ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাক্ষাতকারে এক সময়ের সমর্থক আইরিশ রক তারকা বোনো

সুচির সরে দাঁড়ানো উচিত

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

সুচির সরে দাঁড়ানো উচিত

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনাায় নীরব থাকায় দেশটির নেত্রী আউং সান সুচির পদত্যাগ চেয়েছেন তার এক সময়কার সমর্থক ও শিল্পী বোনো। তিনি বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর কি ঘটেছে সে বিষয়ে অন্তত পক্ষে সুচির মুখ খোলা উচিত ছিল। যদি মানুষ তার কথা না শুনতো তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারতেন। এএফপি। বোনো আইরিশ রক ব্যান্ড ইউটুয়ের একজন প্রথম শ্রেণীর শিল্পী। মিয়ানমারে সামরিক জান্তার শাসনামলে সুচি গৃহবন্দী থাকাকালে তিনি তার মুক্তির জন্য গান গেয়েছিলেন। ‘ওয়াক অন’ শীর্ষক ওই গানটিতে তিনি তৎকালীন মিয়ানমারের বিরোধী নেত্রীর মুক্তির জন্য মাস্ক পরার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। রোলিং স্টোন সাময়িকীর সর্বশেষ সংখ্যায় দেয়া সাক্ষাতকারে বেনো বলেন, ‘(রাখাইনে বর্তমানে যা ঘটছে) তাতে আমি সত্যিই পীড়িত বোধ করছি। তথ্য প্রমাণ যে দিকে ইঙ্গিত করছে তা বিশ্বাস করতেও আমার কষ্ট হচ্ছে। সব ঘটনা বলছে যে সেখানে জাতিগত নির্মূল অভিযান চলেছে। এটি আসলেই ঘটেছে, তার (সুচি) উচিত সরে দাঁড়ানো। কারণ সেখানে কি ঘটেছে সেটি তিনি জানেন।’ জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে জাতিগত নির্মূল অভিযান চলেছে বলে মন্তব্য করেছে। জাতিসংঘের হিসেবে ৬ লাখের ওপর রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন শুরুর এক মাসের মধ্যে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। নিহতদের মধ্যে ৫ বছরের কমবয়সী শিশু ছিল প্রায় ৮শ’, ডক্টর্স স্যঁ ফ্রন্টিয়ার্স নামে একটি সাহায্য সংস্থার করা অতি সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। শিশুদের মধ্যে অন্তত ৬০ ভাগকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। রাখাইনের রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে, পিটিয়ে, ধর্ষণ-নিপীড়ন করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে সংস্থাটি জানায়। শত শত গ্রাম পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। সেখানে ব্যাপক হত্যা আর গণধর্ষণের বর্ণনা দিয়েছেন পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, বার্মার (মিয়ানমার) রাখাইন রাজ্যে গত দুইমাসে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অক্টোবর ও নবেম্বরে মাসে ৪০টি গ্রামসহ বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে বলে সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে। দেশটিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সুচি। ১৯৯১ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পান। গত দুই দশকের বেশিরভাগ সময় কেটেছে গৃহে অন্তরীণ অবস্থায়। এ সময়ে তিনি দেশের বাইরে যথেষ্ট সহানুভূতি অর্জন করেন। দেশটি গতবছর গণতন্ত্রের পথে আংশিক যাত্রা শুরুর পর তিনি কার্যত সরকার প্রধান হন। দেশে ও বিদেশের গণতন্ত্রকামী মহলের সমর্থন তার প্রতি ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে অস্বাভাবিক নীরবতা অবলম্বন করার তিনি আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলোর সমর্থন হারিয়েছেন। কোন কোন বিশ্লেষক বলছেন, সুচি ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তবে রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রয়োজনে ঝুঁকি গ্রহণের কাজটি তিনি করছেন না। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে তিনি সংখ্যালঘু মুসলিমদের পক্ষ নেয়ার ঝুঁকি তিনি নিতে চাননি অথবা সেনাবাহিনীর ওপর তার কোন প্রভাব নেই। বোনো বলেন, ‘সুচির হয়ত বলার মতো কোন কারণ আছে। সেনাবহিনী পুনরায় দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিক সেটি হয়ত তিনি চাননি। কিন্তু তিনি না চাইলেও বাস্তবে সেরকমই ঘটে গেছে।’ রোহিঙ্গা ইস্যুতে নীরব সুচিকে এ পর্যন্ত দেয়া সম্মাননাগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এদিকে দেশটিতে আসা দুজন বিদেশী সাংবাদিক আটক হওয়ার দু’মাস পর মুক্তি পেয়েছেন। তারা রাজধানীতে পার্লামেন্ট ভবনের কাছে ড্রোন উড়িয়ে ছিলেন। তাদের একজন সিঙ্গাপুরের লাউ হোন মেং এবং অপরজন মালয়েশিয়ার মোক চয়ে হিন। তারা দু’জনই তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত গণমাধ্যম টিআরটির জন্য কাজ করতে মিয়ানমারে গিয়েছিলেন।
×