ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইরাক পুনর্গঠনে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ইরাক পুনর্গঠনে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক পুনর্গঠনে ৩০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সরকার। মার্কিন আগ্রাসন ও আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেশটি নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে আছে। চলতি সপ্তাহে কুয়েত সিটিতে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ইরাক পুনর্গঠনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। এএফপি ও নিউজ উইক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রফতানি ব্যাংক বাগদাদের সঙ্গে সম্মতির ভিত্তিতে ৩ হাজার কোটি ডলারের এক স্মারকলিপি সই করতে যাচ্ছে। ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে ব্যয় করা হবে এই অর্থ। এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস, পরিবহন ও পণ্যসামগ্রী। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন আর্থিক অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ না করে বলেন, তেহরান ব্যক্তিগত খাতগুলোতে স্থিতিশীলতা আনতে অবদান রাখবে। এই সম্মেলনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্গঠনে ইরানের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কুয়েতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ সাবা আল-খালেদ আল সাবা বলেন, সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার ছিল স্পষ্ট। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে অংশ নেয়া ৭৬টি দেশ, বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক তহবিল ও বৈশ্বিক সংস্থা এবং শত শত বিনিয়োগকারী বিভিন্ন ধরনের অঙ্গীকার করেছে। বাগদাদ বলছে, আইএসের সঙ্গে যুদ্ধের পর ইরাক পুনর্গঠনে তাদের প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার দরকার। আইএস জঙ্গীরা দেশটির অসংখ্য বাড়িঘর, স্কুল, হাসপাতাল ও অর্থনৈতিক অবকঠামো ধ্বংস করেছে, লাখ লাখ লোককে গৃহহীন করেছে। শীর্ষ দাতাদেশ ব্রিটেন ও তুরস্ক অবশ্য নিজেদের শর্ত জুড়ে দিয়েছে। ব্রিটেন বলেছে তারা দশ বছরের জন্য প্রতি বছর ১ বিলিয়ন ডলারের রফতানি ঋণ সুবিধা দেবে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু অর্থ দেয়া বন্ধের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে না জানিয়ে বলেন, তার দেশ ঋণ ও বিনিয়োগে ৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করবে। স্বাগতিক কুয়েতের নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলো বিনিয়োগ, ঋণ ও রফতানির জন্য অর্থসহায়তা দিতে ৫ বিলিয়ন ডলার দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। ইরাক বলেছে, তাদের ১০ বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনায় ব্যয় হবে ৮৮.২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২২ বিলিয়ন ডলার খুব দ্রুত প্রয়োজন। সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে ইরাকের পরাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম আল জাফারি বলেন, ‘আমরা আরও বেশি আশা করেছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হতাশ নই, তবে অর্থের পরিমাণ প্রত্যাশার থেকে কম।’ বিশ্বব্যাংক বুধবার বলেছে, ইরাকের সফল পুনর্গঠনে ব্যক্তিগত খাতকে নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করা উচিত। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ইরাকের ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট কমিশনের প্রধানের মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘বিশ্বের বিবিন্ন জায়গা থেকে অনেক ব্যবসায়ী এখানে আলোচনা করতে সমবেত হয়েছে কিভাবে তারা ইরাকের ভবিষ্যত নির্মাণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করতে পারে যা দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে। তাদের উপস্থিতিই বলে দিচ্ছে যে, ইরাক ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত।’ কিম বলেন, ইরাকের বিশ্বব্যাংকের আর্থিক প্রতিশ্রুতি ২০১৪ সালের ৬০০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে বর্তমানে ৪.৭ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। যদিও বুধবার মাত্র দুটি প্রকল্পের জন্য ৫১০ মিলিয়ন ডলার দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ইরাকের পুনর্গঠন প্রকল্পে ব্যাপক পরিসরে অর্থের যোগান দিতে কুয়েতে ইরাকী প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদির সরকার বৈদেশিক মূলধন আকর্ষণ করতে কাজ করে। তবে বুধবার আবাদি দেশটির দুর্নীতির ভয়াবহতা উপশম করার ইচ্ছা প্রকাশ করে বলেন, দুর্নীতির কারণে বৈদেশিক তহবিলের অর্থ তছরুপ হতে পারে।
×