ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ার জনসমুদ্রে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ;###;উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট চাইলেন

আর উপেক্ষা নয় ॥ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২২ মার্চ ২০১৮

আর উপেক্ষা নয় ॥ বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ

হাসান নাসির/ বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া থেকে ॥ পটিয়ায় এসে পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে আলোড়ন সৃষ্টি করে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রামের পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের জনসভা রূপ নেয় বিশাল এক নির্বাচনী সমাবেশে। লাখো মানুষের সমুদ্রে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। এই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভোট দিয়ে আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছিলেন। এই আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও বাংলা ভাইয়ের দেশ হিসেবে পরিচিত করিয়েছিল। আমরা শান্তি চাই, উন্নয়ন চাই। সমাবেশে তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং মানুষের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে আবারও নৌকা প্রতীকে ভোট প্রত্যাশা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামসহ সারা দেশে পরিচালিত উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে এমন কোন এলাকা নেই, যেখানে উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে না। আমাদের কেউ আর দরিদ্র বলে উপেক্ষা করতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। এই দেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে। মানুষের আর্থসামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের প্রধান মহাসড়কগুলোকে চার লাইনে উন্নীত করেছি এবং করছি। চট্টগ্রামে মেরিন ড্রাইভ সড়ক করে দিচ্ছি। চট্টগ্রামে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করছি, এলএনজি টার্মিনাল করছি। দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠা করছি। সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, মানুষ চাকরি পাবে, বেকার সমস্যা সমাধান হবে। বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনের উল্লেখ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সময়ে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল। এর সঙ্গে ছিলেন খালেদা জিয়ার দুই ছেলে। দুর্নীতির মামলায় আদালতের রায়ে তার সাজা হয়েছে। তারা জনগণের অর্থ আত্মসাত করে বিদেশে পাচার করেছিল। আমাদের সরকার সিঙ্গাপুর থেকে জনগণের অর্থ ফিরিয়ে এনেছে। বেগম খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা) এতিমের সম্পদ লুট করেছেন। একটি টাকাও এতিমখানায় দেননি। পুরোটাই আত্মসাত করেছেন। এই মামলা আওয়ামী লীগ দেয়নি। মামলাটি দায়ের হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে। তখন ছিল ফখরুদ্দিন-মঈদ্দিনের সরকার। ওনারা তাদেরই (বিএনপি) লোক ছিলেন। কোর্ট বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে এই রায় দিয়েছে। তারা আইন মানবেন না, কিছুই করবেন না। আন্দোলনের নামে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত যতবার ক্ষমতায় ছিল প্রতিবারেই মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগে চালক ও হেলপার পুড়ে অঙ্গার হয়েছে। তাদের সময়ে দেশে জঙ্গী সৃষ্টি হয়েছে। অথচ বর্তমান সরকার দুই দুইবার ক্ষমতায় থেকে দেশব্যাপী দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ করেছে। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সেবামূলক কর্মকা-ের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মায়েদের জন্য আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি। দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার উন্নয়নে আমরা উপবৃত্তি চালু করেছি। দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উপবৃত্তির টাকা চলে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ২ লাখ ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি দিচ্ছি। অর্থের অভাবে যেন কারও লেখাপড়া বন্ধ না হয়ে যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বছরের প্রথম দিন ৩৫ কোটির অধিক বই বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে। শ্রেণী কক্ষে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। তা বাস্তবায়ন করেছি। সকলের হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। দেশে ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। আগে বছরের পর বছর সন্তানদের সাথে মায়ের দেখা হতো না। আজ মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন, সন্তানের চেহারা দেখতে পারেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ সুবিধার বিষয়ে বর্তমান সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যুদ্ধ না করলে এদেশ স্বাধীন হতো না, উন্নয়ন হতো না। সে কারণে তাদের ছেলে মেয়ে এবং নাতি-পুতিদের জন্যও চাকরির ব্যবস্থা রাখছি। পাশাপাশি তিনি দেশের সকল মেধাবী সন্তানদের চাকরির বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে বলে উল্লেখ করেন। বিএনপি-জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা গ্রামের পর গ্রাম পুড়ে ছারখার করে দিয়েছিল তাদের বিচার হচ্ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা ক্ষমতায় এসে সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়ে ছিলেন। