ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ব গৌতায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১২ মার্চ ২০১৮

পূর্ব গৌতায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

সিরিয়ার সরকারী বাহিনী রবিবার পূর্ব গৌতার অবরুদ্ধ বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ লড়াই অব্যাহত রাখে। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহরটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার একদিন পর এই লড়াই চলে। ২০দিনের হামলায় সেখানে বেসামরিক লোক নিহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে। এএফপি। সিরিয়ার সরকারী বাহিনী ও সহযোগী মিলিশিয়ারা ইস্টার্ন গৌতায় তাদের সামরিক অভিযান ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অব্যাহত রেখেছে এবং অর্ধেকের বেশি এলাকার লোকজনকে উচ্ছেদ করেছে। গৌতায় সহিংসতা বন্ধের বৈশ্বিক আহ্বানকে পাশ কাটিয়ে সেখানে সংঘাত এখনও চলছে। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানায়, বিভাজক ও বিজয় কৌশল অনুসরণে হামলাটি শুরু হলেও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাটি ক্রমেই ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছিল। সরকারী বাহিনী শনিবারই গৌতার প্রধান শহর দুমার অবরুদ্ধ বিদ্রোহীদের সফলভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে সক্ষম হয়। তারা দুমার সঙ্গে যুক্ত হারাসতা শহরের সংযোগ সড়কটি কেটে ফেলে। পাশাপাশি মিসরাবা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, আসাদ বাহিনী এখন বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ভূখ-গুলো অধিকার করার জন্য শক্তি প্রয়োগের নীতি অনুসরণ করছে। শনিবার টানা বোমাবর্ষণে দুমা শহরটি ধ্বংসস্তূপের আকার ধারণ করে। অবজারভেটরির হিসেবে ২০ দিনের হামলায় ১ হাজার ৩১ জন বেসামরিক লোক নিহত ও ৪ হাজার ৩৫০ জন আহত হয়েছে। হতাহতের একটা বড় অংশই শিশু কিশোর। জানা গেছে বিদ্রোহীরাও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করছে কিন্তু তারা সরকারী বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠছে না। ২০১২ সালে পূর্ব গৌতা বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার পর থেকে এলাকাটি প্রায় সবসময়ই ঘিরে রেখেছিল আসাদ বাহিনী। আসাদের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘মানবিকতার দিক বিবেচনা করে করিডরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছিল। যাতে যে কেউ চাইলে নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে পারে। তবে অনেকেই তার সদ্ব্যবহার করেনি। সরকারী বাহিনীর সমর্থনে রাশিয়া সোমবার আদেশ দেয় প্রতিদিন মানবিকতার কথা চিন্তা করে এলাকাটি তারা এড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি বেসামরিক লোকদের নিশ্চয়তা দেয়া হয় যাতে তারা নিরাপদে এলাকাটি ব্যবহার করে চলাচল করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দ্রুত অস্ত্রবিরতি প্রস্তাব পাস করলেও রাশিয়ার গড়িমসির কারণে তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। গত সাত বছরের এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ অবসানেরও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এর মধ্যেই জাতিসংঘ সেখানে ৪০টি ত্রাণবাহী ট্রাক পাঠায়। অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়ায় ত্রাণ সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এর ফলে সেখানে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস পরিস্থিতিকে ‘ভূপৃষ্ঠের ওপর নরক’ বলেও অভিহিত করেন। সাময়িক অস্ত্রবিরতি অবরুদ্ধ লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। অনেকে বাসভবনের বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ খাদ্য সংগ্রহ করতে বাইরে যাচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সোমবার সাময়িক অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেন যা মঙ্গলবার আংশিক সময়ের জন্য কার্যকর ছিল। ২০১৬ সালে আলেপ্পো লড়াই চলাকালেও রুশ ও সিরীয় সরকারকে অনুরূপ কৌশল অবলম্বন করতে দেখা গিয়েছিল। রুশ বাহিনী বলেছে মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার জন্য দামেস্কের সহযোগিতায় অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার সেন্টার ফর রিকন্সিলিয়েশন অব অপোজিং সাইডসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, বিরতির মধ্যেও সিরিয়ার সরকারী বাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। জায়েশ আল ইসলাম ও ফাইলাক আল রহমান নামে বিদ্রোহীদের দুটি গ্রুপ এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করছে। উভয় গ্রুপই ইসলামপন্থী, ২০১৩ সালে গ্রুপ দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গত মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় গ্রুপ দুটি অংশ নিয়েছিল।
×