ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্রবিরতি সত্ত্বে¡ও ॥ গৌতা ছাড়ছে না কেউ

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ মার্চ ২০১৮

অস্ত্রবিরতি সত্ত্বে¡ও ॥ গৌতা ছাড়ছে না কেউ

সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় গৌতায় অস্ত্রবিরতি দেয়ার পরও লোকজন এলাকা ছাড়তে অস্বীকার করেছে। অস্ত্রবিরতি নিয়ে দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপগুলো ও রাশিয়া একে অপরকে দোষারপ করছে। খবর এএফপি। অস্ত্রবিরতি সত্ত্বেও লোকজন এলাকা ছাড়ছে না। পূর্ব গৌতায় ১০ দিনে বিমান হামলা ও সংঘর্ষে ছয় শ’ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এরপর মস্কোর পক্ষ থেকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার জন্য বোমা হামলা বন্ধ রাখা হয়। বুধবার রাতে সরকারীবাহিনীর সরবরাহ করা গাড়িতে করে এলাকাটির চার লাখ লোক পালিয়ে গেছে। সাংবাদিকরা সেখানকার ওয়াফিদিন ছাউনিতে এলাকাটি ছেড়ে যাওয়ার মতো কোন গাড়িকে সেখানে দেখতে পাননি। ২০১২ সালে পূর্ব গৌতায় সরকারীবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হারানের পর থেকে এলাকাটি প্রায় সবসময়ই ঘিরে রেখেছিল আসাদবাহিনী। চেকপয়েন্টের এক সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মানবিকতার দিক বিবেচনা করে করিডরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। যাতে যে কেউ চাইলে নিজেদের এলাকায় ফিরে যেতে পারে। তবে তা সত্ত্বেও দ্বিতীয় দিনে সেখানে কেউই আসেনি। সরকারীবাহিনীর সমর্থনে রাশিয়া সোমবার আদেশ দেয় প্রতিদিন মানবিকতার কথা চিন্তা করে এলাকাটি তারা এড়িয়ে যাবে। পাশাপাশি বেসামরিক লোকদের নিশ্চয়তা দেয়া হয় যাতে তারা নিরাপদে এলাকাটি ব্যবহার করে চলাচল করে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি ভোটাভুটি করতে খুব কমই সময় লেগেছিল। সিরিয়ায় গত সাত বছরের এক রক্তক্ষয়ী হামলার পর এই যুদ্ধবিরতিকে সব পক্ষই স্বাগত জানিয়েছিল। এই পদক্ষেপ নেয়া সত্ত্বেও শনিবার জাতিসংঘ সব পক্ষকেই ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে জোরালো আহ্বান জানায় এবং ৪০টি ত্রাণবাহী ট্রাককে সংঘর্ষ কবলিত এলাকায় যেতে দিতে বলে। অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়ায় অবরুদ্ধ এলাকাটিতে কোন ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না বা সেখান থেকে কারও নিরাপদে বেরিয়ে আসার সুযোগও আর থাকছে না। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকাটিতে চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে সিরিয়ার সরকারী ও রুশবাহিনী বিমান স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সেখানে ভয়াবহ মানবিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস পরিস্থিতিকে ‘ভূ-পৃষ্ঠের ওপর নরক’ বলে অভিহিত করেছেন। সাময়িক অস্ত্রবিরতি অবরুদ্ধ লোকজনকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। অনেকে বাসভবনের বেজমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ খাদ্য সংগ্রহ করতে বাইরে যাচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সোমবার সাময়িক অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেন যা মঙ্গলবার আংশিক সময়ের জন্য কার্যকর ছিল। এর আগে শনিবার নিরাপত্তা পরিষদ অবরুদ্ধ ও আহত লোকজনের কাছে জরুরী ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ দিতে ৩০ দিনের অস্ত্রবিরতির একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস করে। অস্ত্রবিরতি হলেও শাসক বাশার আল আসাদের অনুগত ও রুশবাহিনী হামলা অব্যাহত রাখে। সিরিয়ার সরকারীবাহিনী স্বল্পস্থায়ী অস্ত্রবিরতি চলাকালে সাধারণ লোকজনকে এলাকা ছাড়ার সুবিধার্থে আলওয়াফিদিন চেকপোস্টে বেশ কয়েকটি বাস তৈরি রাখে। এসব বাসের দু’পাশে শাসক বাশার আল আসাদ ও পুতিনের ছবি বড় করে সাঁটানো ছিল। তবে সাধারণ অবরুদ্ধ লোকজনকে ওই বাসগুলোতে উঠতে দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে আলেপ্পো লড়াই চলাকালেও রুশ ও সিরীয় সরকারকে অনুরূপ কৌশল অবলম্বন করতে দেখা গিয়েছিল। রুশবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে মানবিক করিডর প্রতিষ্ঠার জন্য দামেস্কের সহযোগিতায় অস্ত্রবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার সেন্টার ফর রিকন্সিলিয়েশন অব অপোজিং সাইডসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে যে, বিরতির মধ্যেও সিরিয়ার সরকারীবাহিনী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখবে। জায়েশ আল ইসলাম ও ফাইলাক আল রহমান নামে বিদ্রোহীদের দুটি গ্রুপ এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করছে। উভয় গ্রুপই ইসলামপন্থী, ২০১৩ সালে গ্রুপ দুটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গত মাসের শেষের দিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে কাজাখস্তানের রাজধানী অস্তানায় অনুষ্ঠিত শান্তি আলোচনায় গ্রুপ দুটি অংশ নিয়েছিল।
×