ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সোলায়মান মোহাম্মদ

ভাষার মিশ্রণ অশোভনীয়

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২২ মার্চ ২০১৮

ভাষার মিশ্রণ অশোভনীয়

‘জানই তো, কালকে টুয়েন্টি ফার্স্ট ফেব্রুয়ারি, সেলিব্রেট না করলে নয়। আফটার অল, এই দিনের আলাদা একটা ইম্পরট্যান্স আছে না? আরেহ, ইন দ্য ইয়ার নাইন্টিন সেভেন্টিওয়ান, এই দিনেই তো পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডার্কনাইটে আর্মস নিয়ে আমাদের মাম্মি ড্যাডিদের উপর এ্যাটাক করেছিল। রফিক , জব্বারসহ অনেকেই তাদের লাইফ সেক্রিফাইজ করেছিল...’ কথাগুলো এক মেধাবী বন্ধু ব্যঙ্গ করে তার ফেসবুকে লিখেছিল। কথাগুলো যে শতভাগ সত্য তা আমরা সবাই জানি। টিভি টকশোতে আলোচনার সময় এমন মিশ্রণ চলে অবিরাম। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে বাংলার সঙ্গে মিশিয়ে দু’চারটা ইংরেজী না ফাটালে নিজেদের আর এখন যোগ্যই মনে হয় না, এমন অবস্থায় আমরা দাঁড়িয়েছি। একজন বিখ্যাত মানুষের কথা না বলে পারছি না। খুব সম্ভবত ২০০৬ সালে বিশ^খ্যাত ফুটবল তারকা জিনেদিন জিদান বাংলাদেশে এসেছিলেন। গাজীপুরের মজলিশপুরেও তিনি একটি আয়োজনে উপস্থিত হয়েছিলেন। আমি তখন গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে ইংরেজী বিভাগে পড়ি। পাশেই একটি ছাত্রাবাসে থাকি। সংবাদ পেয়ে মজলিশপুর যেয়ে দেখি হাজার মানুষের ঢল, কৃষকের পাকা ধান ক্ষেতের বারোটা বাজিয়ে মানুষজন উপচে পড়ছে এক নজর ফুটবলের এই জাদুকরকে দেখতে। আমরা পুলিশের বাধা ডিঙ্গিয়ে জিদানের মুখোমুখী হতে পেরেছিলাম। কথা বলার সৌভাগ্যও হয়েছিল। অবাক করা বিষয় হলো আমি ইংরেজীতে প্রশ্ন করলেও তিনি একটি প্রশ্নের জবাবও ইংরেজীতে দেননি। তিনি ফরাসী ভাষায় কথা বলেছিলেন কিন্তু তাঁর লোক ইংরেজীতে অনুবাদ করে দিয়েছিলেন। একপর্যায়ে ইংরেজী না বলার কারণ জিজ্ঞেস করাতে তার ব্যক্তিগত সহযোগী উত্তর দিল জিদান সচরাচর মাতৃভাষা রেখে অন্য ভাষা ব্যবহার করেন না। এমনকি খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষা একেবারেই বলেন না। এই হলো একজন বিশ^খ্যাত তারকার মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা। আর আমাদের নতুন প্রজন্ম ভুলে যাচ্ছে ১৩৫৮ সালের ৮ ফাল্গুন (২১ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র ও প্রগতিশীল মানুষের উপর পুলিশের গুলিবর্ষণের সেই ইতিহাস। আমরা ভুলে যেতে বসছি আমাদের মাতৃভাষা আন্দোলনের বিশেষ একটি দিন ২১ ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। অতি সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণকে বিশে^র গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সুতরাং ভাষা নিয়ে যদি গর্ব করতে হয় তাহলে বাংলা ভাষা নিয়ে বিশে^ শুধু আমরাই গর্ব করতে পারি। শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে
×