ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হোয়াইট হাউসে ইভাঙ্কা-ব্যানন দ্বন্দ্ব

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭

হোয়াইট হাউসে ইভাঙ্কা-ব্যানন দ্বন্দ্ব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ী হওয়ার পেছনে যে ক’জন মানুষ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তার অন্যতম ছিলেন স্টিফেন কেভিন ব্যানন। সবার কাছে তিনি স্টিভ ব্যানন নামেই পরিচিত। ট্রাম্পের নির্বাচনী কর্মকান্ড- পরিচালনার লক্ষ্যে তিনি ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজে যোগ দেন। ৬৪ বছর বয়স্ক বিপুল কর্মশক্তির অধিকারী স্টিভ ব্যানন এর আগে গণমাধ্যম কর্মকর্তা, রাজনৈতিক কর্মী এবং ব্যাংক নির্বাহী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ট্রাম্পের নির্বাচনী দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার আগ পর্যন্ত ব্যানন ব্রেইটবার্ট নিউজের নির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কট্টর ডানপন্থী ব্যানন তার দক্ষ প্রচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী ও মধ্য ডানপন্থী এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদ জাগিয়ে তোলেন বারাক ওবামার উদার অভিবাসী নীতির দরুণ। যেসব শ্বেতাঙ্গ নিজ দেশে সংখ্যালঘু হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত ছিল তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন স্টিভ ব্যানন। শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী ও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের ঐকান্তিক চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত হিলারিকে পরাজিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর পুরস্কার হিসেবে হোয়াইট হাউসে শীর্ষ পরিকল্পনাবিদের কোন পদ না থাকলেও ট্রাম্প এ ধরনের এক পদ তৈরি করে স্টিভ ব্যাননকে সে দফতরের দায়িত্ব দেন। কিন্তু প্রায় সাত মাস দায়িত্ব পালনের পর গত ১৮ আগস্ট ব্যানন তার পদে ইস্তফা দিয়ে পুনরায় তার সংবাদ মাধ্যম ব্রেইবার্ট নিউজে যোগদান করেন। পদত্যাগের সময় তিনি ট্রাম্প প্রশাসনকে সব ধরনের সহযোগিতার কথাও বলেন। বিগত এক বছরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় নানা বিতর্কিত পদক্ষেপ এবং নির্বাচনে রুশ সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত তদন্তের প্রেক্ষিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনসমর্থন ও গ্রহণযোগ্যতা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। স্বদেশে এফোরডেবল হেলথ কেয়ার (ওবামা কেয়ার) অভিবাসী নীতি, এফবিআই প্রধান জেমস কোমিকে বরখাস্ত করা থেকে শুরু করে উগ্র শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের প্রকাশ্যে পক্ষাবলম্বনসহ আরও অনেক বিতর্কিত পদক্ষেপের জন্য ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকানদের সঙ্গেই তার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ লাভ করেছে। সেই সঙ্গে তার বিদেশ নীতি কার্যত চরম ব্যর্থতায় রূপ নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে তার দুর্ব্যবহার, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বর্জন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অ-কূটনৈতিক ও শিষ্টাচারবর্জিত আচরণ এবং সর্বশেষ জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা ও তার ইহুদী স্বামী জারেড কুশনার দু’জনেই ট্রাম্পের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন। অনেক দফতরের নির্ধারিত মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ইভাঙ্কা ও জারেড কুশনার যে পরামর্শ দেন তাই ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় তাকে পাশ কাটিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে কাতারের ওপর সৌদি জোটের আরোপিত অবরোধ, চীন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া সম্পর্ক এবং সব শেষে জেরুজালেম ঘোষণা সবকিছুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনের উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায় না। পর্দার অন্তরালে ইভাঙ্কা ও জারেড দম্পতিকে ট্রাম্পের ওপর সীমাহীন প্রভাব বিস্তারের কথা শোনা যায়। এজন্য ক্ষুব্ধ হয়ে হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র স্টিভ ব্যাননের আগেই চাকরি ছেড়ে চলে যান। ইদানীং শোনা যাচ্ছে রেক্স টিলারসন চাকরি ছেড়ে দেবেন অথবা তাকে বরখাস্ত করা হতে পারে। মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে পর্দার অস্তরালে থেকে ইভাঙ্কা জারেড দম্পতির মার্কিন প্রশাসনে এই বিপুল প্রভাব বিস্তারের কথা হোয়াইট হাউসের মুখে মুখে ফিরছে। কথাগুলো বাইরে কীভাবে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে ইভাঙ্কা তার পিতার (ট্রাম্প) সামনেই তাকে আক্রমণ করে বলেন, আপনি একজন ডাহা ‘মিথ্যাবাদী।’ জবাবে ব্যানন তাকে বলেন, আপনি সকল তথ্য ফাঁসের ‘রানী।’ ব্যানন কুশনারকে অপরিণত বুদ্ধির অধিকারী বলে উল্লেখ করে বলেন, সে কিছুই জানে না, অথচ মাঝ খানে থেকে রাশিয়ার গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করে সবকিছু লেজেগোবরে অবস্থা করে দিল। ব্যানন ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনে তার দেয়া এই সাক্ষাতকারে ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা মাত্র ৩০ শতাংশ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া তাকে মেয়াদ পূরণের আগেই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অভিশংসন প্রক্রিয়া অথবা সংবিধানের ২৫ নম্বর সংশোধনী অনুযায়ী বিদায় নিতে হতে পারে বলে ব্যানন মন্তব্য করেন। দি টেলিগ্রাফ
×