ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্লাস্টিকের মাদুর

বাহারি রং ও নক্সা স্বল্প বিনিয়োগ দূর হচ্ছে বেকারত্ব

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২ জানুয়ারি ২০১৮

বাহারি রং ও নক্সা স্বল্প বিনিয়োগ দূর হচ্ছে বেকারত্ব

মোঃ হারেজুজ্জামান হারেজ বগুড়ার আদমদীঘির স্বাস্থ্যসম্মত মাদুর। এক সময় ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু এখন আর বেশি পাওয়া যায় না। কারণ সেই মাদুর তৈরির প্রধান উপকরণ পাতি চাষ বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। প্রাকৃতিক পাতি ও মাদুরের স্থান দখল করেছে ভারতীয় প্লাস্টিকের তৈরি কৃত্রিম পাতি ও মাদুর। দেখতে আকর্ষণীয় হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের তৈরি রং বে-রঙের চোখ ধাঁধানো পাতি (পাইপ) ও মাদুর তৈরির কারখানা স্থাপন ও বিক্রির ধুম পড়েছে। ফলে পাতি চাষ ও মাদুর উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে। এখনও যারা চাষ করা পাতির মাদুর তৈরিতে নিয়োজিত, তারা বাহারি নক্সা করতে না পারলেও পাতিতে রং করে মাদুর তৈরি ও বাজারজাত করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে সান্তাহারের হেলালিয়া এবং রাণীনগরের ত্রিমোহনী হাটের প্লাস্টিক ও প্রাকৃতিক পাতির তৈরি মাদুর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পাইপ তৈরি ও মাদুর বুননের স্বয়ংক্রিয় কারখানায় চাকরি করছেন অনেকেই। পাশাপাশি বহু বেকার নারী-পুরুষ নতুন প্রযুক্তির পাইপ দিয়ে বাড়িতে হাতে বুনন করছে নক্সা ছাড়া মাদুর। আয়ও করছে বেশ। সপ্তাহে দুই দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার কাকডাকা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত খুচরা ও পাইকারি বেচাকেনার ধুম পড়ে যায় হেলালিয়া হাটে। হাতে ও স্বয়ংক্রিয় মেশিনে তৈরি বাহারি কারুকার্যে ভরা মাদুরগুলো দামে কম হওয়ায় চাহিদা ব্যাপক। দুই/ তিন বছর আগে হেলালিয়া হাটের পূর্ব ও পশ্চিম ছাতনী, সান্তাহারে মাদার মোল্লা এবং রাণীনগরের ত্রিমোহনী এলাকায় প্লাস্টিকের পাতি (পাইপ) তৈরির কারখানা স্থাপন করা হয়। মাদুরের চাহিদা দিন দিন বেশি হওয়ায় সান্তাহার ইউনিয়নের সান্দিড়া, তারাপুর, কাজিপুর, ছাতনী, ঢেকড়া, প্রান্নাথপুর, পানলা, চকজান, দরিয়াপুর, সান্তাহার পৌরসভার মালশন, পাশের নওগাঁ সদরের শিমুলিয়া, ইলশাবাড়ি, চ-িপুরসহ বিভিন্ন এলাকা শত শত বেকার প্লাস্টিকের মাদুর তৈরি করতে থাকে। অল্প পুঁজি বিনিয়োগ ও অল্প পরিশ্রম করে তারা ভালই করছে। ৩/৪ হাত লম্বা প্রতিটি প্লাস্টিক মাদুর নক্সাভেদে পাইকারি ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা তৈরিতে খরচ পড়ে ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। এতে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত পাতির তৈরি মাদুর ব্যবসা হুমকির মুখে। এই শিল্পে জড়িত কাজিপুর গ্রামের বিপুল সরদার জানান, আমরা পারিবারিকভাবে অনেক আগে থেকেই মাদুর তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। প্রায় ২/৩ বছর ধরে আমি প্লাস্টিক মাদুর তৈরি করে বাজারজাত করি। জায়নামাজ মাপ তথা দুই বাই চার ফিট মাদুর বেশি তৈরি করি। ব্যবসায় আয়ও বেশ ভাল। রংপুরের কাউনিয়া এলাকা থেকে আসা প্লাস্টিক মাদুরের পাইকারি ক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, আমি প্রায় দুই বছর ধরে এই এলাকা থেকে প্লাস্টিকের মাদুর পাইকারি দরে কিনে খুলনায় বিক্রির জন্য নিয়ে যাই। ওই এলাকায় এই মাদুরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে আমার আয় ভালই হচ্ছে। সান্তাহার পৌর শহরের চাবাগান মহল্লার বাসিন্দা হাজী নুরুল ইসলাম শুকুর জানান, প্রায় দুই বছর আগে আমার গ্রামের বাড়ি শিমুলিয়ায় প্রায় তিন একর জায়গার একাংশে প্লাস্টিক পাইপ ও মাদুর তৈরির স্বয়ংক্রিয় কারখানা চালু করি। প্রথম দিকে চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে এই শিল্পের ব্যাপক চাহিদার কারণে আমার ব্যবসা ভাল হচ্ছে। এই শিল্পে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে প্রান্তিক জনপদে এই ব্যবসার আরও প্রসার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। ছাতনী গ্রামের বাসিন্দা প্রাকৃতিক পাতির মাদুর ব্যবসায়ী বুলা আহম্মেদ এবং এই মাদুর ক্রেতা সান্তাহার পৌরসভার মালশন গ্রামের আব্দুল মজিদ বললেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, বর্তমানে প্লাস্টিক মাদুরের চাহিদা আকাশচুম্বী হলেও অদূর ভবিষ্যতে তা আর থাকবে বলে মনে হয় না। কারণ হিসেবে তারা বলেন, প্রাকৃতিক পণ্যের চাহিদা কমবেশি চিরদিন। যারা এর কদর জানে তাদের বাহারি প্লাস্টিক মাদুর মাগ্না দিলেও নেবে না। সে জন্য আশা করি, আবারও সগৌরবে ফিরবে প্রাকৃতিক পাতির চাষাবাদ। হাসি ফুটবে কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে।
×