ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উইন্ডসরে ছিন্নমূল উচ্ছেদ প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক, ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৭ জানুয়ারি ২০১৮

উইন্ডসরে ছিন্নমূল উচ্ছেদ প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক, ক্ষোভ

ছবির মতো সুন্দর উইন্ডসর প্রাসাদের আঙ্গিনা বা আশপাশে কিছু বাস্তুচ্যুত ছিন্নমূল মানুষ পর্যটকদের কাছে হাত পেতে বা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করে। শীতের রাতে তাদের কেউ কেউ কম্বল পেঁচিয়ে স্তূপীকৃত কার্ড বোড বাক্সের আড়ালে ঘুমিয়ে থাকে। এ যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। ঐতিহাসিক পর্যটনসমৃদ্ধ শহর উইন্ডসরের এই অন্ধকার দিকটি এতদিনে কর্তৃপক্ষের নজরে পড়ার যৌক্তিক কারণও আছে। রানী লিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারির বিয়ে হতে যাচ্ছে এই প্রাসাদেই সময় পাঁচ মাসেরও কম, কনে মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কল। এ সময়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এলাকাটিকে ভিক্ষুকমুক্ত করে ভদ্রোজনোচিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করায় নানা ধরনের বিতর্ক ও ক্ষোভের জন্ম হচ্ছে। উইন্ডসর রয়্যাল ব্যুরো ও মেইডেন হেড কাউন্সিলের রক্ষণশীল নেতা সাইমন ডুড্লে স্থানীয় পুলিশ বিভাগকে উইন্ডসর এলাকা থেকে সব ধরনের বাস্তুচ্যুত বা গৃহহীন মানুষ উচ্ছেদে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, পুলিশকে লেখা চিঠিতে ডুডলে বলেন, এসব গৃহহীন মানুষ আসলে গৃহহীন নয়, এরা হচ্ছে স্বভাব ভিখিরি; এদের বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা করলেও এরা সে সুযোগ গ্রহণ না করে ভিক্ষা করে জীবন কাটায়। প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক উইন্ডসরে আসেন। তাদের কাছে হাত পেতে কখনও বা ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে বেশ ভালই আয় করে এসব বাস্তুচ্যুত ভিক্ষুক। যার দরুণ উইন্ডসরের স্থানীয় বাসিন্দা ও আশপাশে এক ভীতিকর ও উদ্বেগজনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখনই যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রিন্স হ্যারির বিয়ের সময় অতিরিক্ত হাজার হাজার পর্যটকের আগমনকালে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে ডুড্লের অভিমত। স্বাভাবিক অবস্থায় উইন্ডসরে ৩০ হাজার মানুষের আবাসিক সুবিধা রয়েছে। পর্যটন শিল্পের বাণিজ্যিক দিক মূল্যায়ন করে ব্র্যান্ড ফিন্যান্স নামের একটি কনসালটেন্সি ফার্ম হিসেবে নিকেশ করে দেখেছে যে, প্রিন্স হ্যারির বিয়ে উপলক্ষে পর্যটক সমাগমে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ৬৬ কোটি ডলারের বেশি অর্থায়ন হবে। সব কিছু বিবেচনায় এনে এবং দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার উদ্দেশে উইন্ডসরের এসব গৃহহীন মানুষ উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু গৃহহীনরা সরকারী সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে স্বেচ্ছায় ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নিয়েছে বলে ডুড্লের সঙ্গে একমত নন অনেক বাস্তচ্যুত মানুষ। স্টেফানি নামে মানসিক সমস্যার আক্রান্ত একজন বলেন, আমার কোন অবলম্বন নেই বলে এখানে আছি। নিজের ইচ্ছেয় নয়। আমি কারও কাছে কিছু চাই নাÑ তবে নিজে থেকে কেউ কিছু দিলে তা খাই। স্টেফানির মতো অনেক ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ এই শীতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাই উইন্ডসর গৃহহীন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মারে জেমস বলেছেন, যেখানে প্রিন্স হ্যারি ও তার বড় ভাই প্রিন্স উইলিয়াম গৃহহীন মানুষের কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছেন, সেখানে তাদের একজনের বিয়ে উপলক্ষে মানব জঞ্জাল পরিস্কারের নামে এই নিষ্ঠুরতা মেনে নেয়া যায় না। এটি খুবই দুঃখজনক। এ প্রসঙ্গে মারে আরও বলেন, রাজকীয় বিয়ের প্রসঙ্গ বাদ দিয়েও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে পারে যে, কেন এসব হতভাগ্য লোক এত কষ্টের মধ্যে পথে পথে রাত যাপন করছে। এদিকে উইন্ডসরে গৃহহীনদের উচ্ছেদ পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মেও এর নিন্দা করেছেন। -এএফপি।
×