ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আব্দুল্লাহ আল মাছুম

আরও দায়িত্বশীল হতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

আরও দায়িত্বশীল হতে হবে

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ২০১৭ সালের বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার প্রতিবেদনে সার্বিক পরিস্থিতিকে ‘চরম উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছে। তাদের হিসাবে, মানবাধিকারের প্রথম দুটি সূচকের মধ্যে একটি- অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোর ন্যায় ২০১৭ সালেও ইতিবাচক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত ছিল। অন্যদিকে মানবাধিকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক- নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ্য করা ছাড়া সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক। এ উদ্বেগের কারণ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম, গুপ্তহত্যা, নিখোঁজ, নারী উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি, নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যার ধরনে ভয়াবহতা এবং কিছু ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের তুলনায় মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাওয়া। এসবের মধ্যে ধর্ষণের মাত্রা বৃদ্ধি ও ধরনের নিষ্ঠুরতা আশঙ্কাজনক। ২০১৬ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৬৫৯ জন, যা ২০১৭ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮১৮ জন। এ বছর ধর্ষণের হাত থেকে শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী কেউ রেহাই পায়নি। বরং বাংলাদেশে নতুন যুক্ত হওয়া চলন্ত বাসে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ পৈশাচিকতাও ছিল সমান তালে। এ বছর ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা করা হয় ৪৭ জন নারীকে এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে ১১ জন নারী। এছাড়া ২০১৬ সালে ধর্ষণ ছাড়াও অন্যভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন ২৪৪ জন। আর ২০১৭ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫৫ জন। আসকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ, গুম ও গুপ্তহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ৬০ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময় লাশ উদ্ধার হয়েছে ২ জনের, গ্রেফতার দেখানো হয়েছে ৮ জনকে, পরিবারের কাছে ফেরত আসে ৭ জন, বাকি ৪৩ জন এখনও নিখোঁজ। নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পাননি সাংবাদিকরাও। শারীরিক নির্যাতন, হামলা, হুমকি ও হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২২ জন সাংবাদিক। নির্যাতনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। বছরের শেষ পর্যায়ে এসে রাজধানী ঢাকার নতুন আতঙ্ক হিসাবে আবির্র্ভূত হয় ছিনতাই। গৃহ নিরাপত্তা, গৃহে গৃহকর্মীর নিরাপত্তাও ছিল উদ্বেগজনক। কিন্তু বছরের শেষ পর্যায়ে এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নন বলে জানান সরকারী উচ্চপর্যায় মহল। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেন, ‘অবনতির কোন প্রশ্ন উঠে না। বরং সারাদেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিলে বলা হয় বাংলাদেশ ২০১৭ সালে অনেক ভাল ছিল। তবে দ্রুত উন্নয়নের যে ব্যথা-বেদনা থাকে সেগুলো বাংলাদেশেও হচ্ছে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই।’ সাধারণ মানুষ আশা করে সরকার চিন্তিত হবে। নাগরিক নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব সরকারের। গুম ও অন্যান্য নির্যাতন প্রশ্নে যেহেতু সরকারী সংস্থা ও ক্ষমতাশীন দলের নেতাকর্মীদের নাম জড়িত সেহেতু সরকারের উচিত মনোযোগের মাত্রা আরও বাড়ানো। গুমের নাটক হয়ে থাকলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করাও সরকারের ওপর বর্তায়। কারণ, নাগরিককে আশ্বস্ত করার দায়িত্বও সরকারের। অপরদিকে- ধর্ষণ, হত্যা, নারী নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, শিশু হত্যা, ছিনতাইসহ সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বাড়ার পেছনের কারণ গবেষণার মাধ্যমে উন্মোচন করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আমাদের গবেষকগণ মাঠ পর্যায়ে না গিয়ে ‘গোল টেবিল গবেষণা’ করে প্রতিবেদন দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারেও সরকারকে সচেতন হতে হবে। কীভাবে গবেষণা ফলপ্রসূ করা যায় তা ভাবতে হবে। নাগরিককে তার নিরাপত্তা প্রশ্নে আতঙ্ক মুক্ত করতে সরকারকে উদ্বিগ্ন এবং করণীয় ভাবতে হচ্ছে। দায় এড়ানোর মানসিকতা ছেড়ে ২০১৭ সালের বিভিন্ন সমীক্ষা আমলে নিয়ে ২০১৮ সালকে নিরাপদ করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা নেবে- এটাই প্রত্যাশা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখা মুক্তিকামী সাধারণ নাগরিকের। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার থেকে
×