ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কিন রফতানি কোটি কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়বে ॥ কানাডা, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের হুঁশিয়ারি

পাল্টা ব্যবস্থা বাণিজ্য সহযোগীদের

প্রকাশিত: ০৪:০১, ৪ মার্চ ২০১৮

পাল্টা ব্যবস্থা বাণিজ্য সহযোগীদের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলো থেকে এ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাত আমদানির ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার একদিন পরই তারা পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেন্টাকি বুরবোঁ, ব্লু জিন্স ও হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেলসহ পাঁচটি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হবে ঘোষণা করেছে। খবর- নিউইয়র্ক টাইমস। ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন যে, ইস্পাতের তৈরি বিদেশী পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ ও এ্যালুমিনিয়াম সামগ্রীর ওপর ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্পের মতে, এই অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে মার্কিন ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম কোম্পানিগুলো এর সুফল ভোগ করবে। ট্রাম্পের এই ঘোষণায় সেদেশের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম কোম্পানিগুলো উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন জানিয়েছে। তারা ছাড়াও শ্রমিক ইউনিয়ন ও কোন কোন ডেমোক্র্যাট সদস্যও ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ইস্পাত পণ্যের ওপর ট্রাম্পের এই বর্ধিত বাণিজ্য শুল্ক আরোপের আরেকটি কারণ হতে পারে যে, মার্কিন ইস্পাত শিল্পগুলোর অনেকগুলোই ট্রাম্পের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত। এর মাধ্যমে ট্রাম্প তার এলাকার স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য যে নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছিলেন তার বাস্তবায়ন হলো। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলো যদি পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন পণ্যের ওপর বর্ধিত হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করে তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাজারে যেমন প্রভাব ফেলবে তেমনি এর সুদূর প্রসারী মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ও দৃষ্টি গোচর হবে। যেমন, কানাডা ও মেক্সিকো মার্কিন বাণিজ্য সহযোগী দেশের তালিকায় যথাক্রমে এক ও তিন নম্বরে আছে। ২০১৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশ দুটি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি পণ্যের বৃহত্তম বাজার। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় গরুর গোশত কৃষিপণ্য, শূকরের মাংস ও তাজা ফল রফতানি করা হয়। বাণিজ্য সহযোগী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কে তুলা এবং ব্রাজিলে গম ও দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি করে থাকে। এ প্রসঙ্গে টেক্সাসের সিনেটর জন করনিন তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইস্পাত ও এ্যালুুমিনিয়ামের ওপর বর্ধিত আমদানি শুল্ক আরোপের ফলে যদি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসব দেশ মার্কিন কৃষি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে তবে তা মার্কিন কৃষি পণ্য ও খামারিদের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হবে। শুধু সিনেটর করনিন নন, মার্কিন কৃষিজাত দ্রব্যের সাবেক মুখ্য আলোচক ডারসি ভেটের বলেন, শুল্ক আরোপ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও অন্য দেশের পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার সম্ভাবনা, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিজীবী সম্প্রদায়কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল হার্লে ডেভিডসনের ওপর এর আমদানিকারক দেশগুলো যদি উচ্চ হারে আমদানি শুল্ক ধার্য করে তবে নিঃসন্দেহে তা এই কোম্পানির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে যে, এই মোটরসাইকেল কোম্পানিটি রিপাবলিকান স্পীকার পল রায়ানের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত। তাই এর অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কিছুটা প্রভাব পল রায়ানের রাজনীতির ওপরও পড়তে পারে। তেমনি অরেঞ্জ জুস কোম্পানিও এই রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশের বাইরে নয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি রাজ্যের অত্যন্ত দামী ও দেশে-বিদেশে সুপরিচিত মদ কেন্টাকি বুরবোঁর ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হলে, তা সে রাজ্যের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাক কোনেলের জনপ্রিয়তায় বিরূপ প্রভাব ফেলা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, ট্রাম্পের ইস্পাত ও এ্যালুমিনিয়াম শিল্পের ওপর বাড়তি আমদানি শুল্ক ধার্য করার সিদ্ধান্তে কানাডা, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, এর মোকাবেলায় তারা এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে যাতে মার্কিন রফতানি বাণিজ্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কানাডার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাফটা চুক্তির (১৯৯০) অন্যতম মধ্যস্থতাকারী জন এম উইকেস বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই সিদ্ধান্ত কানাডাবাসীদের মনে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীনের লোহা ও ইস্পাত শিল্প সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান লি শিন চুয়াং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে ‘মূর্খতা’ বলে অভিহিত করে বলেন, এর ফলে মুষ্টিমেয় কিছু শিল্প উদ্যোক্তা ছাড়া আর কারও লাভ হবে না।
×