ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের টার্গেট জয় ্রবিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয়

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ব্যস্ততা বেড়েছে প্রার্থীদের

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৩১ মার্চ ২০১৮

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ব্যস্ততা বেড়েছে প্রার্থীদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে ৩১ মার্চ। নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া এই খবরে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের মধ্যে। বিশেষ করে সরকারী দল সমর্থক প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এখন প্রতিদিনই এলাকার ছোট-বড় যে কোন অনুষ্ঠানে তারা ছুটে যাচ্ছেন। জনগণের সঙ্গে কথা বলে নিজের প্রার্থিতার বিষয়টি জানান দিচ্ছেন। এলাকার সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগঠনিক ও প্রতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কর্মসূচীতে নিজেদের সম্পৃক্ত করছেন সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তবে এবারই প্রথম গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ফলে সবারই জনসম্পৃক্ততার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দলীয় প্রতীক পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা। নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ জানান, ২০১৩ সালের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সভা হয় একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। আইন অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আসলাম জানান, ৫৭ সাধারণ ওয়ার্ড এবং ১৯ সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মোট আয়তন ৩২৯.৯০ বর্গকিলোমিটার। এখানে মোট ভোটার ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯১ হাজার ৬৯৮ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৬৩। ২০১৩ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার ৯৩০ জন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক এমএ মান্নান লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আাওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে গত পাঁচ বছরের অধিকাংশ সময় মামলা, বরখাস্ত ও জেলে থাকায় অল্প সময়ের জন্য মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন এম এ মান্নান। মেয়রের অনুপস্থিতিতে নগর ভবনের কার্যক্রম ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতেই। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি থাকায় এবার জয়কে প্রধান টার্গেট করে মাঠে নামতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যে কোন উপায়ে জয় ঘরে তোলার জন্য তারা মরিয়া। তবে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের জন্য হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে ঠান্ডা লড়াই। অপরদিকে, প্রথম নির্বাচনে বিএনপি জয় পেলেও এবারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। মেয়রের ওপর হামলা-মামলা, তাকে বরখাস্ত-জেল-ফিরে আসা ইত্যাদি নিয়ে বিপর্যস্ত বিএনপি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়েই এখনও আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছে। জানা গেছে, এবার পাঁচজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের চেষ্টায় এগিয়ে আছেন। তারা হলেন- গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। সব প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা নৌকা প্রতীকের জন্য মাঠে কাজ করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, সব প্রার্থীর আমলনামা পজেটিভ থাকায় প্রার্থী নির্বাচনে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে দলীয় হাইকমান্ড। অপরদিকে, দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়ে জেলে বন্দী দলীয় চেয়ারপার্সনকে মুক্ত করার আন্দোলনে ব্যস্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কর্মীদের কাছ থেকে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছেনÑ বর্তমান মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এমএ মান্নান, দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দীন সরকার ও বর্তমান মেয়রের ছেলে মুঞ্জুরুল করিম রনি। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে অধ্যাপক এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকার শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে তাদের সমর্থিতরা জানিয়েছেন। মামলা ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধ্যাপক মান্নান শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েকদিন। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মনোনয়ন প্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থীরা অবশ্য বছর খানেক আগে থেকেই তৎপর। সম্প্রতি তাদের এই ব্যস্ততা আরও বেড়েছে। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন বর্তমান গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান। তিনি সে সময় গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। এবারও মনোনয়নের প্রত্যাশায় আজমত উল্লাহ খান মাঠে-ময়দানে সরব রয়েছেন। অপরদিকে, সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলেও এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়ে যান। এদিক থেকেও এবার তিনি মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে মতামত দিয়েছেন তার সমর্থকেরা। দলীয় কর্মকা-ে তার একক অবদানের প্রচার রয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা জানিয়েছেন, তিনি প্রতিবছর জাতীয় শোক দিবসে মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড কার্যালয়ে একটি করে গরু কাঙালি ভোজের জন্য বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান রাসেল সরকারও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। তার সমর্থনে পোস্টার ছাপিয়ে প্রায় দু’বছর আগে থেকে মহানগরের প্রতি ওয়ার্ডে সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে। পোস্টারের পাশাপাশি তার ছবিসহ বিলবোর্ডও লাগানো হয়েছে মহানগরের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতে। প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের বাইরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মহানগর সভাপতি রাশেদুল হাসান রানা এবং ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও হেফাজত ইসলামের গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমানের পক্ষেও প্রচার চালানো হচ্ছে। নির্বাচনের বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান জানান, ‘প্রথম সিটি নির্বাচনে কিছু ভুলত্রুটি ও দলীয় কোন্দল থাকায় বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছিল। পরে গত পাঁচ বছরে সেগুলো কাটিয়ে উঠেছি। সেই সঙ্গে বিএনপির মেয়র প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় সাধারণ জনগণ এখন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমার বিশ্বাস, দলীয় প্রধান আমাকে মনোনয়ন দেবেন। সে কারণেই আমি মাঠে আছি।’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা এখন দলীয় প্রধানকে মুক্ত করার আন্দোলনে আছি। তবে দল যদি নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে যে অবস্থাতেই থাকি নির্বাচনে অংশ নেব। নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয় তাহলে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত।’
×