ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:১০, ৩০ মার্চ ২০১৮

কবিতা

বাংলাদেশ ॥ কম্পোজিশন-৩ আশিক সালাম রক্তের আগুন জলে লেখা হলো কাব্য সাত সমুদ্র অশ্রু ঢেউয়ে গাঁথা হলো সুর একাকাশ বেদনার নীলে আঁকা হলো ছবি স্বাধীন সার্বভৌম মানচিত্র যমজ সন্তান মাসুদ অর্ণব শীতে রোদ্রহীন দিনের গল্পে ভরা জীবনে চাই না কারো করুণার রৌদ্রফুল; বাতাসের সুরে সুর মেলানো মানুষের ভিড় ঠেলে, সুদূর সন্ধানী প্রতিযোগিতায় হতে চাই না সময়ের যমজ সন্তান। আমরা সবাই যেন আজ মুখস্থ মানুষ; অথচ নিজের মুখম-ল ভুলে যাওয়ার ভয়ে তাকাই না কারো দিকে। আমাদের মনের আয়না ঘোলাটে হওয়ায় আশ্রয় খুঁজি পরিচ্ছন্ন সুশ্রী মলাটে। অনধীনতা সাদিক আল আমিন ‘প্রণয়িনী’, মৃদুস্বর ডাকে মিছিল শেষ ক্লান্ত প্রেমিক প্রসন্ন সুখ গালে-চোখে লেপ্টে থাকে বৃষ্টিস্নাত ককতুমারীর মতো... লাজুক ভঙ্গিমায় ব্যঙ্গ করা ছেলেটা এখন দিনরাত মিছিল করে, আওয়াজ তোলে কড়া তানের; উচ্চকণ্ঠেরÑ যেন কেউ কোন দিন কোন কবিতার অনিষ্ট করতে চাইলেই শক্ত প্রতিরোধে গেঁথে দেবে বুকে প্লাটুন প্লাটুন বুলেট এই সঙ্কোচে কেউ কোন দিন পেশীবহুল অধিকার দেখাবে না আর তাই হাসে কেবল, বিনয়ী উল্লাসে অজস্র দেবদূত গ্যালন গ্যালন সুধা পান করানোর দায়িত্ব নেয় একটা কবিতা স্বাধীন হলো তবে একজন বালিকা একান্তই নিজের হলো দারুণ অস্তবেলায় প্রণয়িনী ললনা হে, সর্বাঙ্গে এবার আমাকে স্বাধীন করো তুমি... ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা বাদল আশরাফ যে অর্কিড সতেজ থাকে জল ছাড়া দিনের পর দিন তুমিও কী তার মত! তোমার অন্তর্ভেদী ধূসর জোড়া চোখ ঘোমটার প্রান্ত জুড়ে সফেদ কেশরাজি বুকের মাঝে অদ্ভুত বেগুনি রশ্মির ছটা- বংশগতির ধারায় তুমি সমুন্নত সুদৃঢ় শিকড়ে ঠিক যেন ডেনড্রোবিয়ামের মত! তুমি বেঁচে আছো জলের মতই জরুরি স্নেহ ভালবাসা ছাড়া দিনের পর দিন... তোমার তো নেই কোন চাওয়া পাওয়া একান্ত নিজের- যা কিছু অর্জন, সবটুকু আমাদের দিয়ে তুমি বেঁচে আছো, অনিন্দ্য অর্কিড ডেনড্রোবিয়ামের মত- বাতাস কিংবা বাতাবরণে বিরাজমান যেন কারো পরম আশীর্বাদে! স্বপ্নের নাম আমার সোনার বাংলা রহমান মুজিব আঙ্গুলের কড় রেখায় স্বপ্ন গুনতে নেই, স্বপ্নের সংখ্যা অসংখ্য কবি আমার রক্তে ধোঁয়া স্বপ্ন, তার কবিতায় পাখি উড়ার ঘ্রাণ মৃত্যুর গান পয়েন্টে বেজে ওঠা হাজার বছরের বকেয়া শোধের অগ্নিপাঠ ... দাবায়া রাখতে পারবা না। তারপর মৃত্যুর সতীর্থ সহচর, ইতিহাসে হাঁটা, প্রস্তর কালের অন্ধ ঝিনুক ভেঙ্গে রোদফোঁটা মুক্তো দিনের পালা, চেতনার নতুন পতাকা আমার সোনার বাংলা... শালিক ও বৃক্ষ আবেদীন জনী শালিকটা উড়ে গেছে যেখানে অরণ্য আছে, সবুজাভ ছায়া তোমার সমস্ত স্বপ্নগুলো জমা রেখেছিলে প্রিয় সেই শালিকের চঞ্চল ডানার নিচে তুমি এখন স্বপ্নহীন, চোখের কার্নিশে ধোঁয়াশার জাল তুমি অরণ্য বোঝো না সবুজ বোঝো না মরা বৃক্ষের মতোই জড়কঙ্কাল স্থায়ী বাসা বিনির্মাণে শালিকরা উপযুক্ত বৃক্ষ চায় গহিন অরণ্যে। ভাগ্য ভালো যে দিলীপ কির্ত্তুনিয়া ভাগ্য ভালো যে একাত্তরে একটু একটু বুঝতে শিখেছি। না হলে স্বাধীনতার সেই কথাগুলি আজও বুকের মধ্যে গেঁথে রাখতে পারতাম না। আমি তখন দেশ চিনি- পরদেশ চিনি চিনি পতাকা। শেখ মুজিবের নাম মুখস্থ হৃদয়ে গাঁথা জয় বাংলা। ভাগ্য ভালো আমার তখন মায়ের দুধ ছাড়া হাত পা- তখনও একটু একটু চলতে শিখেছি একা একা- ঐ একাত্তর সালে- যুদ্ধ প্রবল সময়ে। না হলে মনের আয়নায় সেই ভয়াল দিনের ছবি খুঁজে পেতাম কীভাবে! আমার ভাগ্য ভালো- যুদ্ধ দেখেছি- নির্যাতিত হয়েছি না খেয়ে না নেয়ে থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। হৃদয়ে মুজিব অস্তিত্বে বাংলাদেশ সুমন রায়হান শব্দ ছায়ার গুঞ্জন উর্ধগামী বাতাসÑ দিনের আলোর মতো স্বচ্ছ রাত। বেদনার মেঘ উড়ে যায় দূরে... প্রচ্ছন্ন সুখের অসুখ! লাটিম সুতোর ঘূর্ণি... প্রিয় মা-মাতৃভূমি, জল-কাদা-মাটিÑ অঙ্গে জড়াই ভালোবাসার বৃষ্টি। কি সুখে কাঁদো? বেলেল্লাপনা বেড়ে গেছে বড়। সুতীব্র চুম্বন; মথিত আঙ্গুল। আঙ্গুলে ট্রিগার, মৃত্যুর মিছিল, বুকে যন্ত্রণার ছাপ! বিপন্নবাতাস দেয় অশনি সঙ্কেত; মাঠ কাঁদে, ঘাট কাঁদে, নদী কাঁদে, কাঁদে কাদাজল, দুঃখিনী মায়ের আর্তচিৎকারে নয়ন অশ্রু সজল... স্বদেশ মুক্তির প্রবোধ বুকে, অতঃপর স্বাধীনতার ঘোষণা... ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ তারপর শুধুই ইতিহাসÑ ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আমাদের নিজস্ব ভূমি। পৃথিবীর বুকে একটি মানচিত্র একান্তই আমাদের। লাল-সবুজের পতাকা আমাদের। সেই থেকে পরাধীনতার দিন শেষ; হৃদয়ে মুজিব, অস্তিত্বে বাংলাদেশ।
×