ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার মারিয়াদের নিয়ে যুব বিশ্বকাপে চোখ সালাউদ্দিনের

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

এবার মারিয়াদের নিয়ে যুব বিশ্বকাপে চোখ সালাউদ্দিনের

রুমেল খান ॥ সাফল্য আসলে ভুলিয়ে দেয় অনেক ভুলত্রুটি এবং নানা অসঙ্গতিও। এই যেমন সোমবারের কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কনফারেন্স রুমে বেলা ১২টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতা বাংলাদেশ দলকে আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন জানানোর সভা। কিন্তু সেটা শুরু হতে হতে প্রায় দেড়টা। এই দেরি করাটা আসলে বাফুফের বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আগে এমনটা হলে বাফুফেকে ধুয়ে দিতেন সাংবাদিকরা। অথচ সোমবার উপস্থিত সাংবাদিকরা এতে বিন্দুমাত্র বিরক্ত হননি। কারণ মেয়েরা যে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এনে দিয়েছে! কাজেই বাফুফের সব পাপ ধুয়ে মুছে সাফ! যাহোক দেরিতে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠিানে উপস্থিত ছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন, বাফুফে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, বাংলাদেশ অ-১৫ নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন, অধিনায়ক মারিয়া মান্দাসহ অন্যান্য কোচিং স্টাফ এবং অন্য ফুটবলাররা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানানো হয়, সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার সকাল থেকেই মেয়েরা ১৫ দিনের ছুটিতে যে যার গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে। আবারও ক্যাম্প শুরু হবে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে। সালাউদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে মেয়েদের ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ মহিলা ফুটবল কমিটি, টেকনিক্যাল কমিটি, কোচে’স স্টাফ, দর্শক এবং গণমাধ্যমকে। এই সাফ আসরে বাংলাদেশের মেয়েরা ৯০ মিনিটের ৪টি ম্যাচ খেলেছে। এই ৯০ মিনিটের ম্যাচগুলো খেলার জন্য ওরা গত দেড় বছর ধরে নিজেদের তিলে তিলে তৈরি করেছে। অনেক পরিশ্রম ও কষ্ট করেছে। কাজেই এই সাফল্যের জন্য আমাকে বা আমার কমিটিকে নয়, মেয়েদের কথা বেশি করে প্রচার করুন।’ সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘মেয়েদের এই সাফল্য হচ্ছে গত কয়েক বছরের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের ফসল। একটা পর্যায়ে তারা এসেছে। এখন তাদের যেতে হবে আরেকটি ধাপে। এজন্য তাদের জন্য আমরা একটি চার বছর মেয়াদী পরিকল্পনা করেছি। এর মূল্য লক্ষ্য হলো : ফিফা অ-২০ মহিলা বিশ^কাপের মূলপর্বে খেলা। ইতোমধ্যেই তারা ফিফা অ-১৬ মহিলা বিশ^কাপের বাছাইপর্ব খেলেছে। অংশ নিয়েছে এশিয়ার সেরা আট দল নিয়ে এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বে। এখন মেয়েরা যদি প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা-সহায়তা পায়, তাহলে আমার দৃঢ়বিশ^াসÑ তারা নিশ্চয়ই ফিফা অ-২০ বিশ^কাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। এজন্য চাই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা।’ ৪ বছরের আরও কিছু পরিকল্পনার কথা জানান সালাউদ্দিন, ‘প্রতিবছর মেয়েদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দল ১০-১৫টি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলবে দেশে বা বিদেশে (এটা নির্ভর করবে আর্থিক সামর্থ্যরে ওপর)। এ ব্যাপারে দলের টেকিনিক্যাল ও কোচে’স স্টাফের পরামর্শকে প্রাধান্য দেয়া হবে।’ এই লক্ষ্যে খুব শীঘ্রই মেয়েদের ক্যাম্প শুরু হবে ৫০ ফুটবলার (জুনিয়র-সিনিয়র মিলিয়ে) নিয়ে। এই ক্যাম্প পরিচালনা করতে বছরে ব্যয় হবে তিন কোটি টাকা। চার বছরে মোট ১২ কোটি টাকা। এই টাকাটা পাওয়া গেলে মেয়েদের আমরা মাসিক বেতনের আওতায় আনা হবে বলে জানান বাফুফে বস। তিনি এ প্রসঙ্গে আক্ষেপ নিয়ে জানান, ‘এটা পৃথিবীর অন্য কোন ফেডারেশন করে না। এটা ক্লাবগুলোর কাজ। কিন্তু বাংলাদেশের কোন ক্লাবই পেশাদার না এবং তারা কাজটি না করায় বাধ্য হয়ে কাজটি করতে হচ্ছে বাফুফেকেই!’ এছাড়া আমরা বন্ধ হয়ে যাওয়া মহিলা ক্লাব ফুটবল লীগ আগামী বছর থেকেই আবারও চালু করার ঘোষণা দেন সালাউািদ্দন, ‘ইতোমধেই এ নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। কয়েকটি ক্লাব আগ্রহ প্রকাশ করেছে খেলতে। আমরা কোন ক্লাবকে এ ব্যাপারে কোন চাপ দেব না। যারা চায়, তাদের নিয়েই লীগ হবে। সেটা সংখ্যায় কম হলেও।’ এখন বছরের শেষ, তাই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান তাদের হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে ফেলেছে। কাজেই তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের কাজটার জন্য বাফুফে বেছে নিয়েছে জানুয়ারি মাসটাকে। ‘এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমরা সরকারের কাছেও সহায়তা চাইব।’ ভাষ্য সালাউদ্দিনের। বিজয়ের মাসে ভারতকে হারিয়ে অমূল্য শিরোপা এনে দেয়া অদম্য কিশোরী ফুটবলারদের উদ্দেশে সালাউদ্দিন বলেন, ‘তোমাদের নৈপুণ্যে আমরা অনেক খুশি। কষ্ট করলে কেষ্ট মিলবে। ঘরোয়া লীগ শুরু হলে সেখানে তোমরা খেলতে পারবে। এতে করে তোমাদের আয়ও অনেক বেড়ে যাবে, যা দিয়ে পরিবারকে আরও বেশি করে সাহায্য করতে পারবে। লীগে ভাল খেললে ভাগ্য ভাল থাকলে হয়তো বিদেশের ক্লাবে খেলার প্রস্তাবও পেতে পার। এখন নয়, তোমরা ছুটি কাটিয়ে ফিরে এস ক্যাম্পে, তখন বাফুফের পক্ষ থেকে আমরা তোমাদের সংবর্ধনা এবং যথাসাধ্য আর্থিক পুরস্কার দেয়ার চেষ্টা করব।’ মজা করে সালাউদ্দিন আরও বলেন, ‘আর ছুটিতে যাচ্ছ ভাল কথা। বেশি করে ভাত-বিরিয়ানি খেয়ো না। ছুটিতে নিজেকে ফিট রেখ, ট্রেনিং করো।’ অধিনায়ক মারিয়া মান্দা মাইক নিয়ে জানায়, ‘সালাউদ্দিন স্যারকে ধন্যবাদ। আমরা চেষ্টা করেছি ভাল খেলে সাফে চ্যাম্পিয়ন হতে এবং ট্রফিটি সালাউদ্দিন স্যারকে উপহার দিতে। আজ আমরা সেটা স্যারকে দেব।’ এই বলে মারিয়া এবং সহ-অধিনায়ক আঁখি খাতুন সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফিটি তুলে দেয় বাফুফে সভাপতির হাতে। সেটি হাতে নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া, ‘তোমাদের ধন্যবাদ। তবে এই ট্রফিটি আমি উপহার দিতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।’
×