ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাহায্য বন্ধের হুমকি

ট্রাম্পকে পাত্তা দিল না ফিলিস্তিনীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৮

ট্রাম্পকে পাত্তা দিল না ফিলিস্তিনীরা

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে উড়িয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, ফিলিস্তিনের নেতারা ইসরাইলের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতে না চাইলে ফিলিস্তিন অঞ্চলে মার্কিন সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হবে। সিএনএন ও বিবিসি। ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে পিএলও মহাসচিব সায়েব ইরেকাত ট্রাম্পের ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত পুস্তুক, ‘ট্রাম্প : দ্য আর্ট অব দ্যা ডিল’র প্রসঙ্গ তুলে সিএনএনকে বলেন, ট্রাম্প, আপনার ‘আর্ট অব দ্য ডিল’-এ আলোচনার জন্য কি বলেছেন আপনি? আপনি আলোচনার টেবিল হতে সরে এসে এখন আমাদের আদেশ করছেন ও আবার আমাদের হুমকি দিচ্ছেন, আমরা যদি আপনার আদেশ না মানি, তাহলে আপনি আপনার সহযোগিতা বন্ধ করে দেবেন। মঙ্গলবার ট্রাম্প টুইট করেন, এক বছরে ফিলিস্তিনী জনগণকে আমরা শত শত কোটি ডলার দিয়েছি ও তার বিনিময়ে আমরা তাদের কাছ থেকে কোন কৃতজ্ঞতাবোধ ও সম্মান পাইনি। এমনকি তারা ইসরাইলের সঙ্গে কোন দীর্ঘমেয়াদী শান্তি আলোচনায়ও বসতে নারাজ। ডিসেম্বেরের শুরুর দিকে ট্রাম্পের জেরুজালমেকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার কারণে ফিলিস্তিন নেতারা মার্কিন প্রশাসন ও হোয়াইট হাউসের সঙ্গের চুক্তিটি স্থগিত করে দেন। সায়েব ইরেকাত বলেন, (২০১৭ সালের মে মাসে ফিলিস্তিন নেতা ও ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত) প্রথম বৈঠকে প্রাথমিক নীতিমালার বিষয়ে আলোচনার পর্বে ট্রাম্প আমাদের বলেন, আমরা কোন সমাধান দেব না। আমরা কেবল বিশ্বাসযোগ্যভাবে আলোচনা করব ও তারপর আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছব। এখন, তিনি (ট্রাম্প) আসলে কি করেছেন? এর আগে এক টুইটারে ট্রাম্প লেখেন, সাহায্যের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনীদের কাছ থেকে কোন ধরনের কৃতজ্ঞতা বা সম্মান পাচ্ছে না। অন্যদিকে ট্রাম্পের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিন সরকারের এক উর্ধতন কর্মকর্তা হানান আশরাভি বলেন, সাহায্য বন্ধের হুমকি দিয়ে ট্রাম্প আমাদের ব্ল্যাকমেল করতে পারবে না। দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতি পাল্টে ডিসেম্বরে এক বিতর্কিত ঘোষণায় জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার পর তেল আবিব থেকে তার দেশের দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ারও ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ফিলিস্তিন। অঞ্চলজুড়ে নতুন করে শুরু হয় সহিংসতা। শান্তি প্রক্রিয়ায় মার্কিনীদের আর নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে না বলেও জানায় তারা। নির্বাচনী প্রচারে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী করার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জাতিসংঘেও যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় একঘরে করে ফেলেন ট্রাম্প। নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র বাদে সবাই ট্রাম্পের নতুন স্বীকৃতির বিরোধিতা করে। সাহায্য বন্ধের হুমকির মধ্যেই সাধারণ পরিষদে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের ঘনিষ্ঠ মিত্রসহ ১২৮ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের বিপক্ষে ভোট দেয়। এরপরই জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থায় মার্কিন সাহায্য কমানোর ঘোষণা আসে। ট্রাম্প বলেন, যেখানে ফিলিস্তিনীরা শান্তিচুক্তি নিয়ে কথা বলতেই আগ্রহী নয় সেখানে কেন আমরা তাদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢালব? এর আগে জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি ফিলিস্তিনী শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় মার্কিন সাহায্য বন্ধ হতে পারে বলে জানান। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মসূচী চালানো জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থায় একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি অর্থ সাহায্য করে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৬ সালে সংস্থাটিকে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার দিয়েছিল তারা। সংবাদ সম্মেলনে হ্যালি বলেন, ফিলিস্তিনীরা আলোচনার টেবিলে আসতে রাজি না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নতুন করে আর সাহায্য না দেয়া কিংবা তা একেবারেই বন্ধের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তারা আলোচনায় বসতে রাজি নয় কিন্তু ঠিকই সাহায্য চাইছে। আমরা সাহায্য দেব না। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যেন তারা আলোচনার টেবিলে আসে।
×