ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

অবশেষে আলোর মুখ দেখছে বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও সামগ্রিকভাবে দেশের বীমা খাত এখনও অবহেলিত। অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিরসনের ক্ষেত্রে বীমা খাত গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশে এ খাতের প্রসার ঘটেনি। বীমা খাতকে যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আইনী সংস্কার শুরু করেছে। এর অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ‘বাংলাদেশের বীমা খাত উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ বাড়ানো হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আজকের সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। সোমবার পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ বীমা একাডেমির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা হবে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বীমা কর্পোরেশনগুলোকে শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা হবে। ফলে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নে বীমা খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সার্বিক অটোমেশনের জন্য প্রয়োজনীয় আইসিটি সুবিধা তৈরি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সৃষ্টি করা। এছাড়া বীমা একাডেমির প্রশিক্ষণ সুবিধা বাড়ানো ও আধুনিকায়ন করা হবে। বীমা সেবা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, বীমা খাতে ঝুঁকিভিত্তিক তত্ত্বাবধান পদ্ধতি প্রবর্তন, বীমা তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরামর্শক সেবা সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন সম্পদ সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দেশের সামগ্রিক ও টেকসই উন্নয়নে বীমা খাতের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদারকি ও নজরদারি আরও কার্যকরভাবে পালন করা প্রয়োজন। এছাড়া বীমা খাত তত্ত্বাবধানে সক্ষমতা অর্জন ও সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য অধিকতর উপযোগী নীতি ও পদ্ধতি প্রবর্তন করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে বীমা খাতের কর্মকা-ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, প্রশিক্ষিত জনবল উন্নয়ন ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি এবং এ খাতে মানুষের আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাধারণ বীমা এবং জীবন বীমা কর্পোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও কার্যকারিতা আরও বাড়ানো দরকার। এসব বিবেচনা করে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা কর্পোরেশন ও জীবন বীমা কর্পোরেশনসহ দেশে বর্তমানে মোট ৭৭টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথমে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প হিসেবে ‘বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এ্যান্ড প্রাইভেট পেনশন মার্কেট ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটির খসড়া তৈরি করা হয়। এর ওপর ২০১৬ সালের ২২ মে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয় পরিকল্পনা কমিশনে। ওই সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য কারিগরি প্রকল্প না নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করতে পরামর্শ দেয়া হয়। খসড়া প্রকল্পে চারটি কম্পোনেন্ট (অংশ) ছিল। এগুলো হচ্ছে- নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সামর্থ্য বৃদ্ধি ও বীমা একাডেমির আধুনিকায়ন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়ানো, বেসরকারী পেনশন তহবিল গঠন ও তহবিল গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা পরিচালনা এবং প্রকল্পের কার্যকর ও সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটে উপযোগী কারিগরি পরিবেশ তৈরি করা। কিন্তু পরবর্তীতে এ প্রকল্পের বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত অনুযায়ী বেসরকারী পেনশন তহবিলের বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত বিনিয়োগ প্রকল্পটির ওপর গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি পুনরায় পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ বাস্তবায়ন সাপেক্ষে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) সূত্র জানায়, চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং আর্থিক খাতের লেনদেন সহজীকরণ, সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকতর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পটি মাধ্যমে বীমা খাত কার্যকরভাবে তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে এ খাতে সেবার মান বাড়ানো হবে।
×