ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতি আজ ভারত ও প্রধানমন্ত্রী ১১ মার্চ সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন

সিঙ্গাপুরে শেখ হাসিনার নামে অর্কিডের নামকরণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১১, ৮ মার্চ ২০১৮

 সিঙ্গাপুরে শেখ হাসিনার নামে অর্কিডের নামকরণ হচ্ছে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আজ বৃহস্পতিবার ভারত সফরে যাচ্ছেন। তিনি ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল সোলার এ্যালায়েন্স সামিটে যোগ দেবেন। এদিকে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের আমন্ত্রণে আগামী ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুর যাবেন। সেখানে তার নামে বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটা অর্কিডের নামকরণ করা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে এ তথ্য জানান। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ভারত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিঙ্গাপুর সফর অবহিত করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ছাড়াও পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৮-১২ মার্চ ভারতে সরকারী সফর করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। সফরকালে তিনি আগামী ১১ মার্চ ভারত ও ফ্রান্সের যৌথ উদ্যোগে ভারতের নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিতব্য ইন্টারন্যাশনাল সোলার এ্যালায়েন্স সামিটে যোগ দেবেন। এ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক সৌর জোটের প্রায় ২৩টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং ৯টি দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। সম্মেলন শেষে অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হবে। রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুত বিভাগের উর্ধতন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ভারত সফরকালে রাষ্ট্রপতি অসম ও মেঘালয় রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করবেন। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সে সময়ে মেঘালয়ের গুমাঘাট, মৈলাম ও বালাত অঞ্চলে পৌঁছে সেসব স্থানে আশ্রয় গ্রহণকারী বাংলাদেশী তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ ও সংগঠিত করেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণেচ্ছু এসব তরুণদের জন্য বালাতে ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্প গঠন করে এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকট প্রতিবেশী এবং বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সরকার ও জনগণ আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। সে সময়ে নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের সন্ধানে এদেশের প্রায় দশ লক্ষ বাস্তুহারা মানুষ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মেঘালয় ও অসম রাজ্যে আশ্রয় নেয়। মাহমুদ আলী জানান, আগামী ১১ মার্চ নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সোলার সামিটের শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ভারতের রাষ্ট্রপতি, ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে পারেন। এছাড়া ভারতের অসম ও মেঘালয় সফরকালে রাজ্যদ্বয়ের গবর্নরদ্বয়ের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাতের কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সফরসঙ্গীরা বৃহস্পতিবার ঢাকা ত্যাগ করবেন। সফর শেষে আগামী ১২ মার্চ বাংলাদেশে ফিরে আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি অর্কিডের নামকরণ হচ্ছে। আসন্ন সিঙ্গাপুর সফরে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ওই বোটানিক্যাল গার্ডেনও পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লোংয়ের আমন্ত্রণে আগামী ১১ মার্চ চারদিনের এই সফরে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। এই সফরে তিনি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরের সময় তার সম্মানে তার নামে দেশটির বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি অর্কিডের নামকরণ করা হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও সিঙ্গাপুরের ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজের মধ্যে একটি সমঝোতা, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক, আকাশ পথে যোগাযোগ, ডিজিটাল গবর্নমেন্ট ট্রান্সফর্মেশন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং এফবিসিসিআই ও এমসিসিআইয়ের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ম্যানুফ্যাকচারিং ফেডারেশনের দুটি সমঝোতা স্মারক। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিঙ্গাপুর বর্তমানে আসিয়ানের নেতৃত্বে রয়েছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এই সফর রাজনৈতিক দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে সিঙ্গাপুর সরকারের সহযোগিতা চাইবেন। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, শেখ হাসিনার সিঙ্গাপুর সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তিনি এ সফরে সিঙ্গাপুরের নির্বাচিত প্রথম মহিলা মুসলিম রাষ্ট্রপতি হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এছাড়া শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়। গত চার দশকের বেশি সময় ধরে এ সম্পর্ক গভীরতর হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী খাতে সহযোগিতার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হচ্ছে। সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। সম্প্রতি সিঙ্গাপুর হতে জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে। উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে পরস্পরকে সহায়তা ও সমর্থন করে আসছে। আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরসূচীতে প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতসহ উভয় দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠন আয়োজিত বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস ফোরাম ও বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর বিজনেস রাউন্ড টেবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাণিজ্যিক সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানসমূহে প্রধানমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করবেন। তিনি আগামী ১২ মার্চ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে তাঁর সম্মানে আয়োজিত একটি মধ্যাহ্নভোজে অংশগ্রহণ করবেন। সফরকালে তিনি সিঙ্গাপুর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে তাঁর নামে সিঙ্গাপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটি অর্কিড নামকরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উভয় দেশের মধ্যে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, বেসামরিক বিমান চলাচলসহ বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখবে। রাজনৈতিক দিক থেকে এ সফর আসিয়ানের ‘সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্যোগের পক্ষে সিঙ্গাপুরের সমর্থন লাভ সহজতর করবে। এছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে উভয় দেশ মতবিনিময় করবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতা বৃদ্ধির সরকারের নীতির আলোকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীরতর করা এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি। চারদিনের সফর শেষে শেখ হাসিনার ১৪ মার্চ দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
×