ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতাতাড়িত দুই বইয়ের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতাতাড়িত দুই বইয়ের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষাজীবন শেষে জীবিকার তাগিদে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমান লেখক সেলিম আজাদ চৌধুরী। সেখানেই কেটেছে পেশায় ফার্মাসিস্ট এই কবি ও লেখকের জীবনের দীর্ঘ সময়। প্রবাস জীবনে অবলোকন করেছেন অনেক কিছু। সম্মুখীন হয়েছেন নানা ঘাত-প্রতিঘাতের। সেই অভিজ্ঞতার সঙ্গে ফেলে আসা জীবনের স্মৃতি শাণিত করেছে লেখকসত্তাকে। প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে লিখেছেন ভ্রমণকাহিনী ‘তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে’ ও উপন্যাস ‘কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী’। বলাকা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত বই দুটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো রবিবার। জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় হল রুমে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি হেলাল হাফিজ, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক, সাংবাদিক দিল মনোয়ার মনু, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজ। অনুভূতি ব্যক্ত করেন লেখক সেলিম আজাদ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, দুটো বইয়ের মধ্যে উপন্যাসের পটভূমি বেশ বড়। সাতচল্লিশের দেশভাগের আগের সময় থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত বিস্তৃত প্রেক্ষাপট। পটভূমির তুলনায় বইটি যে জায়গা নিয়েছে তা অপেক্ষাকৃত কম। আর ভ্রমণকাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্রের নানা স্থানে ঘোরাঘুরির বর্ণনার পাশাপাশি উঠে এসেছে অভিবাসী জীবনের নানা দিক। ভবিষ্যতে লেখক আরও গুণসম্পন্ন বই উপহার দেবেন এটাই প্রত্যাশা। হেলাল হাফিজ বলেন, তিনি বিজ্ঞানের ছাত্র, কিন্তু তার ভেতরে রয়েছে কবিতা। স্বভাবে রয়েছে বেশ বিনীত ভাব। একেবারে নির্মোহভাবে, নিখুঁতভাবে, প্রাঞ্জলভাবে বাঙালীদের জীবন তুলে ধরেছেন। আগে এই লেখককে ভালোবাসতাম, এখন ঈর্ষা করি। এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, বইয়ের মধ্যে একইসঙ্গে একজন ভ্রমণপিয়াসু এবং একজন সমাজ নিরীক্ষককে খুঁজে পাওয়া যায়। সমাজে মানুষের পাওয়া না পাওয়ার যে গল্প তা অতি প্রাঞ্জল ভাষায় উঠে এসেছে। মফিদুল হক বলেন, লেখকের নিজের মধ্যেও অকপট এক সারল্য রয়েছে। যার ছাপ লেখায় পড়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গভীরতা। বর্ণনায় রয়েছে অন্যরকম এক শক্তি, যেখানে আছে জীবনের নানা অভিঘাতের কথা। গত শতকের আশির দশক থেকে আমাদের দেশের মানুষের যে প্রবাস জীবনের গমন ও বিশ্ব বাঙালী হয়ে ওঠার চেষ্টা তা ভালভাবে আজও কোথাও উঠে আসেনি। কিন্তু এই জীবনেক বুঝতেই অনেক লেখালেখি দরকার। এই বইয়ে সে জীবন বাস্তবতার নানা মাত্রা ফুটে উঠেছে। দিল মনোয়ার মনু বলেন, লেখক তার মনন, মেধা, চিন্তা নিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছেন এবং তার লেখা দিয়ে জয় করেছেন। অনুভূতি প্রকাশে লেখক সেলিম আজাদ চৌধুরী বলেন, আমার লেখালেখির শুরুটা কাকতালীয়। আমার এ লেখক জীবনে মহীরুহ হচ্ছেন আমার বড় ভাই ড. একে আজাদ চৌধুরী। তার কাছ থেকেই পেয়েছিল লেখালেখির প্রেরণা। আর লেখার শক্তিটা অর্জন করেছি আমার শ্বশুর বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মূসার কাছ থেকে। সরল চোখে যেটুকু দেখেছি তা লিখেছি। তবে সেখানে জীবনের নানা দ্বন্দ্বের প্রকাশও উঠে এসেছে। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদ্যাপন আজ ॥ ‘বই পড়ি, স্বদেশ গড়ি’ গানে এই প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন করবে জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। আজ সোমবার দিনভর নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হবে দিবস। দেশের সরকারী ও বেসরকারী গণগ্রন্থাগারসমূহের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে এ দিবস উদযাপন করা হবে। রবিবার রাজধানীর সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান গণগ্রন্থাগার অধিদফতরের মহাপরিচালক আশীষ কুমার সরকার। তিনি জানান, আজ সোমবার সকাল ৯টায় জাতীয় গণগ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের করবে জাতীয় গণগ্রন্থাগার অধিদফতর। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরতে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রধান অতিথি থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। সভাপতিত্ব করবেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহীম হোসেন খান। আলোচনা শেষে শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আশীষ কুমার সরকার বলেন, সারা বছর আমরা যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করি-এই দিবসকে ঘিরে সেসব কার্যক্রমের মূল্যায়ন হবে। একইসঙ্গে গ্রন্থাগার নিয়ে জানা হবে পাঠকদের মতামত। আমরা শুনবো, পাঠাগারের কাছে কেমন সুবিধা চাইছেন পাঠকরা। গ্রন্থাগার সেক্টরের মানুষদের উদ্দীপিত করতে এ দিবসটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের কাছে কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। পরে ১৯৭৮ সালে ৬ জানুয়ারি গণগ্রন্থাগার ভবনের উদ্বোধন করা হয়, ১৯৮৩ সালে তা অধিদফতরের স্বীকৃতি পায়। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে এখন মোট গণগ্রন্থাগারের সংখ্যা ৭১টি। অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের বইয়ের সংখ্যা ২ লাখ ৯ হাজার ৪০২টি। ৫৮টি জেলায় সরকারী গ্রন্থাগারে থাকা মোট বইয়ের সংখ্যা ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮৪৪টি। সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে গড়ে প্রতিদিন ৩ হাজার ৩৬০ জন পাঠক আসেন। জেলা পাঠাগারগুলোর সুবিধা দৈনিক ব্যবহার করেন প্রায় ২ লাখ ৭৬ হাজার পাঠক।
×