ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুড়ে মারা গেছে ৪৫ বেসামরিক সিরীয়

ভূ-গর্ভ শেল্টারে নাপাম বোমা হামলা

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৫ মার্চ ২০১৮

ভূ-গর্ভ শেল্টারে নাপাম বোমা হামলা

সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব গৌতার আরবিন শহরের একটি ভূ-গর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে সরকারী বাহিনীর বিমান হামলায় বহু লোক জীবন্ত পুড়ে মারা গেছে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। স্থানীয় সিরীয় সূত্র এবং হোয়াইট হেলমেটম নামে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী গ্রুপ সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স শুক্রবার জানায় আরবিন শহরের ভূ-গর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে সিরীয় বিমান বাহিনীর নাপাম গ্যাস হামলায় কমপক্ষে ৩৭ জন পুড়ে মারা গেছে। পূর্ব গৌতার মানবাধিকার কর্মী ইজ্জত মুসলিমানি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে আরবিন শহরের একটি ভূ-গর্ভস্থ শেল্টার লক্ষ্য করে সিরীয় বাহিনী বিমান হামলা চালায়। ওই শেল্টারে ১১৭ থেকে ১২৫ নারী-পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছিল। আরবিনে আবুল ইউসর নামে এক মানবাধিকার কর্মী ও সিটিজেন জার্নালিস্ট আল-জাজিরাকে জানান, ভূ-গর্ভস্থ শেল্টারে বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৪৫। তিনি জানান, দুটি শেল্টার লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়। একটি করিডরের মাধ্যমে শেল্টার দুটি সংযুক্ত ছিল। এই হামলায় একটি শেল্টার পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিরীয় বাহিনীর বিমান হামলায় একটি শেল্টারে বিস্ফোরণ ঘটলে এর মধ্যে আশ্রয় গ্রহণকারী সবাই প্রাণ হারায়। এই আগুন দ্বিতীয় শেল্টারেও ছড়িয়ে পড়লে তা পুরো আশ্রয় কেন্দ্রকে গ্রাস করে। এ সময় কিছু লোক দ্বিতীয় শেল্টারে আগুন থেকে প্রাণে রক্ষা পেলেও তারা মারাত্মকভাবে দগ্ধ হয়েছে। অগ্নিদগ্ধদের অস্থায়ী হাসপাতালে কোন রকমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু জরুরী সেবার অভাবে তাদের মধ্যে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। খবর আল-জাহের হাসুন নামে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত গৌতা ছিটমহলের আরেক মানবাধিকার কর্মী ভূ-গর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে সিরীয় সরকারী বাহিনীর বোমাবর্ষণের খবর নিশ্চিত করে জানান, বিমান থেকে নাপাম গ্যাস নিয়ে শেল্টারে হামলা করা হয়েছে। এটি হচ্ছে একটি দাহ্য তরল, যা যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়। এটি চামড়ার সংস্পর্শে এলে মারাত্মকভাবে ঝলসে যায়। আবু ইউমর জানান, সিরীয় বিমান বাহিনীর নাপাম গ্যাস হামলায় শেল্টারে আশ্রয় গ্রহণকারী নারী-পুরুষ ও শিশুর দেহ পুড়ে সম্পূর্ণ কয়লা হয়ে গেছে। ভূ-গর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে দেহাবশেষগুলো টেনে বের করার সময় এই বীভৎস দৃশ্য চোখে পড়ে। তিনি জানান, তাদের আরবিনের একটি গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। এ মাসের গোড়ার দিকে সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স জানায়, সিরীয় সরকারী বাহিনী আরবিন শহরে ক্লোরিন গ্যাস, ফসফরাস ও নাপাম গ্যাস নিয়ে হামলা চালায়। কয়েকদিন আগে রাসায়নিক হামলার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর সিরীয় সরকারী বাহিনীর সর্বশেষ এই হামলার কথা জানা গেল। ২০১৩ সাল থেকে পূর্ব গৌতাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে দেশব্যাপী বিদ্রোহ শুরু হওয়ার দুই বছরের মধ্যে পূর্ব গৌতা ছিটমহল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রুশ জঙ্গী বিমানের ছত্রছায়ায় সিরীয় সরকারী বাহিনী রাজধানী দামেস্কের পূর্ব দিকের এই ছিটমহলে হামলা জোরদার করার পর থেকে এখানে দেড় হাজারের বেশি বেসামরিক সিরীয় মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে অস্ত্র বিরতি কার্যকর হওয়ায় ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে পূর্ব আরবিন শহরের ভূ-গর্ভস্থ আশ্রয় কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়। এদিকে পূর্ব গৌতা ছিটমহল থেকে লোকজনকে অপসারণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় চুক্তি সম্পর্কিত হয়েছে। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সম্পাদিত এই অপসারণ চুক্তি শনিবার থেকে কার্যকর হবে। পূর্ব গৌতার একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী জানিয়েছে, তারা যোদ্ধা ও বেসামরিক নারী-পুরুষকে সরিয়ে নিতে সিরীয় সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৭ হাজার যোদ্ধা ও বেসামরিক সিরীয়কে বিরোধী গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের ইদলিব প্রদেশে নিয়ে যাওয়া হবে। ফাইলাক-আর রহমান গ্রুপ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সিরীয় সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। ফাইলাক-আর রহমান গ্রুপ হচ্ছে পূর্ব গৌতার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারা জানায়, রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সম্পাদিত এই চুক্তি অনুযায়ী অসুস্থ ও আহতদের অবিলম্বে ছিটমহল থেকে সরিয়ে নিতে দেয়া হবে। বিরোধী গোষ্ঠী যোদ্ধা ও আত্মীয়-স্বজনকে পূর্ব গৌতা ছাড়ার অনুমতি দেয়া হবে এবং সারা ছিটমহলে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়া হবে। এছাড়া পূর্ব গৌতার আরবিন জামালকা ইন তারমা এবং জোবার এলাকার ফাইলাক-আর রহমান গোষ্ঠী ও সিরীয় সরকারের মধ্যে বন্দীবিনিময় করা হবে। এসব এলাকায় রুশ মিলিটারি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সানা টেলিভিশনে সম্প্রচারিত খবরে জানায়, পূর্ব গৌতার ৭ হাজার বিদ্রোহী যোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের শনিবার গ্রিনিচমান সময় সকাল ৭টা থেকে অপসারণ শুরু হওয়ার কথা। -আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি
×