ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মার্চ ও এপ্রিলে চলবে

চালের মজুদে রেকর্ড, রবিবার থেকে ওএমএস

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২ মার্চ ২০১৮

চালের মজুদে রেকর্ড, রবিবার থেকে ওএমএস

তপন বিশ্বাস ॥ নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে সরকারের খাদ্য মজুদ এখন রেকর্ড পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এই মজুদ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। জুনে মোট মজুদ ১৮ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে সর্বোচ্চ মজুদ ছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে ১৬ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। এবার আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১ মার্চ থেকে আবার ১০ টাকা কেজি দরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। এছাড়া চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে রবিবার (৪ মার্চ) থেকে সারাদেশে ওএমএস চালু করা হচ্ছে বলে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন। খাদ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে বলেন, চালের বাজারে প্রভাব ফেলার লক্ষ্যে রবিবার থেকে সারাদেশে ওএমএস কর্মসূচী চালু করা হবে। দেশের সকল জেলা শহরে ওএমএসের মাধ্যমে চাল-আটা বিক্রি করা হবে। এতে একজন ডিলার প্রতিদিন এক টন করে চাল বিক্রির সুযোগ পাবেন। এই কর্মসূচীর আওতায় মাসে খরচ হবে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। তিনি বলেন, ১ মার্চ থেকে আবার শুরু হয়েছে ১০ টাকা কেজিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী। এতে দেশের মোট ৫০ লাখ পরিবার মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। এই কর্মসূচীর আওতায় মাসে দেড় লাখ মেট্রিক টন চাল খরচ হবে। প্রাথমিকভাবে মার্চ ও এপ্রিল এই দুই মাসে এ কর্মসূচী চালানো হবে। পরিস্থিতির আলোকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের কোষাগারে দেশে বর্তমানে মোট খাদ্য মজুদ রয়েছে প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চালের মজুদ রয়েছে প্রায় সোয় ১১ লাখ মেট্রিক টন। জুনের মধ্যে চালের মজুদ দাঁড়াবে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করবে। গমের মজুদ আর না বাড়লেও এর সঙ্গে যে সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন গম রয়েছে, তা নিয়ে মোট মজুদ দাঁড়াবে সাড়ে ১৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশে খাদ্য মজুদে এটি নতুন রেকর্ড গড়বে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ১ মার্চ খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে দেশে বর্তমানে মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৮০ হাজার ৩৭১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার ৪৮২ মেট্রিক টন এবং গম ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮৮৯ মেট্রিক টন। বিগত ডিসেম্বরে তৎকালীন খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেছিলেন, জানুয়ারিতে মজুদ খাদ্যের পরিমাণ ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে এবং জুনে ১৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে। ইতোমধ্যে মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। জুনে মজুদ ১৮ লাখ মেট্রিক টনে ছাড়িয়ে যেতে পারে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের মজুদ ৮ লাখ মেট্রিক টন থাকতে হবে। এই পরিমাণ খাদ্য মজুদ থাকলে তা সন্তোষজনক বলে ধরা হয়। বর্তমানে মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নিত হয়েছে। খাদ্য মজুদে নতুন রেকর্ড হবে। এবার আমন সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হয়েছে। আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ৩ লাখ মেট্রিক টন আমন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরবর্তীতে তা আরও ৩ লাখ বাড়িয়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে মধ্যে ৬ লাখ মেট্রিক টন আমন সংগ্রহ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী ৩৯ টাকা দরে এ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সংগ্রহ অভিযান চলে ২৮ ফেব্রুয়ারি-২০১৮ পর্যন্ত। এবার প্রতি কেজি আমন চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৩৭ টাকা। গত বছর ৩৩ টাকা দরে ৩ লাখ মে. টন চাল সংগ্রহ করে সরকার। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে সংগ্রহ অভিযান ১৫ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত চলে। সে বছর প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছিল ২৯ টাকা। সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মোট খাদ্য মজুদের ধারণক্ষমতা রয়েছে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে চালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। সরকারী তথ্যমতে ঢাকার বাজারে খাদ্যশস্যের বর্তমান খুচরা বাজার মূল্য সরু চাল ৫৭ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি চাল ৪৬ থেকে ৫৬ টাকা। মোটা চাল ৪১ থেকে ৪৩ টাকা। আর খোলা আটার মূল্য ২৬ থেকে ২৮ টাকা। হাওড় এলাকায় আগাম বন্যা আসা, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে বোরো ফসল ঘাটতি হওয়ায়, চাল আমদানিতে শুল্কারোপ করার সিদ্ধান্তে সরকারে মজুদ প্রায় তলানীতে নেমে আসে। মজুদ কমে যাওয়ায় মেয়াদের শেষ দিকে এ সুযোগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছিল একটি গোষ্ঠী উঠে পড়ে লাগে। সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। চাল আমদানিতে শুল্ক তুলে দেয়ার পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির কারণে ক্রমান্বয়ে সরকারের মজুদ বাড়তে থাকে। বর্তমানে এই মজুদ পরিস্থিতির শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে। আগামী জুনে এটি একটি নতুন রেকর্ড় গড়তে যাচ্ছে।
×