ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে একবাক্যে কথা বলতে হবে ॥ ইনু

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১৬ মার্চ ২০১৮

রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে একবাক্যে কথা বলতে হবে ॥ ইনু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ধর্মকে যেমন ক্ষতি করছে, তেমনি রাজনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। রাজনীতি থেকে ধর্মের ব্যবহার বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে একবাক্যে কথা বলা উচিত। শুধু তাই নয়, ধর্মের নামেই দেশে জঙ্গীবাদের বিস্তার হচ্ছে। জঙ্গীবাদ ও হেফাজতকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়াও অনৈতিক কাজ। যারা জঙ্গীবাদ ও হেফাজতকে সমর্থন করছে সেই বিএনপিকেও রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে হবে উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদী লেখক জাফর ইকবাল হত্যা প্রচেষ্টা : ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে বাধা কোথায় শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির রাজনীতি দেশের জন্য বিষবৃক্ষ। এরা জঙ্গীবাদ উৎপাদন করে। রাজাকার আমদানি করে। শুধু জঙ্গীবাদ দমনই নয়, বিষবৃক্ষের মূলোৎপাটন ছাড়া দেশ থেকে জঙ্গীবাদ দমন করা সম্ভব হবে না। তাই সবাই বিএনপির রাজনীতি বর্জনের আহ্বান জানাতে হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের অধিকার সবাই পান না। কেবল তারাই এই অধিকার ভোগ করবেন যারা গণতন্ত্রের রীতিনীতি মানবেন। রাজনীতি থেকে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। দেশের যাত্রাও শুরু হয়েছিল সেইভাবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পর সংবিধান থেকে সেই ধারা তুলে দেয়া হয়েছে। এই দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন জেনারেল জিয়া। তিনি ক্ষমতায় গিয়ে সংবিধান পরিবর্তন করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূচনা করেন। শুধু তাই নয় আরও অপরাধ তিনি করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে তিনিই প্রথম রাজাকারদের দেশে পুনর্বাসন শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনীদের আইনের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের নামে আংশিক গণতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র এবং ধর্মতন্ত্র চর্চার নামে দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবাষ্প রচনার করেন। এর ফলে আমরা বারবার নানা ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। কিন্তু শেখ হাসিনা এই অবস্থান থেকে দেশকে বের করে আনার চেষ্টা করছেন। এখনো সেই পথ পাড়ি দিচ্ছেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অনেকটা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথে রয়েছেন। কিন্তু এখনো সব জঞ্জাল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। অসাম্প্রদায়িকতার পথে কেবল দেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। কিন্তু অসাম্প্রদায়িকতার যাওয়া পথে সংবিধানে এখনও মানবতাবিরোধী ধারাগুলো রয়েছে তা বিলুপ্ত করতে হবে। কিন্তু সংবিানে এখনও অনেক জঞ্জাল থাকলেও ব্যবহারিক দিক দিয়ে শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক সমাজ নির্মাণের পথে রয়েছেন। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রাজনীতিরেত ধর্মের ব্যবহার বন্ধ হলে জঙ্গীবাদের বিকাশ বন্ধ হয়ে যাবে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছে। তা সত্ত্বেও জঙ্গিবাদের বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণ শেকড় রয়েছে দেশের বাইরে। ফলে জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করার পথ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এজন্য সামাজিকভাবে সবাইকে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। যারা সমাজে জঙ্গীবাদের পৃষ্ঠপোষক তাদের সঙ্গে কোন প্রকার সমঝোতা করা যাবে না। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপত্তি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, লেখক জাফর ইকবালের প্রতি হামলার ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। ’১৩ সালে হেফাজতের উত্থানের পর এখন পর্যন্ত ১৪ জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচার এখনো হয়নি। ’৭১ সালে যেভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল এখনো দেশে সেই ধরনের ফতোয়া বলবত রয়েছে। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গীবাদ নির্মূলে অনেকটা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু জঙ্গীবাদের দর্শন বহাল তবিয়তে রয়েছে। এটি নিষিদ্ধ করতে হবে। নিষিদ্ধ না করলে ধর্মের নামে হত্যাকা- বন্ধ করা যাবে না। জামায়াত হেফাজত বহাল তবিয়তে রাজনীতি করছে। সরকারও তাদের সঙ্গে আপোষ করছে। কিন্তু এই সমঝোতা করে দেশে বুদ্ধিজীবীদের নিরাপদ রাখা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হলে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। অনুষ্ঠানে আলোচনাকালে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, দেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে গেলেও শিক্ষা সংস্কৃতিতে পিছিয়ে আছে। দেশে বহু ধরনের শিক্ষাপদ্ধতি চালু রয়েছে। এক মাদ্রাসা ব্যবস্থাতেই ৪ ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি চালু রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ার কারণেই মুক্তমনারা আক্রান্ত হচ্ছে। হেফাজত দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করে। সরকার তাদের সঙ্গে আপোষ করে। ভোটের রাজনীতির জন্য যদি সরকার এদের সঙ্গে আপোষ করে তাহলে অন্য দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পার্থক্য কোথায় থাকে উল্লেখ করেন।
×