনে। এই এনএসসিকে অনেকেই বলে থাকেন দেশীয় ক্রীড়ার উন্নতির প্রধান অন্তরায়। কারণ তাদের কর্মকান্ডই বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। এই ৪৬ ফেডারেশন বা এ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে অনেক খেলাই আছে যার নাম সাধারণ মানুষ জানেই না। আবার নাম জানলেও তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। বলতে গেলে সারাবছরই ঘুমিয়ে থাকে। এমনই একটি হচ্ছে বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন। বর্তমানে যে কটি নিষ্ক্রিয় ফেডারেশন আছে, এটি তার মধ্যে অন্যতম। সারাদেশে তাদের কার্যক্রম এতটাই কম যে, কদিন আগে শেষ হওয়া বহুল আলোচিত ‘বাংলাদেশ যুব গেমসে’ সাইক্লিং ইভেন্ট রাখাই হয়নি। সারা বছর তাদের তৎপরতা একটিই- জাতীয় সাইক্লিং চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করা। অথচ তাদের পাশেই আছে হ্যান্ডবল ফেডারেশন। সারা বছরই এই ফেডারেশন ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্রচুর টুর্নামেন্টের আয়োজন করে থাকে (আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ যুব, জাতীয়সহ বিভিন্ন বিশেষ দিবসের টুর্নামেন্ট)। তাদের জাতীয় দলও প্রতি বছরই অংশ নিয়ে থাকে একাধিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। সেগুলোর ফলাফলও হয়ে থাকে আশানুরূপ। অথচ এর ঠিক বিপরীত দৃশ্য সাইক্লিং ফেডারেশনের। তাছাড়া এই ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগও আছে। যেমন : ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক সাইক্লিং ফেডারেশন থেকে ২০টি রেসিং বাইসাইকেল অনুদান হিসেবে পাওয়ার পর চট্টগ্রাম পোর্ট থেকে ফেডারেশনে আসার পর ২টি চুরি হয়ে যায়। ২০১৪ সালে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে অত্যাধুনিক সাইকেল না থাকায় ওই আসরে অংশ নেয়ার অনুমতি মিলেনি বাংলাদশী সাইক্লিস্টদের। পরে বিশেষ অনুরোধে সুযোগ দেয়া হয় তাদের। সে বছরই দক্ষিণ কোরিয়ায় আদম পাচার করে (২ জন, ফেডারেশন কর্মকর্তা ও আনসারের জাহিদ চৌধুরী সুমন ও সাইক্লিস্ট আজিজুল ইসলাম)। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ধরা খায় ফেডারেশন। অথচ এই ফেডারেশনটির আকর্ষণীয় একটি বড় পরিসরের অফিস আছে। চাকচিক্যও আছে। কমিটি আছেও। অথচ বর্তমানে নেই কোন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। ফলে ফেডারেশনটি হয়ে গেছে একেবারেই স্থবির। এমন না যে তারা এনএসসি থেকে বার্ষিক অর্থ বরাদ্দ পায় না। যৎসামান্য হলেও অবশ্যই অর্থ পায়, কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে তারা কিছু করে (আসলে কি করে, সেটাই হচ্ছে রহস্যের) না। অন্তত চোখে পড়ে এমন কিছু তো করেই না। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের পদে আছেন পারভেজ হাসান (সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন)। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সাইক্লিং ফেডারেশনের এ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করে এনএসসি। এ্যাডহক কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক করা হয় ২০১০ সালে ঢাকা এসএ গেমসে কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত পারভেজ হাসানকে। ওই গেমসে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার দায়ে সাইক্লিং থেকে তাকে নিষিদ্ধ করেছিল বিওএ ও এনএসসি। ২০১০ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ওই গেমসে অবৈধভাবে স্বর্ণপদক অর্জন করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল সাইক্লিং ফেডারেশন। মহিলা সাইক্লিস্টকে গলায় স্বর্ণপদক পরানো এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর সেটা প্রকাশ পেয়ে যায়। স্বর্ণপদক বাতিল হয়ে যায়। ওই সময় সাইক্লিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন পারভেজ হাসান। কেলেঙ্কারির তদন্তের পর তাকে আট বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু সেই মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। দেশের সুনাম নষ্টকারী সেই পারভেজ হাসানকেই কিনা চতুর্থবারের মতো সাধারণ সম্পাদক করা হয় এ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে। অনেকেই বলছেন- এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে ক্ষমতায় বসালে ফেডারেশনের এমন বেহাল দশা হবে, এতে আর অবাক হবার কী আছে? অবশ্য জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায় সবকিছুই অস্বীকার করেছেন তিনি, ‘আমাদের ফেডারেশন নিষ্ক্রিয়, এটা ঠিক নয়। কারণ গত বছর আমরা চারটি টুর্নামেন্ট করেছি। এগুলো হলো- বিজয় দিবস, উন্মুক্ত, জাতীয় এবং স্কুল সাইক্লিং প্রতিযোগিতা। এমনকি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের দল অংশ নিয়েছে গতবার। ভারতের দিল্লীতে অনুষ্ঠিত ট্র্যাক এশিয়ান কাপে পুরুষ দল তাম্রপদক লাভ করেছে।’ তবে পারভেজ স্বীকার করেন, বছরে চারটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করাটা মোটেও যথেষ্ট নয়। এটা আরও বাড়ানো উচিত। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা এনএসসি থেকে বার্ষিক বরাদ্দ পাই তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কিছু হয় না। এ জন্য দরকার স্পন্সর। কিন্তু স্পন্সররা ক্রিকেট ছাড়া অন্য কোন খেলায় স্পন্সর করতে আগ্রহী নয়। তারপরও আমরা স্পন্সর যোগাড় করতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসছে রোজার আগে বা রোজার ঠিক পরেই যে কোন একটি টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা আছে।’ এই অর্থের কারণেই জাতীয় দলের সাইক্লিস্টদের জন্য নতুন কোন উন্নতমানের সাইকেল কেনা হয়নি সেই ২০১০ সালের পরÑ এমনটাই দাবি করেন পারভেজ। যোগ করেন, ‘একই কারণে কেনা সম্ভব হচ্ছে না সাইক্লিস্টদের ফিটনেস বাড়ানোর জন্য ব্যায়ামের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।’ সাইক্লিং ফেডারেশনের বর্তমান দুরবস্থার জন্য আগের কমিটিকেই দায়ী করেন পারভেজ, ‘আমি যখন কমিটিতে ছিলাম না, তখন থেকেই সমস্যা-স্থবিরতা শুরু। টানা ৪-৫ বছর তো জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপই হয়নি।’ যুব গেমসে সাইক্লিং ইভেন্ট না থাকা প্রসঙ্গে পারভেজের ভাষ্য, ‘এটা মোটেও আমার ব্যর্থতা নয়। কেননা যখন এ বিষয়ে বিওএ সিদ্ধান্ত নেয় তখন আমি কমিটিতে ছিলাম না। যাহোক, আমি আশাবাদী, এবার না হলেও আগামী যুব গেমসে অবশ্যই সাইক্লিং ইভেন্ট থাকবে।’ আট বছরের শাস্তির নিষেধাজ্ঞা শেষ হবার আগেই কিভাবে এ্যাডহক কমিটিতে ঠাঁই পেলেন- এই প্রশ্নে পারভেজের উত্তর, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যারা আমাকে কমিটিতে রেখেছেন তারাই বলতে পারবেন। তাছাড়া আমি মনে করি আট বছর আগে আমি কোন অন্যায় করিনি, ষড়যন্ত্র করেই আমাকে ফাঁসানো হয়েছিল।’
×