ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘরে বাইরে টানাপোড়েনের মধ্যে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

ঘরে বাইরে টানাপোড়েনের মধ্যে পাকিস্তান

পাকিস্তানের রাজনীতির টালমাটাল অবস্থার মধ্যে চলতি বছর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একদিকে সন্ত্রাস দমনে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পারছে এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক করিডর মিসরে ব্যবহৃত হওয়ার ব্যাপারে চীনের প্রত্যাশাই বা কতটুকু মেটাতে পারছে তা পরিমাপ করার বছরও হবে এই ২০১৮ সাল। সুতরাং বছরটি যে পাকিস্তানের জন্য একটা কঠিন বছর হবে সে ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই। গত বছরের ২৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষিত হয় নওয়াজ শরীফ। রাজনীতিতে সৃষ্টি হয় নতুন টানাপোড়েন। তবে তার দল মুসলিম লীগই ক্ষমতায় থেকে যায়। তার বিরুদ্ধে সম্পদ গোপন করার মতো দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। কিন্তু পাকিস্তান দেশটিতে দুর্নীতি এত সর্বব্যাপী যে প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে থাকতে অযোগ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে তা যে দূর হতে পারে না সেটা সবারই জানা। পাকিস্তানের গোটা শাসক শ্রেণী দুর্নীতিতে আকীর্ণ। সুতরাং ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান ছাড়া দুর্নীতি দমন সম্ভব নয়। পাকিস্তানে নানা শক্তির মধ্যে একটা টানাপোড়েন সর্বক্ষণ লেগেই আছে। তার মধ্যে সিভিল মিলিটারি ঝঞ্ঝাময় সম্পর্ক উল্লেখযোগ্য। এর পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলা দেশটির স্বাভাবিক গতিধারায় মাঝে মধ্যেই ছেদ টানে। ২০১৫ সালের পর থেকে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা ও তীব্রতা দুটোই হ্রাস পেলেও এই হামলা এখনও চলতে থাকার অর্থ হলো সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাফল্যের দাবি মোটেও সত্য নয়। বরং এ থেকে প্রমাণ হয় যে কিছু কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং তাদের পৃৃষ্ঠপোষকতা নতুন করে জোটবদ্ধ হচ্ছে। বেশিরভাগ তা থেকে তাদের হামলার টার্গেট ছিল শিয়া সম্প্রদায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকজন। তাই বলে যে সুন্নিরা রেহাই পেয়েছে তাও নয়। সিন্ধুতে সুফী সম্প্রদায়ের লাল শাহবাজ কালান্দারের মাজারে হামলা তারই প্রমাণ। সন্ত্রাসী হামলার পটভূমিতে বেরেলভিদের উত্থান আজও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গত নবেম্বরে বেরেলভিরা রাজধানী ইসলামবাদ অবস্থান ধর্মঘট করে সরকারকে তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য করে। বেরেলভিরা সংখ্যায় বিপুল হলেও ওয়াহাবী, দেওবন্দী ও আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের মতো রাজনৈতিক সমর্থন এবং পৃষ্ঠপোষকতা নেই। আফগান জিহাদের সময় থেকে ওয়াহাবী, দেওবন্দী ও আহলে হাদিসরা সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে পারলেও বেরেলভিরা ক্রমবর্ধমান হারে প্রান্তিক ও ক্ষমতাহীন অবস্থায় থেকে গিয়েছিল। সম্প্রতি রাজপথের শক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর রাজনৈতিক অঙ্গনে বেরেলভিদের নাটকীয় আগমন ঘোষিত হয়েছে। এর পেছনে সেনাবাহিনীর হাত আছে বলে অনিবার্যভাবেই ধরে নেয়া যায়। সম্ভবত আগামী নির্বাচনের আগে নওয়াজ শরীফ ও তার দলকে এতটা সম্ভব দুর্বল করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কৌশলগত উপায়ে এই ইসলামী ও জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের একাধিপত্যের প্রতি বেরেলভিরা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এই যখন অবস্থা তখন এর বাইরের পরিবেশও প্রতিকূলই থেকে গেছে। ভারত ও আফগানিস্তানের সঙ্গে টানাপোড়েন তো রয়েছেই, তার ওপর সৌদি আরব ইরান বিরোধ পাকিস্তানের জন্য অনিশ্চয়তার আরেক পক্ষ তৈরি করেছে। তবে এ যাবত সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে। ট্রাম্প সরকার পাকিস্তানের আফগান ও ভারত নীতিতে এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে আশ্রয়ে দেয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে দেশটির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম টুইটে পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে একটা রোডম্যাপ দেয়া হয়েছে। গোটা ২০১৭ সাল জুড়ে মার্কিন নীতির প্রতি পাকিস্তানের ভূমিকার মধ্যে প্রকাশ্যে অগ্রাহ্যভাব এবং অন্তত আধাআধিভাবে হলেও আফগান প্রশ্নে আমেরিকার প্রত্যাশা পূরণের নীরব কূটনৈতিক উদ্যোগের একটা মিশ্রণ ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্পের সর্বশেষ বক্তব্য থেকে বোঝা যায় পাকিস্তানের এই কৌশল কাজে দেয়নি। পাকিস্তানের ওপর মার্কিন চাপ বেড়ে চলায় দেশটি টিকে থাকার জন্য সেই শিবির থেকে শক্তি সংগ্রহের চেষ্টা করছে সেখানে চীন ও রাশিয়া আছে। তবে দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিই এমন যে সেটা তার বৈদেশিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে বাধ্য। এক্ষেত্রে শুধু ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র নয়, চীনও আছে। কাজেই যুক্তিসঙ্গতভাবেই ধরে নেয়া যায় যে, ২০১৮ সাল হবে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের পরীক্ষার বছর। কারণ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এই করিডরের পেছনে যে সমর্থনই দিক না কেন, এ ধরনের বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বেশিরভাগ পাকিস্তানীর কাছে আজ এটা ধ্রুব সত্য যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এখন গাঁটছড়া বেঁধেছে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে এমনিতে যা ছিল এই ধারণার পর তা আরও নিচুতে নেমে গেছে। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবরই দু’দেশের সৈন্যদের মধ্যে নিয়মিত সংঘর্ষ ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে সেই সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে। সন্দেহ ও অবিশ্বাস আগের যে কোন সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। এমনিভাবে ঘরে-বাইরে টানাপোড়েনের মধ্যে চলেছে পাকিস্তান। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×