ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণী আক্তার সান

কখনও বিশ্বাস হারান না কোহলি

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

কখনও বিশ্বাস হারান না কোহলি

দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দীর্ঘ ২৫ বছরে কখনই টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি ভারত। অনেকে ভেবেছিলেন এবার ব্যতিক্রম হবে। কারণ বিরাট কোহলির নেতৃত্বে এক নম্বর দল হিসেবে সেখানে পাড়ি জমিয়েছিল ভারত। ইতিহাস বদলায়নি। টানা দুই হারে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ খোয়ায় সফাকারিরা। তবে জোহানেসবার্গের শেষ টেস্টে দাপুটে জয়ে ব্যবধান কমায় কোহলি-বাহিনী। ধরে রাখে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান। পাশাপাশি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি এবং আইসিসির প্রাইজম্যানিও নিশ্চিত করে। নেতৃত্বে-ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য রকমের সফল অধিনায়ক জানিয়েছেন কোন অবস্থাতেই নিজের ওপর বিশ্বাস হারান না। কোহলি বলেন, ‘আমার নিজেদের উপরে আস্থা সব সময়ই ছিল। কিন্তু জোহানেসবার্গে তার সঙ্গে ফলটাও এসেছে। আগের দুটি ম্যাচে যেটি হয়নি। পার্থক্য এতটুকই। আমরা দেখে নিলাম, বিদেশের কঠিন পরিবেশে গিয়েও এ রকম জয় ছিনিয়ে আনতে পারি।’ সুপার কোহলি আরও যোগ করেন, ‘যখন কেউ আপনার উপরে বিশ্বাস রাখবে না, কেউ আপনাকে সমর্থন করবে না, তখন নিজেদের সমর্থন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাইরে থেকে কে কী বলছে, সেটা নিয়ে আমরা খুব একটা ভাবি না। টিম হিসেবে নিজেদের দক্ষতার প্রতি আস্থা রাখাটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টানা দুই হারে আগেই সিরিজ খোয়ানো (২-১এ) ভারত তৃতীয় ও শেষ টেস্টে ৬৩ রানের জয় পায়। প্রথম ইনিংসে ১৮৭Ñএ অলআউট কোহলির দল দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৭ রান করে প্রতিপক্ষকে ২৪১ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। জবাবে চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১৭৭ রানে অলআউট হয় প্রথম ইনিংসে ১৯৪Ñএ গুড়িয়ে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা। ডিন এলগার (৮৬*) আর হাসিম আমলা (৫২) ছাড়া আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন কেবল ভারনন ফিল্যান্ডার (১০)। স্মরণীয় জয়ের পথে ভারতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তিন পেসার মোহাম্মদ শামি (৫/২৮), জাসপ্রিত বুমরাহ (২/৫৭) ও ইশান্ত শর্মা (২/৩১)। কোহলি যোগ করেন,‘চলার পথে আমরা হয়ত ম্যাচ হারব। কিন্তু অনেক ম্যাচ জিতবও। এই দিনটা আমরা টিম হিসেবে ভীষণভাবেই মনে রাখব। ড্রেসিংর রুমে এখন দারুণ মেজাজ এবং আমি বলে দিতে পারি, সকলে এই ধরনের পারফর্মেন্স ভবিষ্যতে আরও অনেক বার করার কথাই ভাবছে।’ নিউ ওয়ান্ডারার্সের পিচ নিয়ে তুলকালাম চলছে ক্রিকেট বিশ্বে। ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘আমি মোটেও চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন ছিলাম না। আমাদের গায়েও অনেক বার বলের আঘাত লেগেছে। তাই বলে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়া তো যায় না। বলা তো যায় না যে, পিচে বড্ড বেশি বল লাফাচ্ছে বা বাঁক খাচ্ছে। বলটা দক্ষিণ আফ্রিকার কোর্টে ছিল। আমরা সব সময়ই খেলতে চেয়েছিলাম। ওদের সিদ্ধান্ত নিতে হতো, খেলবে কি না।’ একপর্যায়ে ওয়ান্ডারার্সের পিচে খেলা চালানো হবে কি না, তা নিয়ে জোর তর্ক-বিতর্ক চলছিল। মাইকেল হোল্ডিং মন্তব্য করেন, এই পিচে খেলা বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল প্রথম দিনেই। কিন্তু ম্যাচ রেফারির সঙ্গে বৈঠকে কোহলি পরিষ্কার বলে দেন, তিনি খেলতে চান। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফ্যাফ ডুপ্লেসি এবং তাঁদের দলের ম্যানেজার জানান, পিচ বিপজ্জনক কিনা সেটাও দেখা হোক। কোহলি যদিও টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ম্যাচ রেফারির সঙ্গে তার কথোপকথন নিয়ে কিছু বলতে চাননি। ‘সিরিজে আমার বোলাররার প্রতিপক্ষের ৬০টা উইকেট নিয়েছে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে ওদের। অনেকে হয়ত আমাদের ওপরে আস্থা রাখেনি। কিন্তু আমাদের নিজেদের ওপরে বিশ্বাস ছিল। আমরা জানতাম, চাপের মুহূর্তগুলোতে যদি আমরা আরও ভাল খেলতে পারি, তা হলে আমরা জিততে পারব। সেটা শেষ টেস্টে করে দেখাতে পেরেছে টিম।’ ওয়ান্ডারার্সের এই জয়ের সঙ্গে লর্ডসের জয়ের তুলনা টেনে তিনি আরও বলেন, ‘লর্ডসের পিচটা হয়ত এতটা ফাস্ট, বাউন্সি ছিল না। কিন্তু ওখানেই পরিস্থিতি কঠিন ছিল।’ সমালোচনায় দগ্ধ হচ্ছিলেন তিনি এবং তার টিম। ওয়ান্ডারার্সের পিচ কঠিন ছিল বলে কি জিতে বেশি আনন্দ হচ্ছে? কোহলি বলেন, ‘আমরা কখনও পিচ নিয়ে অভিযোগ করিনি। এই পিচটা প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল, দু’টো দলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। আমরা ঠিক করি, চ্যালেঞ্জটা নিতেই হবে। আমি ভেবে খুশি হচ্ছি যে, পেস আর বাউন্সের জন্য এই পিচটা তৈরি করা হয়েছিল। আর সেটা আমাদের পক্ষে গিয়েছে।’ জোহানেসবার্গের বিরূপ কন্ডিশন আর জঘন্য পিচেও ৬৩ রানের নাটকীয় জয়। ব্যবধান ২-১এ কমানোর পাশাপাশি র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে কোহলি এ্যান্ড কোং, ২০১৮ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি ঘরে রাখাটাও নিশ্চিত করেছে ভারত। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট যাচ্ছে মোড়লদের মাথায়। ভারতকে ৩-০ তে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করতে পারলে পরের সিরিজ শীর্ষে ওঠার সুযোগ থাকত দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে। কিন্তু শেষ টেস্টে দারুণ জয়ে ব্যবধান কমিয়েছে সফরকারীরা। কোহলিরা নিশ্চিত করে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি ধরে রাখা ও মিলিয়ন ডলার প্রাইজমানি। আগামী ৩ এপ্রিল টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দল পাবে ট্রফি ও প্রাইজমানি। প্রোটিয়ারা ২-১ এ সিরিজ জিতলেও নিশ্চিত হয়েছে ওই সময় পর্যন্ত শীর্ষ দল ভারতই থাকছে এক নম্বরে। ১২৪ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে সিরিজ শুরু করেছিল কোহলিরা। ১১১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজ জিতে প্রোটিয়ারা পেয়েছে ৪ পয়েন্ট, ভারত হারিয়েছে ৩ পয়েন্ট। তবে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের ১২১ পয়েন্ট ছাড়াতে পারবে না কোন দল। প্রতি বছর ১ এপ্রিল শীর্ষে থাকা দলকে দেয়া হয় ট্রফি ও প্রাইজমানি। এবার দুটি টেস্ট সিরিজের শেষ দিন ৩ এপ্রিল বলে সে দিনকেই ডেডলাইন করা হয়েছে। শীর্ষস্থান নিশ্চিত করায় ট্রফি ধরে রাখার পাশাপাশি ভারত পাবে ১০ লাখ ডলার। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে এই ট্রফি জিতে নিয়েছিল তারা।
×