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। যারা স্বাধীনতা চায়নি তারাই জাতির জনককে হত্যা করে দেশকে পিছিয়ে দেয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারেনি, দেশ আবার পিছিয়েছে। বিএনপি ভারতের কাছে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। দেশকে উন্নত এবং দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সরকার দরিদ্র, বিধবা, বয়স্ক সকলের জন্য ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে কেউ দরিদ্র থাকবে না। কোন মানুষ কুঁড়েঘরে বসবাস করবে না। যাদের ঘর নেই তাদের আমরা ঘর করে দেব। যাদের জমি নেই তাদের খাস জমি দেব। যাদের জায়গা আছে কিন্তু ঘর করার মত অবস্থা নেই তাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করব। এই চট্টগ্রাম থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল। দারিদ্র্য বিমোচনে পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অনেকগুলো ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার করেছি, চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেছি। বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার সুযোগ রেখেছি। কয়েকজন মিলে একটি ব্যবসা দাঁড় করালে সেখানে আরও ১০ জনের চাকরি হতে পারে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক করেছি। দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মানুষ পুড়ে হত্যা করেছে। এই চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে তারাই অপহরণ করে হত্যা করেছিল। বিএনপি শুধু আওয়ামী লীগকে নয়, তাদের লোককেও ছাড়েনি। জঙ্গীবাদ বিষয়ে সর্তক করে দিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সন্তান কাদের সঙ্গে মেশে, কিভাবে চলাফেরা করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কোন ছাত্র দিনের পর দিন অনুপস্থিত রয়েছে কিনা খোঁজ নিন। তিনি বলেন, নির্যাতন ও মানুষ হত্যা করে কেউ বেহেস্তে যেতে পারে না। মানুষ হত্যা করে দোজখে যেতে হবে। নিরীহ মানুষ হত্যার কথা কোন ধর্ম বলেনি। বিদ্যুত ক্ষেত্রে উন্নয়নের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন বিদ্যুতের উৎপাদন ছিল ১৬শ মেগাওয়াট। আমরা ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করেছি। ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুত উৎপাদন কমেছে। আমরা আবার ক্ষমতায় আসার পর ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। চট্টগ্রামের উন্নয়নে তার সরকারের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা-ের আওতায় দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে উন্নয়ন হয়েছে। আজ ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন এবং ২৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। জাতির পিতাকে হত্যার পর জীবন শঙ্কায় থাকার প্রসঙ্গ এনে তিনি বলেন, আমি আমার বাবা-মাকে হারিয়েছি। ভাই-ভাইয়ের বউ ও ফুফা-ফুফিকে হারিয়েছি। আমি এবং আমার বোন রেহেনা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। ৬ বছর আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। ১৯৮১ সালে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি করার পর জনগণের সমর্থনে আমি দেশে ফিরে এসেছি। আমার চাওয়া পাওয়া কিছু নেই। আমি চাই এদেশের মানুষের সুন্দর জীবন। জনগণ যাতে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেটি আমার চাওয়া। নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ভোটে আবার যদি ক্ষমতায় আসি তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন, দেশ উন্নত হবে। এসময় তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনবেন কিনা জানতে চাইলে হাত উঁচিয়ে সমর্থন জানায় লাখো জনতা। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আরও বক্তৃতা করেন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ ছালাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, মহিবুল হাসান নওফেল, এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন, পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশিদ প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, মাঈনুদ্দিন খান বাদল এমপি, এমএ লতিফ এমপি, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ড. আবু রেজা মোঃ নদভী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি। এই জনসভায় পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও নবসৃষ্ট কর্ণফুলী উপজেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। ৪২ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটিয়ার জনসভা থেকে চট্টগ্রামের ১৪ হাজার ৩২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরমধ্যে ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষে উদ্বোধন ও ২৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বাস্তবায়িত যে ১৪টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেÑ ৬৯৬ কোটি ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, এক কোটি ৯৫ লাখ টাকায় গণপূর্ত বিভাগের জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবন, ১১ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা ব্যয়ে কালুরঘাট-মনসারটেক জাতীয় মহাসড়কের মিলিটারি সেতু, ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়া-চন্দনাইশ-বৈলতলী সড়কের খোদারহাট সেতু, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদফতরের তিন কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল এ্যান্ড কলেজের ৫ তলা একাডেমিক ভবন, তিন কোটি ৫০ লাখ টাকায় হাজেরা-তজু ডিগ্রী কলেজের ৪তলা একাডেমিক ভবন, ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়া খলিল মীর ডিগ্রী কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পশ্চিম বাঁশখালী উপকূলীয় ডিগ্রী কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, দুই কোটি টাকা ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ফটিকছড়ি হেয়াকো বনানী কলেজ, দুই কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে রাঙ্গুনিয়া মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতকানিয়ায় কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীরবিক্রম কলেজের একাডেমিক ভবন, দুই কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে মীরসরাই প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের ৪ তলা একাডেমিক ভবন, ২৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নাজিরহাট মাইজভা-ার সড়ক এবং ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়া শেখ রাসেল ভাস্কর্য ও শেখ রাসেল স্মৃতি মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রী ২৮টি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সিডিএ’র তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, দুই হাজার ২৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ৫৫ হাজার ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তীরের কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ, ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনশ ৩৩ কোটি ৩৪ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে সাতকানিয়া লোহাগাড়া উপজেলার সাঙ্গু ও ডলু নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, ২৫৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বন্দরের কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত ড্রেজিং প্রকল্প, বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের এক হাজার ৯৯ কোটি ৬৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি বিদ্যুত উপকেন্দ্র নির্মাণ, দোহাজারি সওজের ২৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পটিয়ার কালারপোল-ওহিদিয়া সেতুস্থলে ১৮০ দশমিক ৩৭৩ কিলোমিটার সেতু নির্মাণ, ৭৯ কোটি ১৯ লাখ ১৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে কেরানিহাট-সাতকানিয়া-গুনাগরি মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন। চট্টগ্রাম সওজের অধীনে ১২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বড় তাকিয়া থেকে আবু তোরাব হয়ে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংযোগ সড়ক, ২৪৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-নারায়নহাট-ফটিকছড়ি আঞ্চলিক সড়কের প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২ কোটি ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয়ে পটিয়ার রাজঘাটা শ্রীমাই খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ, দুই কোটি ৫৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ফটিকছড়ির নাজিরহাট জিসি-কাজিরহাট জিসি সড়কে মন্দাকিনি খালের ওপর গার্ডার সেতু নির্মাণ, তিন কোটি ২৭ লাখ ১৪ হাজার টাকায় পটিয়া পিটিআইয়ের একাডেমিক ভবন নির্মাণ। শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকার সীতাকু- টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ ওয়ার্কশপের ৫তলা একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলশী সরকারী মহিলা কলেজের এক হাজার শয্যার ছাত্রীনিবাস, ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে আগ্রাবাদ মহিলা কলেজের ৫ তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ। ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে পোস্তারপার আছমা খাতুন সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের ৫ তলা ভবন নির্মাণ। গণপূর্ত বিভাগের চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্স স্থাপন। এলজিইডির অধীনে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকায় পটিয়া পৌরসভার মাল্টিপারপাস কিচেন মার্কেট নির্মাণ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পটিয়া হলিকালচার সেন্টার। জনসভা অভিমুখে জন¯্রােত ॥ পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জনসভার মূল কার্যক্রম বিকেলে শুরু হলেও সকাল ১০টার পর থেকেই মাঠ সংলগ্ন এলাকা ভরে যেতে শুরু করে। পটিয়া ছাড়াও দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং মহানগরী থেকে মিছিলসহকারে সমাবেশে যোগ দেন আওয়ামী এবং অঙ্গসংগঠনসমূহের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। সমাবেশ ঘিরে সৃষ্টি হয় নির্বাচনী আমেজ। ‘নৌকা নৌকা’ ¯েœাগানে প্রকম্পিত হয় মিছিল ও সমাবেশ। নেতাদের সমর্থনে রঙ-বেরঙের টি-শার্ট পরে শোডাউনে চেষ্টাও পরিলক্ষিত হয়। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে প্রবেশপথগুলো খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠ প্রায় ভরে যায়। বিকেল ৩টার দিকে কানায়কানায় পরিপূর্ণ হয় সমাবেশস্থল এবং আশপাশের অনন্ত দুই কিলোমিটার এলাকার সড়ক। সাধারণ মানুষ যেন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শুনতে পারেন সেজন্য পটিয়া পৌর এলাকায় দুই শতাধিক মাইক বাঁধা হয়। জনসভায় প্রবেশের জন্য ৪টি পথ রাখা হয়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবেশ পথে ছিল এসএসএফসহ নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর বলয়। নারীদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ রাখা হয়। মাথায় ক্যাপ পরে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সেøাগান দিয়ে নেতাকর্মীরা দলে দলে জনসভাস্থলে প্রবেশ করেন। জনসভাকে ঘিরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরকান মহাসড়কের পটিয়া ইন্দ্রপুল থেকে শুরু করে গিরিশ চৌধুরী বাজার এলাকা পর্যন্ত সকাল থেকে সকল প্রকার গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। মহানগরীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা দলের নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহনগুলো পটিয়ায় নির্মিত বাইপাস সড়ক পর্যন্ত এসে পার্কিংয়ে থাকে। সভাস্থল দূরে হওয়ায় তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক পায়ে হাঁটতে হয় জনসভায় যোগদানকারীদের। নেতার সমর্থনে শোডাউনের প্রতিযোগিতা ॥ প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার পটিয়ায় আগমনকে ঘিরে ব্যাপক উচ্ছ্বাস পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে। কেননা ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে অনেক এলেও প্রায় সকল জনসভাই হয়েছে নগরীতে। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে উদ্বেলিত হয় পটিয়াবাসী। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে শোডাউনের প্রতিযোগিতাও পরিলক্ষিত হয়। পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিজিএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির, পটিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ ছাড়াও তৃণমূল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন রঙের গেঞ্জি পরে মিছিল সহকারে যেতে দেখা গেছে। বেলা সাড়ে ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় জনসভার কার্যক্রম। পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠকে ঘিরে ছিল এসএসএফ, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র‌্যাবের কঠোর নিরাপত্তার বলয়। বিকল্প সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থল পটিয়া সদরে হওয়ায় দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে থমকে যেতে হয়। সকাল থেকেই চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবানমুখী যানবাহনগুলোকে চলতে হয় বিকল্প সড়কে। দূরপাল্লার গাড়িগুলোর জন্য গাছবাড়িয়া-বরকল-আনোয়ারা সড়ক নির্ধারণ করে দেয়া হয়। জনসভায় অনেক যানযাবহন আসে। সেগুলোকে থামতে হয় তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। চট্টগ্রাম মহানগর থেকেও বিপুল জনসমাগম হয়। কিন্তু কোন যানবাহনই জনসভার একেবারে কাছাকাছি যেতে পারেনি। জনসভাকে ঘিরে কয়েক কিলোমিটার সড়ক থাকে যানবাহনশূন্য। সেখানে শুধু দেখা যায় মিছিল আর মিছিল। এসকল মিছিলে বহন করা হয় ব্যানার আর ফেস্টুন। দিকে দিকে এক আওয়াজ ‘নৌকা নৌকা’। এ যেন এক নির্বাচনী সমাবেশ। পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামে নির্বাচনী হাওয়া ছড়িয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিপুলসংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ ॥ পটিয়ার জনসভায় বিশেষভাবে চোখে পড়েছে বিপুলসংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ। মহিলা আওয়ামী লীগ এবং নারী নেত্রীদের নেতৃত্বে অনেক নারী মিছিল গিয়ে মিলিত হয় পটিয়ার বিশাল জনসভায়। তাদেরও মুখে ছিল সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা-, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নির্বাচনী স্লোগান। নারীদের জন্য নির্ধারিত প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে তারা নির্ধারিত স্থানে গিয়ে অবস্থান নেন। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে মিছিল সহকারে জনসভায় যোগদানকারী নারীদের পরণেও ছিল একই রঙের বস্ত্র। প্রচ- গরমের মধ্যেও এই নারীদের সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতে দেখা যায়।
×