ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর!

উ. কোরিয়াকে জ্বালানি দিচ্ছে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

উ. কোরিয়াকে জ্বালানি দিচ্ছে রাশিয়া

পশ্চিমে ইউরোপীয় নিরাপত্তা সূত্র থেকে জানানো হয়েছে যে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রুশ তেলবাহী জাহাজ কমপক্ষে তিনবার গভীর সমুদ্রে গিয়ে উত্তর কোরিয়াকে তেল সরবরাহ করেছে। যার দরুণ নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক জীবন প্রবাহ সচল আছে। খবর ইয়াহু নিউজ ও ওয়েবসাইট। সূত্র সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রদানকারী দু’জন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রফতানিকারকদেশ ও ভেটো ক্ষমতার অধিকারী রাশিয়ার এই তেল বিক্রির দরুণ উত্তর কোরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। তথ্য প্রদানকারী একটি সূত্র পরিচয় গোপন করার শর্তে জানান যে, চলতি বছর কয়েকবার রাশিয়ার জাহাজগুলো থেকে উত্তর কোরীয় জাহাজগুলোতে সাগরের মাঝপথে পেট্রোকেমিক্যাল সরবরাহ করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়াতে জাহাজের মাধ্যমে তেল পাচারের সর্বশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করে খবরের দ্বিতীয় সূত্রটি জানায়, রুশ জাহাজের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে জ্বালানি বাণিজ্যের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তবে এর পেছনে সে দেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যোগাযোগ আছে কিনা তা নিশ্চিত বলা যায় না। গত সেপ্টেম্বরে রয়টার্স পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার জ্বালানি তৈলবাহী জাহাজগুলো রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর থেকে তেল নিয়ে সরাসরি দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেছে। এসব তেল ও জ্বালানি পাচারের বেশিরভাগ ঘটনা অক্টোবর ও নবেম্বরের মধ্যে ঘটেছিল। খবরের এই দুটি সূত্র তাদের বক্তব্যের সমর্থনে নৌ-গোয়েন্দা তথ্য এবং স্যাটেলাইট চিত্রের ধারণকৃত অংশের উদ্ধৃতি দেয়। তবে অতি গোপনীয় বলে এর অধিক তথ্য প্রদানে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য গত বুধবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেদেশের শুল্ক বিভাগের কাছে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত একটি জাহাজের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি এমন ধরনের কর্মকা- সম্পর্কে বেমালুম অস্বীকৃতি জানান। তবে কোন পক্ষের স্বীকার-অস্বীকার আমলে না নিয়ে তথ্য চিত্রে বেশ কিছু জাহাজ, বন্দর ও সংশ্লিষ্ট জাহাজ কোম্পানির নাম উঠে এসেছে। যারা জ্বালানি পাচার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। এগুলোর মধ্যে রাশিয়ার ভিটিয়াজ, চীনের লাইট হাউজ উইনমোর, উত্তর কোরিয়ার স্যাম জং-২ এবং স্যাম মা শিন শেং হাই, ইউ ইয়ান, গ্লোরি হোপ প্রভৃতি জাহাজের নাম উল্লেখ করা যায়। এসব জাহাজের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিলিয়ন বাঙ্কার গ্রুপ কর্পোরেশন আলিসা লিমিটেড, ইস্ট কোস্ট লিমিটেড প্রভৃতি সংস্থার নাম উঠে আসে। রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর ব্লাডিভোস্টকের কাছে শ্লাভিয়াঙ্কা থেকে ভিটিয়াজ জাহাজ গত ১৫ অক্টোবর ১৬০০ টন তেল পরিবহন করেছে বলে রাশিয়ার বন্দর নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের নথিতেও স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে। এর গন্তব্য হিসেবে সাগরে এক মাছ ধরা ট্রলার বহরের কথা উল্লেখ আছে। তবে প্রকৃত পক্ষে এটি তার সমস্ত জ্বালানি তেল উত্তর কোরীয় জাহাজ স্যাম মা-২ এর কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনার সময় দেখা গেছে। কেউ যাতে তাদের সঠিক অবস্থান জানতে না পারে সে জন্য জাহাজগুলো তাদর ওয়ারলেস স্টেটগুলো বন্ধ করে রাখে। দক্ষিণ কোরিয়া গত শুক্রবার অভিযোগ করেছে, তারা লাইট হাউস উইনমোর নামে হংকং-এর পতাকাবাহী একটি জাহাজ নবেম্বরের শেষ দিকে আটক ও তল্লাশি চালিয়ে ছেড়ে দেয়। কারণ হিসেবে তারা জানায়, জাহাজটি ছয়শ’ টন জ্বালানি উত্তর কোরীয় জাহাজ স্যাম জং-২ কাছে বিক্রি করেছে। চীনা পতাকাবাহী জাহাজের এ ধরনের তৎপরতার কথা জানতে পেরে ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, তিনি চীনের এসব কর্মকা-ে হতাশা হয়েছেন আসলে চীন (চালাকি করতে গিয়ে) হাতে নাতে ধরা পড়েছে। এ ঘটনার দু’দিনের মধ্যে যখন প্রকাশ হয়ে পড়ল যে, শুধু চীন নয় উত্তর কোরিয়াতে জ্বালানি তেল সরবরাহে রাশিয়ার ভূমিকাও অনেক বেশি তখন ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন রাজনীতি বিশ্লেষকগণ।
×