ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রাম শহরে যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

 কুড়িগ্রাম শহরে যানজটে অতিষ্ঠ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রাম ট্রাফিক বিভাগে চলছে হজবরল অবস্থা। অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এভাবে বছরে অবৈধভাবে শুধু ট্রাফিক বিভাগের আয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলছে মোটরসাইকেলে জরিমানার নামে হয়রানি। আর এ সুযোগে প্রতি বছর প্রায় দেড় কোটি ৪৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কুড়িগ্রামের ট্রাফিক বিভাগ। ৫/৬ জনের একটি বিশেষ টিম মাসের ২৩/২৪ দিন বিভিন্ন উপজেলায় অভিযানের নামে শুধু মোটরসাইকেল আটক করে। রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত (নাম্বার যুক্ত) গাড়িও আটক করা হয়। আর রেজিস্ট্রেশন না থাকলে তো কথাই নেই। সবার জরিমানা চার হাজার ৮০০ টাকা। এ জেলার সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ী বাহন মোটরসাইকেল। তারা অতি প্রয়োজনীয় এ বাহনটি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বছরে কয়েকবার গুনতে হয় জরিমানা। অথচ জরিমানার সিংহভাগ টাকা যায় ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের পকেটে। সরকার বঞ্চিত হয় রাজস্ব থেকে। ভেহিকেল এ্যাক্টের আওতায় পড়েনা এমন বাহন-ভটভটি, পাওয়ার টিলার, টলি, ব্যাটারিচালিত অটো, ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলছে দেদারছে। অন্যান্য যানবাহন থেকে বছরে মাসোহারা আসে সোয়া এক কোটি টাকা। কুড়িগ্রাম শহর এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র পার্কিং, এলোমেলোভাবে রাস্তায় চলাচল করায় শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়ে চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট। শহরের ব্যস্ততম সড়কে নেই ট্রাফিক বিভাগের চোখে পড়ার মতো উদ্যোগ। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই আছে। অফিস সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম ট্রাফিক বিভাগে লোকবল ৪১ জন। এর মধ্যে টি আই (ট্রাফিক ইন্সপেক্টর) পদে ৫জন। এর মধ্যে ২ জন ঢাকা হেড-কোয়াটারে সংযুক্ত অপর তিনজন এখানে কুড়িগ্রামে কর্মরত। সার্জেট ২জন, টি এস আই ৩জন, এ টি এস আই ৯ জন এবং কনস্টেবল ২২জন। অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোটরসাইকেল বাদে অন্যান্য যানবাহন থেকে মাসিক আয় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ছয়শত ট্রাক ও ছোট ট্রাক থেকে ৬০০ হিসাবে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দেড়শত দূরপাল্লার কোচ থেকে ৫০০ হিসাবে ৭৫ হাজার টাকা, ১৩৫টি মিনিবাসে ২০০ হিসাবে ২৭ হাজার টাকা, ২৯৩টি জেএস ও মহেন্দ্র থ্রি-হুইলার প্রতি ৩০০ হিসাবে ৮৭ হাজার ৯০০ টাকা, ১১১টি মাইক্রোবাস ও কার প্রতি ২০০ হিসাবে ২২ হাজার ২০০ টাকা, ৪০০টি টলি প্রতি ৩০০ হিসাবে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, ট্রাক্টর প্রতি ৫০০ টাকা হিসাবে ২ লাখ টাকা মাসোহারা উত্তোলন করা হয়। এছাড়া অটো, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ভটভটি, নছিমন, করিমন এবং দেশের অন্যপ্রান্ত থেকে আসা অন্যান্য বাহন থেকে গড়ে আরও দেড় লাখ টাকা আয় হয়। সব মিলিয়ে বছরে আয় সোয়া এক কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৩০/৩৫টি মামলা হয় মোটরসাইকেলের। বাড়ির উঠান থেকেও গাড়ি ধরে আনার রেকর্ড রয়েছে। নম্বর প্লেট থাকলেও সর্বোচ্চ জরিমানা গুনতে হয়। রাজনৈতিক তদবিরে অনেক ক্ষেত্রে টাকার অঙ্ক ৫০০/১০০০ টাকা কমলেও বাকি টাকা রসিদ ছাড়াই গ্রহণ করেন ট্রাফিক ওই কর্মকর্তা। অধিকাংশ মামলার জরিমানার টাকা তিনি পকেটস্থ করেন। আর স্বল্প পরিমাণ টাকা জমা হয় সরকারী কোষাগারে। এ হিসাবে মাসে তিনি শুধু মোটরসাইকেলের মামলা সংক্রান্ত জরিমানা থেকে বাড়তি আয় করেন কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ বছরে প্রায় এক কোটি ৪৪ লাখ টাকার বাণিজ্য হয় মোটরসাইকেল মামলা সংক্রান্ত খাত থেকে। স্থানীয় লিয়াকত আলী জানান, ‘ট্রাফিক পুলিশ এখনও ওই স্পটে এসে গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় এতো বাহন থাকলেও পুলিশের চোখ শুধু মোটরসাইকেলের ওপর। রাস্তায় নামলেই অপদস্তের শিকার হতে হয়। অসৌজন্য আচরণ করেন তারা। স্বাধীন দেশে নিজেকে খুবই পরাধীন মনে হয়।’ কুড়িগ্রাম শহরের খাদ্য ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, গত বছর তাকে তিন দফা ট্রাফিক পুলিশের মামলায় পড়তে হয়েছে। প্রতিবারই ছিল ৪৮০০ টাকার জরিমানা। তবে তদবির করে ২ হাজার করে ৬ হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে। টাকা দেয়ার সময় মামলার লাল কাগজটি তারা নিয়ে নেন। তবে টাকার কোন রসিদ দেয়া হয় না। ভুরুঙ্গামারীর আবু সাইদের ‘এম সি’ কাগজ জব্দ করার পরও গাড়িটি থানায় আটক করা হয়। পরে সব মিলিয়ে দাবি করা হয় ৬ হাজার টাকা। ৫ হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে আনতে হয়।
×