ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে পুষ্পমেলা

চন্দ্রমল্লিকা কস্মস্ পঞ্চটিয়া ডালিয়া- ক্রেতার ভিড়

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

চন্দ্রমল্লিকা কস্মস্ পঞ্চটিয়া ডালিয়া- ক্রেতার ভিড়

বাবুল হোসেন ॥ ময়মনসিংহের টাউনহল প্রাঙ্গণে চলমান বর্ণাঢ্য পুষ্পমেলায় শোভা পাচ্ছে চন্দ্রমল্লিকা, পঞ্চটিয়া নয়নতারা ও ডালিয়াসহ চোখ জুড়ানো বাহারি রয়ের গোলাপ আর হরেক প্রজাতির গাঁদা ফুল। রাজ্যের দেশী-বিদেশী ফুলের রং ছড়ানো সুবাস নিতে আর সৌন্দর্য উপভোগ করতে মেলায় ভিড় জমাচ্ছেন সৌন্দর্যপিপাসু নানা শ্রেণীপেশার মানুষ। নানা প্রজাতির ফুল ছাড়াও মেলায় রয়েছে ভেষজ ও বামন জাতের বনসাই বৃক্ষরাজি। মেলায় ফুল আর বৃক্ষপ্রেমিকদের ঢল দেখে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন স্টল মালিকরা। বেচাবিক্রিও জমে উঠেছে। দামও ক্রেতাসাধারণের নাগালের মধ্যেই বলে দাবি স্টল মালিকদের। শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় ভিড় ছিল উপচেপড়া। নানা রং আর ঘ্রাণের ফুলে ফুলে সাজানো টাউনহল প্রাঙ্গণের এমন বর্ণাঢ্য আয়োজনে মুগ্ধ সবাই। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার রঘুরামপুর সবজিপাড়ার ‘ভাই ভাই নার্সারি’র মালিক শামছুল হক মেলায় স্টল দিয়েছেন উদ্বোধনের দিন গত ১৪ জানুয়ারি থেকেই। বনজ, ফলদ, ঔষধি বৃক্ষরাজি ছাড়াও তার স্টলে রয়েছে বাহারি রঙের দেশী-বিদেশী ফুলের প্রজাতি। চোখ জুড়ানো হালকা বেগুনি, সাদা আর হলুদ রঙের বাহারি জাতের চন্দ্রমল্লিকা দেখতে মেলার এই স্টলটিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। চন্দ্রমল্লিকা ছাড়াও এই স্টলে রাখা হয়েছে কস্্মস্, ডালিয়া, নয়নতারা পঞ্চটিয়াসহ গোলাপ আর গাঁদা ফুলের চারা। এসবের বাইরে বিদেশী জিনিয়া, ¯েœাবল, বারবিনা, এন্টারহেনা, সেলভিয়া, কোলনডোলা, অস্টার, সেলোসিয়া, ডায়ান্থাসসহ রাজ্যের চোখ জুড়ানো সব ফুলের সমাহার। আছে বাহারি রং আর প্রজাতির গোলাপ-গাঁদা ফুল। তবে বেশিরভাগ ক্রেতাসাধারণের প্রথম পছন্দ দেখা গেছে গোলাপেই। চন্দ্রমল্লিকা, নয়নতারা আর পঞ্চটিয়ার প্রতিও ক্রেতাসাধারণের আগ্রহ কম দেখা যায়নি। ফুল ছাড়াও মেলার বামন জাতের বনসাই বৃক্ষরাজির স্টলগুলোতেও ছিল ক্রেতাসাধারণের উপচেপড়া ভিড়। এসব ছাড়াও বিভিন্ন স্টলে রাখা হয়েছে জারবেরা, এলোবেরা, ক্রিসমাস, ক্যাকটাস, রঙ্গন, অর্কিডসহ নানা জাত-প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও ফুলের চারা। ক্রেতাসাধারণ বলছে-মেলার বিভিন্ন স্টলের ফুল কিংবা বৃক্ষরাজির দাম নাগালের মধ্যেই। প্রতিটি ফুলের চারা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে টবসহ কিনতে দাম কিছুটা বেশি পড়ছে। টবসহ ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে মিলছে ফুলের চারা। বিশেষ করে গোলাপ আর গাঁদা ফুল টবসহ দাম পড়ছে ১৫০ টাকা। আর বয়সভেদে বামনজাতের বনসাই বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। স্টল মালিক শামছুল হক জানালেন, এখন পর্যন্ত দৈনিক গড়পড়তায় ৪/৫ হাজার টাকা বেচাবিক্রি হচ্ছে। স্টল ভাড়া গুনতে হচ্ছে না বলে বেশ ভালই পুষিয়ে যাচ্ছে। তবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে এই বেচাবিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা তার। নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি সুরুজ আলী মীর জানান, শীত আর রোদের লুকোচুরির মধ্যেই জমে উঠেছে এই পুষ্পমেলা। এখন জানুয়ারির শেষ। এই সমটায় মেলায় ভিড়ভাট্টা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি। শুক্রবার ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল ক্রেতাদের ভিড়। নানা বয়সী মানুষের ঢল নামে মেলায়। অনেকে আসেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘোরাফেরা শেষে মেলা থেকে ফুলের চারা কিনে বাসায় ফেরেন। শহরের নাহা রোডের গৃহবধূ রোজী আক্তার এবং কাচারিঘাট এলাকার নারী উদ্যোক্তা রুমা জানান, বাচ্চাদের নিয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতেই মেলায় আসা। এমন সুন্দর আয়োজনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এই দুই নারী। শিক্ষিকা লুৎফা জানান, ব্যস্ত নগরবাসীর জন্য এটি বর্ণাঢ্য আয়োজন। ফুলের প্রতি মানুষের চিরায়ত ভালবাসার এমন আয়োজনে খুশি সবাই। ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগ আর স্থানীয় নার্সারি মালিক সমিতির সহায়তায় গত ১৪ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই মেলা চলবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২৫ দিনব্যাপী এই মেলায় বহু স্টল এসেছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা থেকে। আয়োজকরা জানান, টানা চার বছর ধরে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটুর উদ্যোগে চলে আসছে এই পুষ্পমেলা। নার্সারি মালিকদের উৎসাহ প্রদানসহ ব্যস্ত নগরবাসীর মধ্যে সৌন্দর্যবোধের চর্চার প্রসার ও প্রশান্তির বিকাশ ঘটাতেই এমন ব্যতিক্রমী আয়োজন বলে জানান পৌরসভার মেয়র। মেলায় নার্সারি মালিকদের উদ্বুদ্ধ করতে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে একদম বিনা ভাড়ায়। উল্টো মেলায় আসা নার্সারি মালিকদের স্টল সাজাতেও সবধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এ নিয়ে মহাখুশি স্টল মালিকরা। মেলায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থাও। এ নিয়েও খুশি মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। মেলায় আসা ক্রেতাসাধারণের সুবিধার্থে একই প্রাঙ্গণে বসেছে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের স্টল। সঙ্গে চায়ের স্টল তো আছেই।
×