ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা নতুন বইতে অজানা তথ্য

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

ট্রাম্পকে নিয়ে লেখা নতুন বইতে অজানা তথ্য

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বেশ কিছু অজানা বিস্ফোরক তথ্য বেরিয়ে এসেছে তাকে নিয়ে লেখা ‘ফায়ার এ্যান্ড ফিউরি : ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ’ বইতে। মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল ওলফ বইটি লিখেছেন। মঙ্গলবার বইটি প্রকাশের কথা থাকলেও শুক্রবারই বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। খবর ইয়াহু অনলাইনের। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পের দ্বিধায় পড়া, অভিষেকের দিন অস্বস্তি, হোয়াইট হাউজ নিয়ে ভয় এমনকি পরনারী আসক্তির কথা ও আছে বইটিতে। এছাড়া আছে ইভানকা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাস, ট্রাম্পের প্রতি মিডিয়া মোঘল রুপার্ট মারডকের অবজ্ঞার কথা। দুই শ’র বেশি লোকের স্বাক্ষাতকারের ভিত্তিতে বইটি লেখা হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যানডারস বইটিকে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যে ভরা বলে অভিহিত করেছেন। তবে বইটির লেখক ওলফ দাবি করেছেন, তিনি ট্রাম্পের অভিষেকের দিন থেকে শুরু করে তার প্রশাসনকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। ট্রাম্প জুনিয়র-রুশ বৈঠক-‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ অভিযোগ ব্যাননের ॥ নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পপুত্র ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের বৈঠককে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে অভিযোগ করেছেন হোয়াইট হাউজের সাবেক চীফ স্ট্র্যাটেজিক স্টিভ ব্যানন। ২০১৬ সালের জুনে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্প টাওয়ারে ওই বৈঠকটি করেছিলেন ট্রাম্প জুনিয়র। বৈঠকে রাশিয়ানরা হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে বিধ্বংসী তথ্য দেয়ার কথা বলেছিল। ব্যাননের মতে, প্রচার শিবিরের তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কোন আইনজীবী ছাড়া ট্রাম্প টাওয়ারে বিদেশী সরকারে সঙ্গে বৈঠক করাটি ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ ও ‘দেশপ্রেমহীনতা’। অবিলম্বে এজন্য এফবিআইকে ডাকা উচিত ছিল। দ্বিধায় পড়েন ট্রাম্প ॥ নির্বাচনের রাতে ট্রাম্প যখন অপ্রত্যাশিত জয় পেলেন তার প্রচার শিবিরে তখন কোন আনন্দই ছিল না। বিজয়ের কিছুক্ষণ পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তার এক বন্ধুকে বলেন, তার বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি ভূত দেখেছেন। মেলানিয়ার চোখে পানি না থাকলেও আনন্দাশ্রু ছিল না। ব্যাননের বর্ণনায়, ট্রাম্প ছিলেন পুরোপুরি দ্বিধাগ্রস্ত ও ভীত। তারপর যেন হঠাৎই সম্বিত ফিরে পান। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতার মধ্যে এমন বিশ্বাস জেগে ওঠে। অভিষেকে নিরানন্দ, রাগান্বিত ও ভীত ট্রাম্প ॥ অভিষেকের দিনটি উপভোগ করতে পারেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম সারির বেশিরভাগ তারকা অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় তিনি ছিলেন ক্ষুব্ধ। স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াও করেছিলেন ট্রাম্প। আর সে ঝগড়ার কারণেই ফার্স্টলেডি মেলানিয়ার চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। হোয়াইট হাউজ নিয়ে এত ভীত ও উদ্বিগ্ন ছিলেন যে নিজের শয়নকক্ষ বাদ দিয়ে আলাদা একটি কক্ষে থেকেছেন। প্রেসিডেন্ট কেনেডির পর থেকে হোয়াইট হাউজে এমন নজির এটিই প্রথম। ইভাঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষ ॥ ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও তার স্বামী জ্যারেড কুশনার অনেকের পরামর্শে হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ে একসঙ্গে কাজ নিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে তারা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে এও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে সুযোগ আসলে ইভাঙ্কা ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াবেন। এটি হলে হিলারি ক্লিনটন নয় ইভাঙ্কাই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। চুলের গোমর ফাঁস ॥ ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুলের নেপথ্যের রহস্য ফাঁস করে দিয়েছেন তার মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প। ট্রাম্পের মাথার চুল আসল কিনা, তার ভিন্ন ধরনের চুলের বিন্যাস, রং আসল না নকল? এসব প্রশ্নের উত্তর ইভাঙ্কা দিয়েছেন বলে বইতে উল্লেখ করেছেন লেখক ওলফ। বলেছেন, ট্রাম্প যে মাথার চামড়ায় সার্জারি করেছেন সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন তার মেয়ে। বন্ধুদের কাছে বাবার চুল নিয়ে ঠাট্টা করেই গোমর ফাঁস করেন তিনি। ওই সার্জারিতে মাথার ওপরের টাক হওয়া একটি অংশের আকৃতি কমিয়ে তারপর চুল দিয়ে সে জায়গাটি ঢেকে দেয়া হয়েছে। ট্রাম্পের চুলের বর্তমান স্টাইলটি হয়েছে এভাবেই। আর ট্রাম্পের চুলের রঙের বিষয়ে ইভাঙ্কার বক্তব্য, তার বাবা চুল রং করতে ‘জাস্ট ফর মেন’ ব্যবহার করেন। রঙটি লাগানোর পর সেটির কাজ পুরো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করার কারণেই তিনি হয়েছেন কমলা-স্বর্ণকেশী। অগ্রাধিকার জানেন না কুশনার ॥ ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজগুলো করতে চায় তা জানতেন না প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার। হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ কেটি ওয়ালশ অগ্রাধিকারের তালিকায় কোন তিনটি বিষয় প্রেসিডেন্ট রেখেছেন তা কুশনারের কাছে জানতে চাইলে কোন উত্তর পাননি। যে প্রশ্নের উত্তর সাধারণত যেকোন যোগ্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও অনেক আগেই দিতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে তো নয়ই, এমনিক পরের ছয় সপ্তাহেও কুশনারের কাছে অগ্রাধিকারের প্রশ্নে কোন জবাব মেলেনি। তিনি কেবল বলেছিলেন, হ্যাঁ, বিষয়টি নিয়ে মনে হয় আমাদের আলোচনা করা দরকার। মারডকের প্রতি শ্রদ্ধা ॥ মিডিয়া মোঘল রুপার্ট মারডকের এক আত্মজীবনীতে, তার প্রতি ট্রাম্পের শ্রদ্ধার কথা লিখেছিলেন। নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর এমনই অনুরাগের বর্ণনা পাওয়া যায়। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এক অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল মারডকের। পথে দেরি হচ্ছিল মারডকের। অতিথিরা অনুষ্ঠান শেষে চলে যাওয়ার জন্য তোড়জোড় করছিলেন। ট্রাম্প অতিথিদের মারডকের সঙ্গে দেখা না করে যেতে নিষেধ করেন। মারডক পথে রয়েছেন বলে জানিয়ে ট্রাম্প তার সঙ্গে দেখা করে যাওয়া উচিত বলে জানান। ট্রাম্পকে নির্বোধ বলেন মারডক ॥ রুপার্ট মারডকের জন্য ট্রাম্পের যত ভক্তি শ্রদ্ধাই থাকুক না কেন তাকে নির্বোধ বলে মন্তব্য করেছিলেন মারডক। অভিবাসন নীতি নিয়ে ট্রাম্পের পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই মারডক তাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন। সিলিকন ভ্যালির নির্বাহীদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের একটি বৈঠকে মারডকের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপেই ঘটেছিল এ ঘটনা। ট্রাম্পের কাছে এইচ-ওয়ান ভিসার ব্যাপারে আরও উদার নীতি নেয়ার সুপারিশ করেছিলেন মারডক। পরনারী আসক্তি ॥ পরনারী বিশেষ করে বন্ধুদের বউদের সঙ্গে মেলামেশায় দুর্দান্ত আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প। বন্ধুদের বউদের সঙ্গে রাতযাপন জীবনটাকে আরও অর্থবহ করে তোলে এমন কথা বেশ গর্বের সঙ্গেই বলেন তিনি। বন্ধুপত্নীদের পটাতে ট্রাম্প যা করতেন সে সম্পর্কে তার এক বন্ধুর উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘তুমি যেমনটি ভাবছ তোমার স্বামী মনে হয় ঠিক সেরকম নয়’ এমন কথা বলেই বন্ধুপত্নীকে হাত করার চেষ্টা করতেন ট্রাম্প। এর আগে ১৯ নারীর সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন অসদাচরণের অভিযোগের পর এবার ওলফের বইতে তার সম্পর্কে বেরিয়ে এসেছে এ নতুন তথ্য। রাশিয়া সংযোগ কাল হয়ে দাঁড়াবে ॥ রাশিয়ার কাছ থেকে বক্তৃতার জন্য তহবিল নেয়া কাল হয়ে দাঁড়াবে বলে জানতেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন। ওলফ লিখেছেন নির্বাচনের আগেই ফ্লিনকে তার বন্ধুরা বলেছিল, কোন বক্তৃতার জন্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার ডলার নেয়া ভাল হবে না। ফ্লিন তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, কেবল নির্বাচনে জিতলেই এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
×